রাত পোহালেই সিলেট সিটির পঞ্চম নির্বাচন। সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান প্রয়াত হয়েছেন, নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এবারের নির্বাচনের আট মেয়রপ্রার্থীর সবাই নতুন। বাকি সাত প্রার্থীর লড়াইয়ে স্পষ্টতই এগিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল। দলীয় ভোটই এই দুই প্রার্থীকে এগিয়ে রাখবে। তবে যেই নির্বাচিত হোন না কেন, সিলেট সিটি করপোরেশন পাচ্ছে নতুন নগরকর্তা।
গতকাল প্রচারের শেষদিনে ছিল বৃষ্টির প্রকোপ। দুপুর পর্যন্ত মাঠেই নামতে পারেননি প্রার্থীরা। রাতে দুই প্রার্থীই নির্বাচনী সভা করেছেন। এ ছাড়া দিনভর করেছেন নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক।
নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর অবিচল আস্থার কথা জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল। তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা আছে। তিনি সিলেটে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা আরও তুলে ধরবেন। আর নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে লাঙলের জয় সুনিশ্চিত।
শেষ সময়ে এসে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর অভিযোগ, বহিরাগতদের শহরে এনে নির্বাচনী পরিবেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এ ব্যাপারে তিনি গত শনিবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তার দাবি, সিলেটের মুরারীচাঁদ কলেজ ও সিলেট সরকারি কলেজের হোস্টেল ভোটের সময় বন্ধ রাখতে হবে, যাতে বহিরাগতরা সেখানে অবস্থান করতে না পারে।
জাপা প্রার্থী অভিযোগ করেন, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ আচরণ করছে না। এমনকি তার কোনো কথায় সাড়াও দিচ্ছে না। যার কারণে সিলেট সিটি নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং পরিস্থিতি নেই।
আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রচারে যোগ দিতে দেশের অন্য এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী এসেছেন সিলেট শহরে। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন ও শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ছাড়াও যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও নগরীতে প্রচার চালাচ্ছেন।
জাতীয় পার্টির প্রার্থীর প্রচারে দলটির স্থানীয় নেতাদের অনেককেই দেখা গেলেও জাতীয় পর্যায়ের উল্লেখযোগ্য নেতাদের দেখা যায়নি। বাবুলের বিরোধিতা করায় জাপার কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে বহিষ্কার করেছে দল।
আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিও এই দ্বন্দ্বে নির্বাচনে না থেকেও থেকে গেছে বিএনপি। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জন করলেও শেষ সময়ে এসে আবারও আলোচনায় বিএনপির ভোট। নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিএনপির প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী প্রার্থী হয়েছেন। তাদের ভোট দিতে ভোটাররা কেন্দ্রে আসবেন। এ ছাড়া নিবন্ধন হারানো রাজনৈতিক দল জামায়াতপন্থি ২০ নেতাকর্মী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জামায়াতের নেতাকর্মীরাও ভোট নিয়ে আগ্রহী। এই ভোটারদের পক্ষে টানার ছক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি।
প্রচারে এসে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বরিশাল সিটির ভোটের ফল প্রমাণ করে বিএনপির ভোটাররাও আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। সিলেটেও এমনটি হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। বিএনপির লোকজনও আনোয়ারুজ্জামানকে ভোট দেবেন।
নজরুল ইসলাম বাবুলও বিএনপি-জামায়াতের ভোট নিজের পক্ষে টানতে কাজ করছেন। বিএনপির শীর্ষনেতাদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ বিরোধিতা থেকে এই অংশের ভোটাররা লাঙলেই ভোট দেবেন বলে তার বিশ্বাস। সোমবার তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থীও পক্ষে কেউ নেই। মানুষ নৌকাবিরোধী, তারা লাঙলের পক্ষে।
তবে ভোটারদের নিয়ে আত্মবিশ্বাসী আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তিনি মনে করেন, সচেতন সিলেটের ভোটাররা নগরের উন্নয়ন করতে পারবেন এমন ব্যক্তিকেই ভোট দেবেন।
সিলেট সিটিতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫ জন। মোট কেন্দ্র ১৯০টি এবং ভোটকক্ষ ১ হাজার ৩৬৪টি।
সিসিক নির্বাচনকে সামনে রেখে মোট ১৯০ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৩২ কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)। এসএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) সুদীপ দাস বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দূরত্ব, কেন্দ্রে সীমানা প্রাচীর না থাকা এবং প্রার্থীদের মধ্যে বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতি ইত্যাদি বিবেচনায় এসব কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
Leave a Reply