নিত্যপণ্যের অস্থির বাজারে ক্রেতাদের দিশেহারা করেছে আরেক অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পেঁয়াজ। সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ টাকা বেড়ে এক শ’ ছুঁয়েছে এই পণ্যটি। এ ছাড়া কোনো পণ্যেরই দাম কমার তথ্য নেই। সব কিছুই বাড়তি দামে বিক্রে হচ্ছে। এতে বাজারে গিয়ে ক্রেতাদের হাঁসফাঁস লেগে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় বাজারের তালিকা ছোট করে বাজার থেকে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাদের। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
খিলগাঁও বাজারে গিয়ে দেখা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বাড়তি। বেশির ভাগ সবজিই ৬০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। চালের দামও প্রতি কেজি ২-৩ টাকা বেড়েছে। বাজারে কম দামের কোনো মাছই পাওয়া যাচ্ছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর দাম কোনোভাবেই নাগালের ভেতরে আনা যাচ্ছে না। বাড়তি দামের কারণে অসহায় হয়ে পড়েছেন স্বল্প আয়ের ক্রেতারা।
সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চাল ২ থেকে ৩ টাকা, মসুর ডাল কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা এবং আলু প্রতি কেজি ৫ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। গুটি স্বর্ণা জাতের মোটা চাল বেশির ভাগ দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না। পাইজাম ও বিআর-২৮ চাল এখন মানভেদে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে; যা গত সপ্তাহে ৫২ থেকে ৫৮ টাকার মধ্যে ছিল। সরু চালের দাম বাড়েনি। এখন মিনিকেট ৬৮ থেকে ৭০ টাকা ও নাজিরশাইল চাল ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে; যা গত সপ্তাহেও এক-ই ছিল।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ কমায় পাইকারিতেই চালের দাম বেড়েছে। উত্তরাঞ্চলের মোকামগুলো থেকে বেশি দামে চাল কিনে আনছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তিন দিন আগে বিআর-২৮ চাল কিনেছেন প্রতি কেজি ৫২ টাকা দরে। এখন ৫৫ টাকা। স্বর্ণা চালের সরবরাহ না থাকায় প্রভাব পড়েছে অন্যান্য মোটা চালের দামে। বেড়েছে পাইজামের দামও।
খুচরা বাজারে সব ধরনের মসুর ডালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহেও প্রতি কেজি মোটা মসুর ডাল ৯০ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সেই ডালের কেজি এখন ৯৫ থেকে ১০৫ টাকা। মাঝারি দানার মসুর ডালের কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় উঠেছে। আর ভালো মানের, অর্থাৎ সরু দানার মসুর ডালের কেজি পড়ছে এখন ১৩৫ থেকে ১৪৫ টাকা। গত সপ্তাহে এই ডালের খুচরা দাম ছিল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি।
মুদি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৃষ্টির কারণে চাহিদা বাড়ার চেয়ে সরবরাহ কম থাকায় মসুর ডাল ধরনভেদে দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। সেই পেঁয়াজ সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে পটোল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ১০০ টাকা, গোল বেগুন প্রতি কেজি ৮০ টাকা আর লম্বা বেগুন প্রতি কেজি ৬০ টাকা, আলু প্রতি কেজি ৪৫ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৭০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ১০০ টাকা, কাঁচকলা প্রতি হালি ৪০ টাকা, ঝিঙে প্রতি কেজি ৬০ টাকা, জালি প্রতি পিস ৬০ টাকা, কচুর লতি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ২০০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ২২০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৪ টাকায়। খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা চিনি প্রতি কেজি ১৩০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি কেজি প্রতি ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে ব্রয়লার মুরগির প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি লেয়ার মুরগি প্রতি কেজি ৩৮০ টাকা, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা আর দেশী মুরগি প্রতি কেজি ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্য দিকে বাজারে গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায় আর খাসির গোশত প্রতি কেজি ১০০০ থেকে ১,১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া বাজারে বিভিন্ন শাকের দামও বেড়ে গেছে। প্রতি আঁটি লাল, মুলা, কলমি শাক ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্য দিকে পুঁইশাক, মিষ্টিকুমড়া, লাউশাকের আঁটি ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বাজারে তেলাপিয়া প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাঙ্গাশ প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আর এক কেজি ওজনের রুই মাছের দাম ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, দুই-আড়াই কেজি ওজনের দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, আর তিন কেজির বেশি ওজনের হলে দাম হাঁকা হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি। মাঝারি ও বড় সাইজের কাতল মাছ ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কই মাছ প্রতি কেজি ৩২০ টাকা, পাবদা মাছ প্রতি কেজি ৩৮০ থেকে ৪৬০ টাকা, শিং মাছ প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, কাতল মাছ প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা, রূপচাঁদা প্রতি কেজি ৮৫০ টাকা, ইলিশ ৮০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ১২০০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৬৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
Leave a Reply