1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩১ অপরাহ্ন

পঞ্চায়েতের সাফল্যেই লোকসভায় বিজেপিকে হারাতে আত্মবিশ্বাসী মমতা

ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৩

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিপুল সাফল্য পেয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস। আর এই সাফল্যকে পুঁজি করে পার্লামেন্ট তথা লোকসভা নির্বাচনের হিসাব কষতে শুরু করে দিয়েছে তারা।

দেখা গেছে, বিধানসভা ভোটের তুলনায় রামের ভোট কমেছে। বামের ভোট বেড়েছে। রাম অর্থাৎ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলছেন, ‘আমাদের যে ভোটটা কমেছে সেটাই পেয়েছে সিপিএম।’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মোহম্মদ সেলিম বলছেন, ‘সিপিএমের নেতৃত্বে বাংলার রাজনীতি আবার মূল স্রোতে ফিরছে।’

পঞ্চায়েত নির্বাচনের যে পরিসংখ্যান বুধবার পর্যন্ত পাওয়া গেছে, তাতে সিপিএম পেয়েছে ১২.৫৪ শতাংশ ভোট। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের হিসাব দেখলে বামেদের প্রাপ্ত ভোটের হারে বিশেষ বদল হয়নি। ২০১৯ সালে গত লোকসভা নির্বাচনে বামেরা পেয়েছিল ৫.৮০ শতাংশ ভোট। আর বিধানসভা নির্বাচনে বাম, কংগ্রেস, আইএসএফ-এর সংযুক্ত মোর্চা পেয়েছিল ৯.৮৬ শতাংশ ভোট। সিপিএম এককভাবে পেয়েছিল ৪.৭০ শতাংশ ভোট। সেই হিসাবে এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিধানসভা ভোটের চেয়ে নিজেদের ভোট প্রায় ৮ শতাংশ বাড়িয়েছে সিপিএম। কংগ্রেসের প্রাপ্তি ৫.৫৭ শতাংশ।

আবার বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ২০১৮ সালের ১৯ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ২২.৬৯ শতাংশ। আসন সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু পাশাপাশিই এটাও প্রণিধানযোগ্য যে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি ভোট পেয়েছিল ৪০.৩২ শতাংশ। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে যা কমে দাঁড়িয়েছিল ৩৮.১৬ শতাংশ। ফলে তাদের ভোট দু’বছর আগের তুলনায় লক্ষ্যণীয়ভাবে কমেছে।

লোকসভা ভোটের আগে যা দেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির তৃপ্তির হাসি হাসার কথা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাথমিক হিসাব যা বলছে, তাতে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফের যৌথ ভোটপ্রাপ্তি বিজেপির কাছাকাছি। মোট বিরোধী ভোট ৪০ শতাংশের মতো। এই ধারা বজায় থাকলে এই অঙ্কই তৃণমূলের পক্ষে লাভদায়ক হবে। বিরোধী ভোট ভাগ হয়ে গেলে জয়ের পথ সুগম হবে তাদের। যদিও তৃণমূলের দাবি, জয়ের জন্য তাদের ভোট ভাগাভাগির উপরে নির্ভর করতে হবে না। এমনিতেই মানুষ বিজেপিকে ছেড়ে তৃণমূলের দিকে চলে আসবেন।

তৃণমূলনেত্রীর ঘনিষ্ঠমহলের খবর, পঞ্চায়েত ভোটে ভালো ফলাফল নিয়ে তিনি অনেকটাই নিশ্চিত ছিলেন। কারণ, তিনি জানতেন, বিরোধী ভোট ভাগ হবে। বাস্তবেও তেমনই ঘটেছে। বামের যে ভোট রামে গিয়েছিল, তার অনেকটাই বামে ফিরেছে। যার ফল পেয়েছে শাসক তৃণমূল।

