চলতি মৌসুমে ১০২ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও মৌসুমের শুরু থেকে অনাবৃষ্টি প্রচণ্ড খরা ও তীব্র দাপদাহ দেখা দেয় এর মধ্যেও চলতি মৌসুমের মার্চে ২.০৫৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের নয়া রেকর্ডের পরে এবার পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের কারণে মৌসুমে জুলাই মাসে ১৩.৬৫৪ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন করে ১০ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে দেশে চা উৎপাদনে নয়া রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।
একই সাথে মৌসুমের সাত মাসে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৪০. ০৯৬ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন করেও গত১০ বছরের চা উৎপাদনের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে দেশ। গত ১০ বছরের মধ্যে ২০১৩ সালে এত ০১৩ সালে জুলাই মাসে চা উৎপাদন হয়েছে ১০.১০২ মিলিয়ন কেজি এবং ৩১ জুলাই পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছিল ২৫.২৯৫ মিলিয়ন কেজি।
২০১৪ সালে জুলাই মাসে উৎপাদন হয়েছে ৭.৯০৫ মিলিয়ন কেজি এবং সাত মাসে উৎপাদন হয়েছিল ২৩. ৭৩০ মিলিয়ন কেজি। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে চা উৎপাদন হয়েছে ১০.৩৩৬ মিলিয়ন কেজি এবং ওই বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ২৬.৩৮০ মিলিয়ন কেজি। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে উৎপাদন হয়েছে ১১.৩৯৫ মিলিয়ন কেজি একই মৌসুমের ৩১ জুলাই পর্যন্ত চা উৎপাদন হয়েছে ৩৬.৭৭৫ মিলিয়ন কেজি। ২০১৭ সালে জুলাই মাসে উৎপাদন হয়েছিল ১১.২০৬ মিলিয়ন কেজি এবং ৩১ জুলাই পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছিল ৩১.৪৩১ মিলিয়ন কেজি। ২০১৮ সালে জুলাই মাসে চা উৎপাদন হয়েছিল ১০.৯৮৫ মিলিয়ন কেজি একই বছর ৩১ জুলাই পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছিল হয়েছিল ৩০. ৩৮৩ মিলিয়ন কেজি।
২০১৯ সালে জুলাই মাসে চা উৎপাদন হয়েছে ১১.১০৪ মিলিয়ন কেজি বছর জুলাই পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ৩৯. ০৫২মিলিয়ন কেজি। ২০২১ সালে জুলাই মাসে উৎপাদন হয়েছিল ১২.৩৩৮ মিলিয়ন কেজি একই বছর ৩১ জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে উৎপাদন হয়েছিল ৩৭.৭৬১ মিলিয়ন কেজি।
একইভাবে ২০২২ সালে জুলাই মাসে চা উৎপাদন হয়েছিল ১১.২৬৭ মিলিয়ন কেজি এবং ৩১ জুলাই পর্যন্ত চা উৎপাদন হয়েছিল ৩৮.৩৩০ মিলিয়ন কেজি। এ দিকে চট্টগ্রাম বিভাগের ২২টি চা বাগানে চলতি মৌসুমের ৩১ জুলাই পর্যন্ত চা উৎপাদন হয়েছে ৪.০৯৩ মিলিয়ন কেজি।
জানা গেছে, প্রতি বছর মৌসুমের শুরু থেকে একাধারে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল ও মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত অনাবৃষ্টি ও তাপদায়ে দেশে চা উৎপাদন ব্যহত হয়ে আসছে। তার পরেও চা উৎপাদনে লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশ চা বোর্ড গ্রহণ করেছে নানামুখী কার্যক্রম,এই কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে প্রতিটি বাগানে প্রতি বছর কমপক্ষে আড়াই শতাংশ করে চা বাগান বর্ধিত করা, উন্নত মানের চা চারা প্রদান ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ আনুসাঙ্গিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করায় প্রতি বছরই চা বাগানের পরিধি ও উৎপাদন দুটোই বাড়ছে।
গত বছর দেশে চা উৎপাদন হয়েছিল ৯৩.৮২৯ মিলিয়ন কেজি। যদিও গত মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০০ মিলিয়ন কেজি। গত বছরের আগস্টে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে তারা কর্মবিরতি করেন সে কারণে ওই আগস্ট মাসে উৎপাদন কম হওয়ার কারণেই মূলত ২০২২ মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এখন যেহেতু চা শ্রমিকদের মজুুরি বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে সে কারণে চলতি মৌসুমে চা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
