ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের গুরুগ্রামের সেক্টর ৫৭-এ উগ্র হিন্দুত্বাবাদীদের হামলায় একটি মসজিদের ইমাম প্রাণ হারিয়েছেন গত সোমবার। নুহ জেলা থেকে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতার নির্মম শিকার হন তিনি। জানা যায়, মসজিদ লক্ষ্য করে দুষ্কৃতিকারীরা ওই রাতে গুলি ছুড়েছিল। মসজিদে আগুন পর্যন্ত লাগিয়ে দেয়া হয়েছিল।
এদিকে এই ঘটনার পর মৃত ইমাম মোহম্মদ সাদের পরিবার চাঞ্চল্যকর দাবি করছে। তাদের দাবি, ঘটনার আগে সাদের সঙ্গে কথা হয়েছিল তাদের। তখন নাকি তিনি জানিয়েছিলেন, পরিস্থিতি সেখানে স্বাভাবিক আছে। দুই গাড়ি পুলিশ সেখানে আছে। সামাদের ভাই সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘রাতে ও আমাকে বলল, ফজরের নামাজ আদায় করেই বাড়িতে ফিরবে সে।’ তবে শেষ পর্যন্ত আর বাড়ি ফেলা হয়নি মোহম্মদ সাদের। তিনি গুরুগ্রামের অঞ্জুমান জামা মসজিদের নায়েবে ইমাম ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই একটি ধর্মীয় মিছিলকে আটকানোর অভিযোগে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় হরিয়ানার নুহ এবং গুরুগ্রাম জেলায়। হরিয়ানার হিন্দুত্ববাদী বজরং দল কর্মী মনু মানেসারকে কেন্দ্র করেই সেখানের নুহ্ এবং গুরুগ্রাম জেলায় সহিংসতা ছড়ায়। গত ফেব্রুয়ারিতে ভিওয়ানিতে দুই মুসলিম যুবককে খুন করার ঘটনায় মনু পলাতক হিসেবে রয়েছেন। সেই মনু ভিডিও পোস্ট করে দাবি করেছিলেন, এই ধর্মীয় মিছিলে সে থাকবে। এই আবহে গুরুগ্রাম আলওয়ার হাইওয়েতে এই যাত্রা থামান কয়েকজন। এরপরই মিছিলকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়া হয়। সরকারি ও বেসরকারি গাড়িকে লক্ষ্য পাথর ছোঁড়া হয়। সেই সময় পাশের এক শিবমন্দির চত্বরে আশ্রয় নেন প্রায় ২,৫০০ মানুষ।
ওই সহিংসতা এখনো চলছে। সোমবার সন্ধ্যার দিকে গুরুগ্রাম সোহনা হাইওয়েতে সহিংসতা ছড়াতে থাকে। একাধিক গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ঘটনার জেরে বেশ কিছু বাড়িঘর, দোকানেও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ধর্মস্থানেও হামলা হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করেও চলে ইট বৃষ্টি। সহিংসতার ঘটনায় দুই হোমগার্ড সহ অন্তত তিনজনের মৃত্যু ঘটেছে। মৃত হোমগার্ডদের নাম- নীরজ এবং গুরুসেবক। ঘটনায় জখম হয়েছে আরো অন্তত ২০০ জন।
পরে অন্যত্র সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এখন পর্যন্ত ওই রাজ্যে হিংসার বলি মোট ছয়। এরই মাঝে সর্বত্র সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য আবেদন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মোহরলাল খট্টর। এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। গুজব এবং প্ররোচনা ঠেকাতে মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় টহল দিচ্ছে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস
Leave a Reply