শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই শেষে ২ রানে জয় পেয়ে শেষ দল হিসেবে সুপার ফোরে পা রাখল শ্রীলঙ্কা। এতেই শানাকা-ধনঞ্জয়াদের চেহারায় হাফ ছেড়ে বাঁচার আনন্দ, মুখে তৃপ্তির হাসি; অন্যদিকে হতাশায় মুষড়ে পড়েছে আফগানরা। স্বপ্নভঙ্গের বেদনার বিষে নীল রশিদ-নাবিরা। এত কাছে গিয়েও যে তাদের ফিরতে হলো মলিন বদনে৷ ক্রিকেটকে চির অনিশ্চয়তার খেলা বলা হয় এই জন্যেই!
শেষ ৭ বলে যখন জয়ে জন্য প্রয়োজন ১৫ রান, ১২ উঠে আসলো ৬ বল থেকে। ৩৮তম ওভারের প্রথম বলে শুধু প্রয়োজন ছিল ১ রান। তবে এই সমীকরণটা মেলাতে পারলেন না মুজিবুর রহমান, ক্যাচ উঠিয়ে দিলেন তিনি। সেই সাথে দলকেও যেন উঠিয়ে দিলেন দেশের বিমানে। সুপার ফোরের আর পা রাখা হলো না তাদের।
বাঁচা-মরার লড়াইয়ে মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) লাহোরে মাঠে নেমেছিল আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। দুই দলের সামনেই ছিল সুপার ফোরে উঠার সম্ভাবনা। যেখানে আগে ব্যাট করে ২৯১ রান করে শ্রীলঙ্কা। সুপার ফোর নিশ্চিত করতে হলে আফগানিস্তানকে এই রান পাড়ি দিতে হতো ৩৭.১ ওভারে। তবে শেষ বলে তিন রানের সমীকরণ মেলাতে না পেরে তা আর হলো না।
সুপার ফোর হাতছাড়া হবার পর জয়ও হাতছাড়া করেছে আফগানিস্তান। ৩ রান তুলতে গিয়ে শেষ ২ উইকেট হারিয়ে হেরে গেছে ২ রানে। বিপরীতে ২ রানের জয় নিয়ে শেষ দল হিসেবে সুপার ফোর নিশ্চিত করল শ্রীলঙ্কা।
যেকোনো থ্রিলার মুভিকেও যেন হার মানাবে ম্যাচের শেষ অংশটা। মুহূর্তে মুহূর্তে যেন দমবন্ধ উত্তেজনা। ষোলআনা শিহরণ ছড়ানো ম্যাচে কখন কি হচ্ছে যেন বুঝাই যাচ্ছিল না৷ যার শুরুটা হয়েছিল শ্রীলঙ্কার ইনিংস থেকেই। আগে ব্যাট করতে নেমে বার-বার রূপ পরিবর্তন হয়েছে তাদের। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে ২৯১ রানে থামে তাদের ইনিংস।
অথচ লঙ্কানদের সংগ্রহ তিনশো পেরিয়ে যাবার কথা অনায়াসেই। লাহোরে টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে যেভাবে শুরু করেছিল ইনিংস, তাতে এমনটা সময়েরই ব্যাপার ছিল মাত্র। তবে সব হিসাব বদলে যায় ৩৮ ওভারের পর। ৪ উইকেটে ২২১ রান থেকে মুহূর্তেই পরিণত হয় ৩৯.৩ ওভারে ২২৭/৭।
উদ্বোধনী জুটিতেই ৬৩ রান যোগ করে শ্রীলঙ্কা। ভালো শুরু করেন পাথুম নিশানকা ও দিমুথ করুনারত্নে। তবে পরের ২৩ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে তারা। তিনটি উইকেটই তুলে নেন গুলবাদিন নাইব। নিশানকা ৪০ বলে ৪১, করুনারত্নে ৩৫ বলে ৩২, আর সামারাবিক্রমা ফেরেন ৩ রান করে।
