কাশ্মীর সীমান্তে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে ভারত। দেশটির হামলায় পাকিস্তানে দুজন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তান। এমনকি পাল্টা হামলা চালানোর হুশিয়ারিও দিয়েছে পাক সেনাবাহিনী। খবর রয়টার্সের।
বিতর্কিত হিমালয় অঞ্চল কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর হামলায় দুই বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন বলে শনিবার দাবি করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। ২০২১ সালে যুদ্ধবিরতির পর পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে এ ধরনের সংঘর্ষ এবারই প্রথম।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, সীমান্তের লাইন অব কন্ট্রোলের (এলওসি) সাতওয়াল সেক্টরে রাখালদের একটি দলের ওপর হামলা করা হয়েছে। এতে ওই দুজন নিহত হন। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী পাল্টা হামলা করার অধিকার রাখে বলেও বিবৃতিতে হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ভারতীয় সেনাবাহিনী সাতওয়াল সেক্টরে নিরীহ কাশ্মীরি রাখালদের একটি দলের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়।’
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলছে, ভারতীয় বাহিনীর এই হত্যাকাণ্ড এবং যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
২০২১ সালে কাশ্মীর উপত্যকায় বিতর্কিত সীমান্তে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান। যদিও এ ধরনের ঘটনা এই দুই দেশের ইতিহাসে বেশ নজিরবিহীন। দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর এ দুটি দেশ বিতর্কিত কাশ্মীরের পুরোটাই নিজেদের বলে দাবি করলেও উভয়েই এর অংশবিশেষ শাসন করে থাকে। তারা এই হিমালয় অঞ্চল নিয়ে তিনটি যুদ্ধের মধ্যে দুটিতে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে।
কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে একাধিকবার যুদ্ধ হয়েছে। এখন উভয়েই পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হয়েছে তবে ইতিহাস বলছে, ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তান আর ভারত স্বাধীনতা পাওয়ার আগে থেকেই কাশ্মীর নিয়ে বিতর্কের সূচনা হয়েছিল। ১৯৪৭ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের পাশতুন উপজাতীয় বাহিনীগুলোর আক্রমণের মুখে কাশ্মীরের তৎকালীন হিন্দু মহারাজা হরি সিং ভারতে যোগ দেওয়ার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, এবং ভারতের সামরিক সহায়তা পান। পরিণামে ১৯৪৭ সালেই শুরু হয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ।
উভয় দেশের এই যুদ্ধ চলেছিল প্রায় দুই বছর ধরে। এরপর কাশ্মীরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় ১৯৪৮ সালে, তবে পাকিস্তান সেনা প্রত্যাহার করতে অস্বীকার করে। তখন থেকেই কাশ্মীর কার্যত পাকিস্তান ও ভারত নিয়ন্ত্রিত দুই অংশে ভাগ হয়ে যায়।
অন্যদিকে ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের মধ্য দিয়ে চীন কাশ্মীরের আকসাই-চিন অংশটির নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে। আর তার পরের বছর পাকিস্তান কাশ্মীরের ট্রান্স-কারাকোরাম অঞ্চলটি চীনের হাতে ছেড়ে দেয়। সেই থেকে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তান, ভারত ও চীন এই তিন দেশের মধ্যে ভাগ হয়ে আছে।
Leave a Reply