শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সাংবাদিক মারিয়া রেসা’র জন্য সুখবর। আয়কর ফাঁকির মামলা থেকে তাকে বেকসুর খালাস দিয়েছে ফিলিপাইনের আদালত। তার বিরুদ্ধে সাবেক প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতের্তে সরকার বেশ কিছু অভিযোগে মামলা করে। সেই মামলায় তিনি লড়াই করছেন। মারিয়া ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট দুতের্তের অগ্নিঝরা সমালোচক। আজ মঙ্গলবার যখন তাকে করফাঁকির মামলা থেকে অব্যাহতির রায় ঘোষণা করেন বিচারক, তখন তার মুখে একরাশ হাসি খেলে যায়। হাসিমুখেই তিনি বললেন, যেকোনো কিছুতেই আত্মবিশ্বাস থাকতে হয়।
তার এ বিজয় সংবাদ বিশ্বের সব মিডিয়ায় শিরোনাম হয়েছে। ২০১২ সালে তিনি র্যাপলার নামে একটি ওয়েব আউটলেট প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানেই তিনি সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। এ জন্য তিনি এবং তার র্যাপলারের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয় দুতের্তে সরকার।তবে মারিয়া রেসা বার বার দাবি করতে থাকেন, এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
২০১৫ সালে মারিয়া রেসা ও র্যাপলারের বিরুদ্ধে আয়কর ফাঁকির ৫টি অভিযোগ আনে দুতের্তে সরকার। ২০১৫ সালে ফিলিপাইনের ‘ডিপোজিটরি রিসিপ্ট’ বিক্রিতে তিনি কর ফাঁকি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়। এই বিক্রির মাধ্যমে কোম্পানিগুলো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে।
এর আগে গত জানুয়ারিতে মারিয়া রেসা ও তার র্যাপলারকে চারটি অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয় আদালত। পঞ্চম অভিযোগটি বিভিন্ন কোর্টে শুনানি চলছিল। শেষ পর্যন্ত তাও মঙ্গলবার আদালত খারিজ করে দিয়েছে। বলেছে, মারিয়া রেসা এবং র্যাপলার কোনো অন্যায় করেননি। তবে রেসা এবং র্যাপলারকে আরও দুটি মামলার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
রেসা ও তার সাবেক সহকর্মী রে স্যান্তোস জুনিয়রের বিরুদ্ধে আছে সাইবার অপরাধের অভিযোগ। এতে তারা অভিযুক্ত হলে প্রায় সাত বছরের জেল হতে পারে। এরই মধ্যে বিদেশি মালিকানাধীন মিডিয়ায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ফিলিপাইন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশমনের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে র্যাপলার। দেশের সংবিধানের অধীনে ফিলিপাইনে মিডিয়াতে বিনিয়োগ করার অধিকার সংরক্ষিত আছে ফিলিপাইনের নাগরিকদের এবং তার পুরোটা নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে তাদের হাতেই। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওমিদিয়ার নেটওয়ার্কের বিনিয়োগ নিয়ে এই মামলা। পরে তারা এই বিনিয়োগ হস্তান্তর করে র্যাপলারের স্থানীয় ম্যানেজারদের কাছে, যাতে প্রেসিডেন্ট দুতের্তে তা বন্ধ করতে না পারেন।
ওদিকে মঙ্গলবারের রায়ে বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছেন রেসা। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, এই দায়মুক্তি তাদেরকে আরো শক্তিশালী করেছে। রেসা বলেন, এতে প্রমাণ হয় যে আদালত কাজ করছে। আমরা আশা করি বাকি অভিযোগগুলোও প্রত্যাখ্যান করা হবে।
২০২১ সালে রাশিয়ান সাংবাদিক দমিত্রি মুরাটোভের সঙ্গে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হন রেসা। স্বাধীন মতপ্রকাশের প্রহরী হিসেবে তাদের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরস্কার দেয়া হয়। মারিয়া রেসা একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকও।
তিনি অবস্থান করছেন ফিলিপাইনে। তাকে দুতের্তে সরকার গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়েছিল। র্যাপলার বন্ধ করে দিয়েছিল।
ওদিকে ২০২২ সালে প্রেসিডেন্ট দুতের্তের ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হয়। তিনি আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেননি। মারিয়া রেসার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এসেছে তাতে তার সরকারের কিছু করার নেই বলে দাবি করেছিলেন তিনি।
ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ফিলিপাইনের অবস্থান ১৩২তম। দেশটিতে আছে খুব সমালোচক সাংবাদিক। তাদের বিরুদ্ধে সরকার টার্গেট করে। ক্রমাগত হয়রানি করে। তা সত্ত্বেও সেখানকার সাংবাদিকরা সমালোচনাকারী।
Leave a Reply