ভারতে সংলঘুদের প্রতি কোনো বৈষম্য করা হয় না বলে দাবি করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
তিনি বলেন, আমাদের সংবিধান ও আমাদের সরকার প্রমাণ করেছে যে আমরাও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি। আমার সরকারের অধীনে জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও লিঙ্গের কোনো বৈষম্যের ঠাঁই নেই।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২২ জুন) মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই দাবি করেন।
ভারতে মুসলিম, হিন্দু দলিত, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য ও সাংবাদিকদের নির্যাতনের বিষয়ে অভিযোগ এনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অনেক মানাবাধিকার সংগঠন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর। মোদির মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠিও লিখেছেন ৭৫ জন মার্কিন আইনপ্রণেতা। তারা মোদির সাথে জনসমক্ষে বিষয়টি উত্থাপন করার জন্য অনুরোধও করেছিলেন।
পরে বাইডেন তাদের আশ্বস্ত করেন যে তিনি হোয়াইট হাউসে তাদের আলোচনার সময় মোদির সাথে মানবাধিকার ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিয়ে আলোচনা করবেন।
এরপর প্রেস কনফারেন্স করেন মোদি। সেখানে তার কাছে প্রশ্ন করা হয়, ‘আপনার দেশের মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের অধিকারের উন্নতি ও বাকস্বাধীনতা বজায় রাখার জন্য কী পদক্ষেপ নিতে ইচ্ছুক?’ জবাবে মোদি বলেন, তাদের উন্নতি করার দরকার নেই।
মোদির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
এদিকে মোদির সফরকে কেন্দ্র করে হোয়াইট হাউসের সামনে জড়ো হয় অনেক বিক্ষোভকারী। তাদের মধ্যে রয়েছে ভারতীয় আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিলের প্রতিবাদী ও অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর অজিত সাহি। তিনি বলেন, মোদির ভাবা উচিত কেন প্রেস ব্রিফিংয়ে মানবাধিকার নিয়েই তাকে প্রথম প্রশ্নটি করা হয়েছিল। এটা সবার কাছেই স্পষ্ট যে ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে।
ভারতীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান হিন্দুত্ব ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা রাকিব হামিদ নায়েক বলেন, ‘মোদির মন্তব্য- তার সরকারে ধর্মীয় বৈষম্যের ঠাঁই নেই- সম্পূর্ণ মিথ্যা। ভারত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য একটি কালো গহ্বরে পরিণত হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনকে মোকাবেলা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভারতের গুরুত্ব ও দেশগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ওয়াশিংটনের পক্ষে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে মানবাধিকারের সমালোচনা করা কঠিন করে তোলে।
মার্কিন কংগ্রেসের দুই মুসলিম নারী সদস্য প্রতিনিধি ইলহান ওমর এবং রাশিদা তালাইব প্রতিনিধি আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজের মতো অন্যান্য প্রগতিশীল আইন প্রণেতাদের সাথে নিয়ে বৃহস্পতিবার কংগ্রেসে মোদির ভাষণ বয়কট করেছেন। মূলত ভারতীয় ভিন্নমতাবলম্বী এবং সংখ্যালঘুদের – বিশেষ করে মুসলমান – ওপর নির্যাতনের অভিযোগ এনে মোদির ভাষণ বয়কট করেন তারা।
মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স বলেছেন, মোদির আক্রমনাত্মক হিন্দু জাতীয়তাবাদ ভারতের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য জায়গাকে সংকীর্ণ করে তুলেছে।
নরেন্দ্র মোদি দাবি করেছেন, ভারত সরকারের নীতির সুবিধা সকলের কাছেই পৌঁছাচ্ছে। তবে মানিবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, মোদি ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ভারতে ভিন্নমতাবলম্বী, সংখ্যালঘু এবং সাংবাদিকরা আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
সূত্র : রয়টার্স
Leave a Reply