আসরে টিকে থাকতে হলে জিততেই হবে, হারলেই শেষ এশিয়া কাপ মিশন, ধরতে হবে বাড়ির পথ। এমন সমীকরণ সামনে রেখে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। সর্বশেষ যাদের কাছে দেশের মাটিতেই সিরিজ হেরেছিল, তাদের বিপক্ষে এমন চাপের ম্যাচে দাঁড়াতে পারবে তো বাংলাদেশ? ম্যাচ শুরুর আগে এমনই প্রশ্ন ছিল সবার মনে।
তবে সব শঙ্কা কেটে গেছে, দূর হয়েছে সংশয়। এখনি বাড়ি ফিরতে হচ্ছে না, বেঁচে রইল শিরোপা জয়ের আশাও। সমীকরণের সব মারপ্যাঁচ দূর করে দ্বিতীয় দল হিসেবে সুপার ফোরে পা রেখেছে বাংলাদেশ। ডু অর ডাই ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারিয়েছে ৮৯ রানে।
১৬ বছর পর রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) পাকিস্তানের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে খেলতে নামে বাংলাদেশ। তবুও এমন এক ম্যাচ, যেখানে জিততেই হতো টাইগারদের।
এমন বাঁচা-মরা ম্যাচে আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ৩৩৪ রান তুলে স্কোরবোর্ডে। যা নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসেরই তৃতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তান থামে ২৪৫ রানে।
এই ম্যাচে সেঞ্চরি হাঁকান মেহেদী মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্ত। বদৌলতে পঞ্চমবার একই ইনিংসে জোড়া সেঞ্চুরি দেখল দেশের ক্রিকেট। দু’জনে মিলে গড়েন নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের চতুর্থ সর্বোচ্চ ২১৫ রানের জুটি। তবে তৃতীয় উইকেট জুটিতে যা সর্বোচ্চ। তাদের এমন রেকর্ড গড়া ব্যাটিংয়েই এমন রান পাহাড় গড়ে বাংলাদেশ।
অবশ্য প্রথম ওভারেই ফজলে হক ফারুকির থেকে ১৪ রান নিয়ে দিনের শুরুতেই ভিন্ন কিছুর বার্তা দেয় বাংলাদেশ, জানান দেয় নিজেদের আত্মবিশ্বাস। পাওয়ার প্লেতে ৬০ রান তুলে তা আরো মজবুত করে তুলে নাইম শেখ ও মেহেদী মিরাজের উদ্বোধনী জুটি।
গত ছয় ম্যাচে পঞ্চমবারের মতো পরিবর্তন হয় টাইগারদের উদ্বোধনী মুখ। ২০১৮ এশিয়া কাপের পর প্রথমবার ব্যাট হাতে ইনিংস উদ্বোধন করতে আসেন মেহেদী মিরাজ। প্রমোশন পেয়ে ভরসা রাখেন তিনি, তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক।
নাইম শেখের সাথে বেশ ভালোই জমে উঠেছিল তার উদ্বোধনী জুটি। পাওয়ার প্লের শেষ বলে নাইম ফেরার আগে ৬০ রান যোগ করেন দু’জনে। ক্যারিয়ার সেরা ৩২ বলে ২৮ রান করেন নাইম। এরপর অবশ্য দ্রুত ফেরেন তাওহীদ হৃদয়। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথমবার ডাক মেরে ফিরেন এই ব্যাটার।
৬৩ রানে ২ উইকেট হারানোর পর নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে ইনিংসের হাল ধরেন মিরাজ। তাদের এই জুটি আর ভাঙতে পারেননি আফগান বোলাররা। যদিও মিরাজ ৪২.১ ওভারে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফিরলে থামে এই জুটি। তবে ততক্ষণে ২০৫ বলে ২১৫ রান যোগ হয়েছে স্কোরবোর্ডে। মিরাজ হাতে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন ১১৯ বলে ১১২ করে।
মিরাজ উঠে যাওয়ার পর পরই শতক তুলে নেন শান্ত। লঙ্কানদের বিপক্ষে ৮৯ রান করে আউট হলেও এদিন রশিদ খান-মুজিবুর রহমানদের হতাশ করে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক তুলে নেন তিনি। যদিও তার ইনিংসটা এরপর আর বড় হয়নি, রান আউট হয়ে ফেরেন ১০৫ বলে ১০৪ রানে। দলীয় সংগ্রহ তখন ৪৪.৩ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ২৭৮।
এরপর বাকি কাজটা করেন সাকিব-মুশফিক, ব্যাট হাতে ঝড় তুলেন এই দুই ব্যাটার। যদিও ১৫ বলে ২৫ করে রান আউট হয়ে ফেরেন মুশফিক। রান আউট হন অভিষিক্ত শামিম পাটোয়ারীও, ৬ বলে ১১ রান করেন তিনি। ১৮ বলে ৩২ রানে অপরাজিত ছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় আফগানিস্তান। দ্বিতীয় ওভারেই মাত্র এক রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। রাহমানুল্লাহ গুরবাজকে ফিরিয়েছেন শরিফুল ইসলাম। ব্যক্তিগত ১ রানে এলবিডব্লিউ ফাঁদে ফেলেন তাকে।
তবে দ্বিতীয় উইকেটের দেখা পেতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয় ৭৯ রান পর্যন্ত। রহমত শাহ আর ইবরাহিম জাদরান মিলে ৭৮ রানের জুটি গড়ে তুলেন ৯৯ বলে। যা ম্যাচে রাখে আফগানিস্তাকে। ১৮তম ওভারে এসে ওই জুটি ভাঙেন তাসকিন। ৫৭ বলে ৩৩ রান করা রহমত শাহকে ফেরান তিনি।
তবে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন ইবরাহিম জাদরান। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান করতে থাকেন তিনি। ২৮তম ওভারে এসে ফিরিয়ে দলে স্বস্তি আনেন হাসান মাহমুদ। যদিও হাসান নয়, এই উইকেটের কৃতীত্ব লিখে দেয়া যায় মুশফিকের নামে। উইকেটের পেছন থেকে দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন তিনি। আউট হওয়ার আগে ৭৪ বলে ৭৫ রান করেছেন ইবরাহিম।
শুরুতে ধীরে খেললেও সময়ের সাথে সাথে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেন আফগান অধিনায়ক হাশমতুল্লাহ শাহিদি। তুলে নেন ফিফটি। তবে এরপর আর ইনিংস টানতে পারেননি, শরিফুলের শিকার হয়ে ফিরেছেন তিনি। ৬০ বলে ৫১ রান করেন শাহিদি। এর আগের ওভারে (৩৭তম) মিরাজ ফেরান নাজিবুল্লাহ জাদরানকে। ২৫ বলে ১৭ রান আসে তার ব্যাটে।
এরপর টানা তিন ওভারে ৩ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। নাবি ৩, গুলবাদিন নাইব ১৫ ও করিম জানাত ফেরেন ১ রান করে। ৪৫ তম ওভারে তিন বলের মাঝে শেষ ২ উইকেট তুলে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন তাসকিন। রশিদ খানের ব্যাটে আসে ১৫ বলে ২৪ রান।
৮.৩ ওভারে ৪৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন তাসকিন। ৯ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট গেছে শরিফুলের ঝুলিতে। একটি করে উইকেট নেন হাসান মাহমুদ ও মেহেদী মিরাজ।
Leave a Reply