চা বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী দেশে মোট নিবন্ধনকৃত ১৬৭টি টি এস্টেট ও চা বাগান রয়েছে এতে সর্বমোট দুই লাখ ৭৯ হাজার ৫০৬.৮৮ একরে চা উৎপাদন হয়ে আসছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজারে রয়েছে ৭৬টি এস্টেট ও ১৫টি চা বাগান (১ লাখ ৫৬ হাজার ১৯১.৯৪ একর), হবিগঞ্জ জেলায় রয়েছে ২২টি টি এস্টেট ও তিন চা বাগান (৫৪ হাজার ১৬৪.১৬ একর), সিলেট জেলায় রয়েছে ১২টি টি এস্টেট ও সাতটি চা বাগান (২৮ হাজার ৯৩৬.৩২ একর), চট্টগ্রাম জেলায় রয়েছে ১৮টি টি এস্টেট ও চারটি চা বাগান (৩৪ হাজার ৫৬০.৪৫ একর), রাঙ্গামাটি জেলায় রয়েছে- একটি টি এস্টেট ও একটি চা বাগান (৭৯৪.৯৪ একর), পঞ্চগড় জেলায় রয়েছে ৮টি চা বাগান (চার হাজার ৮১৮.২৯৫ একর) এবং ঠাকুরগাঁওয়ে রয়েছে একটি চা বাগান (৪০.৭৭একর)।
অপর দিকে ২০২১ মৌসুমে উদপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৭৭.৭৭৮ মিলিয়ন কেজির বিপরীতে উৎপাদন হয় ৯৬.৫০৬ মিলিয়ন কেজি। একইভাবে ২০২০ মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৭৫.৯৪০ মিলিয়ন কেজির বিপরীতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে উৎপাদন হয়েছিল ৮৬.৩৯৪ মিলিয়ন কেজি। ২০১৯ মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৪.১৪০ মিলিয়ন কেজি তার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছিল ৯৬.০৬৯ মিলিয়ন কেজি। ২০১৮ মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭২,৩৯০ মিলিয়ন কেজি তার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৮২.১৩৪ মিলিয়ন কেজি। ২০১৭ মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা ছিল ৭০.৬৮০ মিলিয়ন কেজি তার বিপরীতে উৎপাদন ৭৮.৯৪৯ মিলিয়ন কেজি ছাড়িয়ে যায়। উৎপাদনের ধারাবাহিকতা দেখে বুঝা যায় প্রতি মৌসুমে দেশে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
এ দিকে ২০২২ মৌসুমে চট্টগ্রামেও অতিতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে চা উৎপাদনে নতুন রেকর্ড করে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামে ১৮টি টি স্টেট ও চারটি চা বাগানে উৎপাদন হয়েছে লক্ষ্যমাত্রা এক কোটি কেজির বিপরীতে এক কোটি ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৯৯৬ কেজি। (১১.১৩৮ মিলিয়ন কেজি) অপর দিকে গত ২০২১ মৌসুমে উৎপাদন হয়েছিল ৯৫ লাখ ৭২১ কেজি। (৯.৫৭২ মিলিয়ন কেজি)।
এবার (২০২৩) মৌসুমে চট্টগ্রামের ২২টি বাগানে চা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক কোটি ২০ লাখ কেজি। চলতি মৌসুমে ৩১ জুলাই পর্যন্ত চট্টগ্রামের বাগানগুলোতে চা উৎপাদন হয়েছে ৪.০৯৩ মিলিয়ন কেজি উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান মো: আবুল বাশার।
উৎপাদনের এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে চা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ বর্ধিত আকারে বিদেষে চা রফতানির যে লক্ষ্যমাত্রা তা পূরণ সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।
জানা গেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নিদের্শনার আলোকে দেশের চায়ের চাহিদা মেটাতে পরনির্ভশীলতা কমিয়ে বরং উপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আরো বর্ধিতভাবে বিদেশে চা রফতানি করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ চা বোর্ড।
ইতোমধ্যে সরকারের সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সমগ্র দেশের চা বাগানে চলছে, বাগানের পরিধি বৃদ্ধির সাথে চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধি করার কাজও করছে বাংলাদেশ চা বোর্ড।
Leave a Reply