পঞ্চায়েত নির্বাচনে সবক’টি জেলা পরিষদের দখল নিয়েছে তৃণমূল। বাকি দু’টি স্তর গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতিতেও শাসকেরই দাপট। প্রধান বিরোধী দল বিজেপি যে সব জায়গায় শক্তিশালী, সেখানেও ঘাসফুল ফুটেছে। ‘গড়’ রক্ষা করতে না-পারায় বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা হতাশ। নেতারা পরিসংখ্যান দিয়ে আগের থেকে ফল ভালো বলে দাবি করলেও আশাভঙ্গের ধাক্কা যে লেগেছে, তা মেনে নিচ্ছেন।

আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৩৫টি আসন জেতার ডাক দিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা অমিত শাহ। নরেন্দ্র মোদিকে তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসাতে গোটা ভারতের সাথে পশ্চিমবঙ্গতেও প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। কিন্তু সেই প্রস্তুতিতে অনেকটাই ধাক্কা দিল পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল। নিজেদের ‘শক্ত ঘাঁটি’ উত্তরবঙ্গ থেকে শুরু করে মতুয়াগড় এবং আদিবাসী অধ্যুষিত জঙ্গলমহল— কোথাওই বিজেপির ফল ‘আশাব্যঞ্জক’ নয়। দলের এক নেতার কথায়, ‘ফল কী হয়েছে, তার থেকেও বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে কেমন ফল আমরা আশা করেছিলাম। সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে না পারায় কর্মীদের মনোবলে যে ধাক্কা লেগেছে, সেটা মানতেই হবে। এটাই লোকসভা নির্বাচন নিয়ে চিন্তার কারণ।’

পক্ষান্তরে, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি থেকে শুরু করে গ্রামীণ এলাকায় ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা-সহ নানা অভিযোগ ও তদন্তের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য ধরা দিয়েছে তৃণমূলের হাতে। বাম-কংগ্রেসের ফলাফল বলছে, বিরোধী ভোট ভাগাভাগিতে বড় ভূমিকা নিতে পারে তারা।

তৃণমূলের প্রবীণ এমপি সৌগত রায়ের বক্তব্য, ‘এক বছরেরও কম সময় বাকি লোকসভা ভোটের। তাতে পঞ্চায়েতের ফলের প্রভাব পড়বেই। সবচেয়ে বড় কথা, বিজেপি নিজেদের শক্তিশালী এলাকাগুলোতেও খারাপ ফল করেছে। মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির কোনো জায়গা নেই।’ যদিও বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি তথা এমপি দিলীপ ঘোষের দাবি, ‘পঞ্চায়েত দিয়ে লোকসভার বিচার করা যায় না। এখানে সন্ত্রাস করে জেতা গিয়েছে। লোকসভা ভোটে সেটা পারবে না তৃণমূল। আর লোকসভা নির্বাচনে মানুষ দেশের সরকার বানাবে, পশ্চিমবঙ্গের নয়। তৃণমূলকে সমর্থন করে কেউ ভোট নষ্ট করবে না।’ একই সাথে অতীতের পরিসংখ্যান নিয়েও যুক্তি দিয়েছেন দিলীপ। পাশাপাশিই তার যুক্তি, ‘২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমরা ১৮ শতাংশ মতো ভোট পেয়েছিলাম। তার পরের বছরেই ১৮ এমপি। ভোট পেয়েছিলাম ৪০ শতাংশের বেশি। এ বার তো আমাদের ভোট বেড়েছে, আসনও বেড়েছে পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরে। ফলে লোকসভাতেও বাড়বে।’

তবে এবারের গ্রামীণ ভোটের প্রাথমিক যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে, তাতে পাঁচ বছর আগের পঞ্চায়েত ভোটের তুলনায় ভোটের হার কমেছে তৃণমূলের। ২০১৮ সালে ছিল ওই পরিমাণ ছিল ৫৬ শতাংশ। এ বার ৫২.২২ শতাংশ। এটা গণনা পর্বের শেষ কিছুটা বদলাতেও পারে। তবে ২০১৮ সালের ভোটে অধিকাংশ এলাকাই ছিল ‘বিরোধীশূন্য’। ভোট হয়েছিল ‘একতরফা’। এ বার তা হয়নি।

বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের ‘ছায়া’ পঞ্চায়েতে দেখাতে পারলে বিজেপির অন্তত পাঁচটি জেলায় ভালো ফল করার কথা ছিল। কমপক্ষে দু’টি জেলা পরিষদও তাদের দখল করার কথা ছিল। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির জেতা ৭৭টি আসনের মধ্যে ৩৬টি কেন্দ্রের গোটা এলাকাই গ্রামাঞ্চল। আবার শহর-গ্রাম মিশে রয়েছে, এমন আসনের মধ্যেও ৩৬টিতে জয় পেয়েছিল বিজেপি। শহর এলাকার মাত্র পাঁচটি আসনে জিতেছিল তারা। তার মধ্যে দিনহাটা, রানাঘাট পরে উপনির্বাচনে হেরে যায় তারা। তাই গ্রামের এই রায় বিজেপির জন্য যথেষ্ট চিন্তার।

কোচবিহারে ৯টি আসনের মধ্যে ৭টিতে জিতেছিল বিজেপি। আলিপুরদুয়ারের ৫টি বিধানসভা আসনের সব ক’টিই বিজেপির দখলে। জলপাইগুড়ি জেলায় ৭টি আসনের মধ্যে বিজেপি জয় পেয়েছিল ৪টিতে। দক্ষিণবঙ্গের বাঁকুড়ায় ১২টি বিধানসভা আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছিল ৮টিতে। পুরুলিয়ায় ৯টির মধ্যে ৬টিতে। এই পাঁচ জেলার গ্রামাঞ্চলে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল তৃণমূলের থেকে বেশি। এ ছাড়াও মতুয়াপ্রধান নদিয়ায় ১৭টি আসনের মধ্যে ৯টিতে আর পূর্ব মেদিনীপুরে ১৬টির মধ্যে ৭টিতে জিতেছিল তারা। কিন্তু বাস্তবে একটি জেলা পরিষদেও জয়ের কাছাকাছি যেতে পারেনি বিজেপি।

দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্তের বক্তব্য, ‘‘সিপিএম ‘ভোট-কাটুয়া’র ভূমিকা নিয়েছিল। আমাদের যে ভোটটা কমেছে, সেটাই পেয়েছে সিপিএম। আমি প্রচারেই বলেছিলাম, সিপিএমকে ভোট দেয়া মানেই তৃণমূলকে ভোট দেয়া! আসলে বামেরা তৃণমূলের হয়েই কাজ করেছে।’’ আবার নন্দীগ্রামের মতো কয়েকটি জায়গার ফলাফলের প্রেক্ষিতে সিপিএমকে ‘ভোট কাটুয়া’ বলছে তৃণমূলও। যার জবাব দিতে গিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মোহম্মদ সেলিম বলছেন, ‘’সিপিএমের নেতৃত্বে বাংলার রাজনীতি আবার মূলস্রোতে ফিরছে। তাতে সবচেয়ে বেশি বিপদ এই তৃণমূল-বিজেপির। তাই ওরা চিন্তিত। আমাদের ‘ভোট কাটুয়া’ বলা বিজেপি বাংলায় আসলে ‘ভো-কাট্টা’।’’

তবে এ সবে যুক্তিকে পাত্তা না দিয়ে বিজেপি শিবিরের একটাই দাবি— পঞ্চায়েতের সঙ্গে লোকসভা নির্বাচনের তুলনা হয় না। তখন ভোট হবে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে। থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনীও। ব্যালট পেপার নয়, মানুষ ভোট দেবেন বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্রে। আর দেশের সরকার মানুষ তৈরি করবেন জাতীয় স্তরের বিষয়ের ভিত্তিতে। দলের সাংসদ জগন্নাথ সরকারের আশা, ‘২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে সন্ত্রাস হয়েছিল, তা ২০১৯ সালে আমাদের ভাল ফলের সুবিধা করে দিয়েছিল। এবারে সন্ত্রাস আরো বেশি। ফলে আরো ভালো ফল হবে ২০২৪ সালের ভোটে।’
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com