1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৭ পূর্বাহ্ন

ঈদের আগে নগদ টাকার সঙ্কটে ব্যাংক : দুই দিনে ধার ৩৪ হাজার কোটি টাকা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৮ জুন, ২০২৩

ঈদের আগে গ্রাহকদের বাড়তি চাহিদা মেটাতে অর্থের সংস্থান করতে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকেরও সহায়তা নেয়ার নির্দেশনা ছিল। এ জন্য ব্যাংকগুলো আগাম পদক্ষেপও নিয়েছিল। কিন্তু ঈদের আগেপড়ে একটানা পাঁচ দিন ব্যাংক বন্ধ থাকবে। এ কারণে গ্রাহকরা ব্যাংক থেকে বাড়তি অর্থ উত্তোলন করেছে। এতে শেষ দুই দিনে কিছু কিছু ব্যাংক চরম নগদ অর্থের সঙ্কটে পড়ে যায়। আর এ সঙ্কট মেটাতেই সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলো দুই দিনে ৩৪ হাজার কোটি টাকা ধার নিতে হয় বাণিজ্যিক ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। এর মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে কলমানি মার্কেট থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে স্বল্পমেয়াদে ও বিশেষ তারল্য সহায়তায় ধার নিয়েছে ১৯ হাজার কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের আগাম সতর্কতার কারণে আগে থেকেই ব্যাংকগুলো নগদ টাকার সংস্থান করে রেখেছিল। পাশাপাশি এক সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ অর্থ সহায়তার আওতায় ২৯ হাজার কোটি টাকা ধার নেয়া হয়েছিল। এরপরেও অন্য বছরের চেয়ে এবার একটু বেশিই অর্থ উত্তোলন করেছেন গ্রাহকরা। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। অনেক জনপ্রতিনিধি তাদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়েছেন। জনগণের জন্য কোরবানির পশু কিনছেন। যেখানে আগে তারা ঢাকায় অবস্থান করতেন। এতে টাকা উত্তোলন বেড়ে যায়। আর টাকা উত্তোলন বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর নগদ টাকার জোগাড় করতে ঈদের আগের দুই দিন দৌড়ঝাঁপ বেড়ে যায়। এ ছাড়া দীর্ঘ দিন ধরেই ব্যাংকিং খাতে টাকার সঙ্কট চলছিল। এর অন্যতম কারণ হলো ব্যাংকগুলো ডলার সঙ্কটের কারণে আমদানি খরচ মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার কিনেছে। চলতি অর্থবছরের প্রায় সাড়ে ১১ মাসে প্রায় সোয়া ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিপরীতে ডলার বিক্রি করে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি জিনিসের দাম এক বছরের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। অনেকেই সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে অনেকেরই ব্যাংকে থাকা জমানো অর্থ ভেঙে ফেলেছে। পাশাপাশি নতুন করে ব্যাংকে আমানত রাখতে পারছে না। এতে কমে গেছে আমানত প্রবাহ। সবমিলেই ব্যাংকিং খাতে গত জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে তারল্য কমেছে প্রায় ৬৩ হাজার কোটি টাকা। আর এ কারণেই ব্যাংকিং খাতে নগদ টাকার সঙ্কট দেখা দেয়।
নগদ টাকার সঙ্কটে পড়া এমন একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, আগে থেকেই তারা ধরে নিয়েছিলেন অন্যবারের চেয়ে এবার ব্যাংক থেকে বেশি নগদ টাকা উত্তোলন হবে ঈদের আগে। এর বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সতর্ক করেছিল। এ জন্য তারা আগাম প্রস্তুতিও রেখেছিলেন। কিন্তু ধারণারও বাইরে এবার ব্যাংক থেকে নগদ টাকা উত্তোলন হওয়ায় অনেক হিসেবেই এলোমেলো হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা আর বাস্তব অবস্থার মধ্যে বিস্তার ফাঁরাক পড়ে যায়। আর এ কারণেই তার ব্যাংকে টাকার সঙ্কট দেখা দেয়। তারমতো এ সঙ্কট অনেক ব্যাংকেরই ছিল। এ কারণে যাদের কাছে বাড়তি অর্থ ছিল তারা সুযোগ নিয়ে নেয়। যেখানে কলমানি মার্কেট থেকে আগে ১০০ টাকা ধার নিতে ৩ থেকে ৪ টাকা খরচ হতো। সেটা ঈদের আগে সাড়ে সাত থেকে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ হয়ে যায়। এতে মার্কেট প্লেয়াররা বাড়তি মুনাফা ঘরে তুলে নেয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দুই দিন স্বল্পমেয়াদি ও বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় ১৯ হাজার কোটি টাকার জোগান দেয়া না হলে কলমানি মার্কেটে সুদহার ২০ শতাংশ উঠে যেত। মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপই তাদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহে ব্যাংকগুলো শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ তারল্য সুবিধা নিয়েছে ২৯ হাজার ২০০ কোটি টাকার। এর মধ্যে গত ২৫ জুন নিয়েছে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, ২২ জুন নিয়েছে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, ২১ জুন ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, ২০ জুন ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, ১৯ জুন ৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ও ১৮ জুন ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নিয়েছে।
ঈদের আগে গত রোব ও সোমবার ছিল ঈদের আগে শেষ ব্যাংকিং লেনদেন। ওই দুই দিন গ্রাহকরা সবচেয়ে বেশি টাকা তুলেছেন। এ কারণে ওই সময়ে ব্যাংকগুলোও নগদ টাকার জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছে। গত রোববার কলমানি মার্কেট (এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের এক দিনের জন্য ধার) নিয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা, একই দিনে অন্য ব্যাংক থেকে স্বল্পমেয়াদি বা ৬ থেকে ১৪ দিনের জন্য ধার নিয়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। গত সোমবার কলমানি থেকে ধার নিয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা এবং স্বল্পমেয়াদি ধার নিয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে সীমিত পরিমাণে ২৪ থেকে ৯২ দিন মেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি ধার নিয়েছে কিছু ব্যাংক। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ তারল্য সুবিধার আওতায় নেয়া হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com