ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ মণিপুরে প্রায় ৮০ দিন ধরে ভয়াবহ নৃশংসতা চলছে। নারীদের গণধর্ষণের পর বিবস্ত্র অবস্থায় হাঁটানো, পুড়িয়ে মারার মতো বর্বরতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেই সহিংসতা এবার প্রতিবেশী মিজোরামে ছড়িয়ে পড়ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাবেক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘পিস অ্যাকর্ড এমএনএফ (মিজো ন্যাশনাল পার্টি) রিটার্নিস অ্যাসোসিয়েশন’-র একটি বার্তার পর সেই উদ্বেগ বেড়েছে। ‘নিজেদের সুরক্ষার জন্য’ মেইতেই সম্প্রদায়ের মিজোরাম ছেড়ে চলে যাওয়ার ‘পরামর্শ’ দিয়েছে ওই সংগঠন। মিজোরামে মেইতেইদের সাথে যদি কোনোরকম অযাচিত ঘটনা ঘটে যায়, সেটার জন্য তারা নিজেরাই দায়ী থাকবে। ওই সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছে, মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষকে কোনো ‘হুঁশিয়ারি’ বা ‘হুমকি’ দেয়া হয়নি। বরং মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষদের স্বার্থেই সেই ‘পরামর্শ’ দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে ওই সংগঠন।
উল্লেখ্য, মণিপুরে মেইতিদের সাথে কুকি আদিবাসীদের সঙ্ঘাত চলছে। ওই কুকিদের বাস মিজোরামেও আছে। যে দুই নারীকে ধর্ষণের পর বিবস্ত্র অবস্থায় ঘোরানো হয়েছে তারা কুকি সম্প্রদায়ের। আর অপকর্মটি করেছে মেইতি সম্প্রদায়ের লোকজন।
আইজল থেকে জারি করা একটি বিবৃতিতে ‘পিস অ্যাকর্ড এমএনএফ (মিজো ন্যাশনাল পার্টি) রিটার্নিস অ্যাসোসিয়েশন’-র তরফে বলা হয়েছে, ‘মিজোরামের পরিস্থিতি উত্তেজনাপ্রবণ হয়ে আছে। মণিপুরে যে বর্বরোচিত এবং জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা, তাতে মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষের পক্ষে মিজোরামে থাকা আর সুরক্ষিত নয়।’ সেইসাথে ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, যদি মিজোরামে কোনো মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষকে কোনো অযাচিত ঘটনার মুখে পড়তে হয়, সেজন্য সম্পূর্ণভাবে তারা দায়ী থাকবেন।
সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘পিস অ্যাকর্ড এমএনএফ (মিজো ন্যাশনাল পার্টি) রিটার্নিস অ্যাসোসিয়েশন’-র সেক্রেটারি জেনারেল সি লালথেনলোভা বলেছেন, ‘কোনো রকম অযাচিত ঘটনা এড়াতে আমরা স্রেফ মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষদের রাজ্য ছেড়ে যাওয়ার আর্জি জানিয়েছি। আমরা কোনো রকম সতর্কতা হুঁশিয়ারি দিইনি।’ উল্লেখ্য, মিজো ন্যাশনাল পার্টির সশস্ত্র বাহিনী ছিল ‘পিস অ্যাকর্ড এমএনএফ রিটার্নিস অ্যাসোসিয়েশন’। যে সংগঠন ১৯৮৬ সালে মিজোরাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পরে অস্ত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।
আর ওই সংগঠনের তরফে এমন একটা সময় মুখ খোলা হয়েছে, যখন মণিপুরের বর্বরতা নিয়ে পুরো ভারতে নিন্দার ঝড় উঠেছে। গত ৪ মে সেই রাজ্যে কুকি সম্প্রদায়ের দুই মহিলাকে নগ্ন অবস্থায় ঘোরানোর অভিযোগ উঠেছে সংখ্যাগুরু মেইতেই সম্প্রদায়ের উত্তেজিত জনতার বিরুদ্ধে। সেই শ্রেণি সংঘাত ঘিরে মিজোরামে ফের বিচ্ছিন্নতাবাদী মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে কিনা, তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষত মুখে সুরক্ষার কথা বললেও যেভাবে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছে ‘পিস অ্যাকর্ড এমএনএফ (মিজো ন্যাশনাল পার্টি) রিটার্নিস অ্যাসোসিয়েশন’, তাতে সেই আশঙ্কা আরো বেড়েছে।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস
Leave a Reply