রাজধানীর বাজারগুলোতে সব ধরনের মাছই রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে। যেসব মাছ ছয় মাস আগে ২০০ টাকা কেজি দাম চাওয়াও হয়নি সেই মাছ ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কম দামের মাছ ছাড়াও প্রায় সব ধরনের মাছের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বাড়তি দামের কারণে ভোক্তাদের মধ্যে অস্বস্তিকর অবস্থা বিরাজ করছে। বেশির ভাগ সময় স্বল্প আয়ের মানুষকে বাজার থেকে মাছ না কিনে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, স্বল্প আয়ের মানুষের আমিষের অন্যতম উপাদান তেলাপিয়া প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাঙ্গাশ প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছয় মাস আগেও এই মাছ দু’টি ২০০ টাকা প্রতি কেজি কল্পনাও করা যেত না। ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হতো এই মাছ দু’টি। আর এক কেজি ওজনের রুই মাছের দাম ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, দুই-আড়াই কেজি ওজনের দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, আর তিন কেজির বেশি ওজনের হলে দাম হাঁকা হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি। মাঝারি ও বড় সাইজের কাতল মাছ ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কই মাছ প্রতি কেজি ৩২০ টাকা, তেলাপিয়া প্রতি কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা, পাবদা মাছ প্রতি কেজি ৩৮০ থেকে ৪৬০ টাকা, শিং মাছ প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, কাতল মাছ প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা, রুপ চাঁদা প্রতি কেজি ৮৫০ টাকা, ইলিশ ৮০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ১২০০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৬৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাসাবোর গৃহিণী রোকসানা পারভীন বলেন, রাজধানীতে ১০ বছর ধরে আছি, এত বেশি দামে মাছ কিনতে হয়নি কখনো। পাঙ্গাশ তেলাপিয়া মাছও এখন ২৫০ টাকার বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে মাছের বাজারেও সিন্ডিকেট কাজ করছে। দাম সহনীয় রাখতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
মাছের খামারিরা বলছেন, মাছের খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন, বিদ্যুৎ খরচ এবং শ্রমিকদের বাড়তি মজুরির জন্য মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু খামারিরা যে হারে দাম বাড়িয়েছেন, সে তুলনায় উচ্চহারে দাম বাড়িয়ে মাছের বাজার অস্থির করেছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। খামার পর্যায়ে মাঝারি ও বড় সাইজের তেলাপিয়া প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ২০০ টাকায় এবং পাঙ্গাশ প্রতি কেজি ১৩৮ থেকে ১৪৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এক কেজি ওজনের রুই ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়, দুই-আড়াই কেজি ওজনের রুই ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
অন্য দিকে বাজারে সবজির দামও বেড়েছে। পটোল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ১০০ টাকা, গোল বেগুন প্রতি কেজি ৮০ টাকা আর লম্বা বেগুন প্রতি কেজি ৬০ টাকা, আলু প্রতি কেজি ৪৫ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৭০ টাকা, গাঁজর প্রতি কেজি ১০০ টাকা, কাঁচাকলার প্রতি হালি ৪০ টাকা, ঝিঙ্গা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, জলি প্রতি পিস ৬০ টাকা, কচুর লতি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ২০০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ২২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা প্রতি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমে প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি লেয়ার মুরগি প্রতি কেজি ৩৮০ টাকা, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা আর দেশী মুরগি প্রতি কেজি ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্য দিকে বাজারে গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায় আর খাসির গোশত প্রতি কেজি ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজি বিক্রেতারা বলছেন, কয়েক দিনে সবজির বাজার একটু বেড়ে গেছে। আমরা পাইকারি বাজার থেকে যেমন দামে সবজি কিনে আনি তেমন দামেই খুচরা বাজারে বিক্রি করি। কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে ক্ষেত থেকে ফসল তুলতে পারছিল না কৃষকরা। সে কারণে বাজারে সরবরাহ কম ছিল। তাই সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে গেছে। বৃষ্টি কমে গেলেই হয়তো আগের দামে ফিরে আসবে।
Leave a Reply