নতুন অর্থবছরের শুরুতেই সরকার প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার কেনাকাটা করবে। নতুন ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রথম এবং চলতি বছরের ২৩তম সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ১৩ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকায় ১৩ ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চাল, গম, জ্বালানি তেল, এলএনজি ও সার আমদানির মতো গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রস্তাবও রয়েছে।
গতকাল বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান।
তিনি বলেন, আজকে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ১৫তম এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ২৩তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য চাটি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ১৩টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।
ক্রয় কমিটির প্রস্তাবগুলোর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের চারটি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের চারটি, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের তিনটি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি এবং সেতু বিভাগের একটি প্রস্তাব ছিল। অতিরিক্ত সচিব বলেন, ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ১৩টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১৩ হাজার ৮৪৬ কোটি ৪৫ লাখ দুই হাজার ৬৬৪ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি’ প্রকল্পের ইন্ডিপেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্সের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের ইন্ডিপেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স হিসেবে নিয়োজিত যৌথভাবে থাই মুট ম্যাকডোনাল্ড লিমিটেড; মুট ম্যাকডোনাল্ড লিমিটেড, ইউকে এবং ইউরো কনাসালট্যান্ট মুট ম্যাকডোনাল্ড বিভি, নেদারল্যান্ডসের বর্ধিত চুক্তির মেয়াদ গত ৩০ জুন শেষ হয়েছে। প্রকল্পের নির্মাণকাজের সময় বর্ধিত হওয়ায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের চুক্তির মেয়াদ আগামী ২০২৪ সালের ৩০ জুন তারিখ (নির্মাণকাজ সমাপ্ত) পর্যন্ত এক বছর বৃদ্ধির জন্য দ্বিতীয় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৫৪১ মার্কিন ডলার এবং পাঁচ কোটি ৫৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৮৫ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করে সংশোধিত চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে। তিনি বলেন, জি-টু-জি ভিত্তিতে দু’টি ক্রুড অয়েল মাদার ট্যাংকার এবং দু’টি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ সংগ্রহের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। অর্থাৎ মোট চারটি জাহাজ ক্রয়ের জন্য ‘চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন’- এর কাছে দরপ্রস্তাব করা হলে প্রতিষ্ঠানটি দরপ্রস্তাব দাখিল করে। প্রস্তাবটি জি-টু-জি কমিটি কর্তৃক নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত প্রতিষ্ঠান ‘চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন’-এর কাছ থেকে চারটি জাহাজ সংগ্রহ করা হবে। এতে ব্যয় হবে দুই হাজার ৪৮৬ কোটি ৩০ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।
২০২৩ সালের জুলাই টু ডিসেম্বর সময়ে আন্তর্জাতিক কোটেশন প্রক্রিয়ায় পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ের জন্য পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির লক্ষ্যে পাঁচটি প্যাকেজে বিভক্ত করে আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে দু’টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জ্বালানি তেল সংগ্রহ করা হবে। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান ইউনিপেক সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড, সিঙ্গাপুর (প্যাকেজ-এ ও ই) এবং ভাইটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড, সিঙ্গাপুর (প্যাকেজ বি, সি ও ডি) থেকে মোট ১৫ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে। এতে ব্যয় হবে ১১২ কোটি ৬০ লাখ ৯৬ হাজার ২৫৪ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশী মুদ্রায় ১২ হাজার ২৭৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন-২০২১-এর আওতায় স্পট মার্কেট থেকে (২০২৩ সালের ১৫তম) এলএনজি আমদানির প্রত্যাশাগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ২১টি প্রতিষ্ঠানের সাথে এমএসপিএ চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়। পেট্রোবাংলা কর্তৃক এক কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য ২১টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে একটি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটির (পিপিসি) সুপারিশে একমাত্র দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স এক্সেলারেট এনার্জি এলপি, ইউনাইটেড স্টেটস-এর কাছ থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ ১৩.৩৫ মার্কিন ডলার হিসাবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি ক্রয়ে ব্যয় হবে ৫৭২ কোটি চার লাখ ৮৫ হাজার ৬৮০ টাকা।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন-২০২১-এর আওতায় স্পট মার্কেট থেকে (২০২৩ সালের ১৭তম) এলএনজি আমদানির প্রত্যাশাগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। দরপ্রস্তাবের প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটির (পিপিসি) সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স ভাইটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড, সিঙ্গাপুরের কাছ থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ ১২ দশমিক ৭০ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানি করতে ব্যয় হবে ৫৪৪ কোটি ১৯ লাখ ৬০ হাজার ১৬০ টাকা। সাঈদ মাহবুব খান বলেন, রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে আটটি পৃথক প্রস্তাবে কাতার, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি, কানাডা, সৌদি আরব ও রাশিয়া থেকে বিভিন্ন ধরনের মোট দুই কোটি ৮০ লাখ মেট্রিক টন সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে দুই হাজার ৭৯৫ কোটি ১৭ লাখ ৪৪ হাজার ২৯৫ টাকা। এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় চারটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয় বলে অতিরিক্ত সচিব জানান। এর মধ্যে পাঁচ লাখ টন চাল ও ছয় লাখ টন গম আমদানির সিদ্ধান্তও রয়েছে বলে জানা গেছে।
Leave a Reply