৮৬ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর দলকে টেনে তুলেন কুশল মেন্ডিস ও চারিথ আসালাঙ্কা। দু’জনে মিলে গড়েন শতাধিক রানের জুটি। তাদের ১০২ রানের জুটি ভাঙেন রশিদ খান। আসালাঙ্কা আউট হন ৪৩ বলে ৩৬ রান। এরপর ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে নিয়ে ৩১ বলে ৩২ রান যোগ করেন কুশল মেন্ডিস।
এরপরই বিপর্যয় নেমে আসে, টানা দুই ওভারে তিন উইকেট তুলে নেন রশিদ ও মুজিব। ৩৯তম ওভারে ধনঞ্জয়াকে (১৪) ফেরান মুজিব, পরের ওভারে রশিদ ফেরান শানাকাকে (৫)। তবে লঙ্কানরা বড় ধাক্কা খায় মাঝে কুশলকে হারিয়ে। ৮৪ বলে ৯২ করে রান আউট হয়ে ফেরেন তিনি।
এরপর অবশ্য দুনিথ ভিল্লালাগে ও থিকসানা মিলে চেষ্টা করেছেন, তবে তিনশোর ঘর স্পর্শ করতে পারেনি ইনিংস। দুনিথ ৩৯ বলে ৩৩ ও থিকসানা শেষ বলে আউট হবার আগে করেন ২৪ বলে ২৮ রান। গুলবাদিন নাইব ৬০ রানে নেন ৪ উইকেট, ৬৩ রান দিয়ে জোড়া উইকেট নেন রশিদ খান।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে সময়ের সাথে সাথে শ্রীলঙ্কার পিলে চমকে দিচ্ছিল আফগানিস্তান। সুপার ফোর নিশ্চিত করতে বেশ ভালোভাবেই এগোচ্ছিল সমীকরণ মেলানোর দৌড়ে। শেষটা ঠিকঠাক মতো হলে হয়তো বিদায় ঘণ্টা বেজে যেতো এশিয়ার বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের!
শুরুটা ভালো না হলেও আফগানদের চেষ্টা ছিল প্রথম বল থেকেই। সবাই খেলেছেন আগ্রাসী মেজাজে। বরাবর ধৈর্য নিয়ে খেলা রহমত শাহও খেলেন একশোর বেশি স্ট্রাইকরেটে। করেন ৪০ বলে ৪৫ রান। ১৬ বলে ২২ রান করেন গুলবাদিন নাইব। তবে দুই ওপেনার গুরবাজ ৪ আর ইবরাহিম জাদরান ফেরেন ৭ রান করে।
৫০ রানে ৩ উইকেট হারানো দলটাকে শাহিদির সাথে মিলে ১২১ রানে পৌঁছে দিয়ে যান রহমত। সেখান থেকে দলকে ঝড়ের বেগে লক্ষ্যপানে নিয়ে যেতে থাকেন মোহাম্মদ নাবি। শাহিদিকে দর্শক বানিয়ে ৩২ বলে ৬৫ রানের এক বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন তিনি। যার ওপর ভর করেই আফগানরা সুপার ফোরের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।
২৬.৩ ওভারে দলীয় ২০১ রানে থিকসানার শিকার হয়ে ফেরেন নাবি। শাহিদিও তুলে নেন ফিফটি, করেন ৬৬ বলে ৫৯ রান। মাঝে করিম জানাত করেন ১৩ বলে ২২ রান। তবে একই ওভারে দু’জনকে ফেরান দুনিথ। তাতে ফের আশা ফিরে পায় শ্রীলঙ্কা। তবে এবার কাঁটা হয়ে দাঁড়ান রশিদ খান ও নাজিবুল্লাহ জাদরান।
দু’জনে মিলে ২৫ বলে ৩৯ রান যোগ করেন স্কোরবোর্ডে। ১৫ বলে ২৩ করে ৩৫.৪ ওভারের মাথায় দলীয় ২৭৬ রানে ফেরেন নাজিবুল্লাহ৷ এরপর একাই দলকে টেনে নেন রশিদ খান। রাজিথার করা ৩৭তম ওভারে ১২ তুলে জয়ের কাছেই নিয়ে যান তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত ভাগ্য আর সহায় হয়নি।
Leave a Reply