1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৬:৩৭ অপরাহ্ন

বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনে পশ্চিমা চাপ বাড়ছে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০২৩

সুষ্ঠু, অবাধ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশের ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ বাড়ছে। তবে চীন ও রাশিয়া এই চাপকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছে। অপর দিকে ভারত মনে করে, প্রতিবেশী দেশগুলোতে নির্বাচনকে সামনে রেখে দিল্লির জাতীয় স্বার্থে প্রভাব ফেলে এমন কোনো পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কারো নেয়া উচিত নয়।

বাংলাদেশকে অবাধ নির্বাচনের সুযোগ করে দেয়ার জন্য কঠোর ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞা, বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করাসহ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দেশটির বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টির ছয় কংগ্রেসম্যানের চিঠি দেয়ার পর এবার একই ইস্যুতে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ছয় কংগ্রেসম্যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনের কাছে চিঠি লিখেছেন। গত ৮ জুন দেয়া চিঠিটি কংগ্রেসম্যান বিল কেটিং বুধবার তার টুইটার অ্যাকাউন্টে প্রকাশ করেছেন। চিঠিতে কংগ্রেসম্যানরা বলেছেন, বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আসার সাথে সাথে মানবাধিকার পরিস্থিতির আরো অবনতি হচ্ছে। এটি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জবাবদিহিতা নিশ্চিতে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর ও অন্যান্য সংস্থার প্রতি আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি।

গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও এই বাহিনীর সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়ে এই কংগ্রেসম্যানরা লিখেছেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এরপরও বাংলাদেশে দমনপীড়ন কমেনি। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ সংগঠন, মানবাধিকারকর্মী ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ আছে কি না, তা পররাষ্ট্র দফতর কিসের ভিত্তিতে পর্যালোচনা করবে, তা জানতে চেয়েছেন কংগ্রেসম্যানরা।
কংগ্রেসম্যান বিল কেটিং ছাড়াও চিঠিতে সই করেছেন জেমস পি ম্যাকগভার্ন, বারবারা লি, জিম কস্টা, ডিনা টাইটাস ও জেমি রাসকিন।
প্রসঙ্গত, র‌্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর ও অর্থ বিভাগের নিষেধাজ্ঞায় কক্সবাজারের একজন কাউন্সিলরকে ক্রসফায়ারে হত্যার ঘটনা গুরুত্বের সাথে এসেছিল। নিষেধাজ্ঞার আগে কংগ্রেসম্যানরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধে র‌্যাবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন।

কংগ্রেসম্যানদের সাম্প্রতিক লেখা চিঠিগুলো নিয়ে গতকাল ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র ম্যাথিও মিলার বলেন, কংগ্রেসের কাছ থেকে পাওয়া চিঠি নিয়ে আমরা সাধারণত মন্তব্য করি না। আমরা গোপনীয়তার সাথে এসব চিঠির জবাব দিয়ে থাকি। কোনো বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ থাকলে ব্যক্তিগতের পাশাপাশি প্রকাশ্যেও আমরা তার জানান দেব।

অন্য দিকে গত সোমবার একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয়জন সদস্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলকে চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে তারা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন পুনরুদ্ধারে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ইতোপূর্বে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানকে সমর্থন দিয়ে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই নীতির আওতায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা অবৈধ কাজে সহযোগীদের ভিসা ইস্যুর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনী। এ ব্যাপারে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু জানিয়েছেন, নির্বাচনে অনিয়মের জন্য নির্দেশদাতা ও নির্দেশপালনকারী উভয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা ক্ষেত্রে অযোগ্য বিবেচিত হবেন। যারা ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশে সহিংসতা, ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, ভোট কারচুপির সাথে জড়িত থাকবেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য বিবেচিত হবেন। একইভাবে এই ধরনের কাজে নিদের্শদাতাদেরও যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করতে দেয়া হবে না।

এ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থানের প্রতি দৃঢ়সমর্থন জানিয়েছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন গত বুধবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শক্ত অবস্থান নিয়ে শুধু বাংলাদেশের জনগণের পক্ষেই কথা বলেছেন না, তিনি কথা বলেছেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে উন্নয়নশীল বিশ্বের হয়ে।

এ ছাড়া ঢাকায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত অ্যাক্সেজেন্ডার মন্টিটাস্কি একটি বেসরকারি টিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। রাশিয়া সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন চায়। তবে কোনো দল নির্বাচন বর্জন করলে বাকি দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচন হতে পারে।
বাংলাদেশ নিয়ে চীনের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেইজে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে এই নীতির অনুসরণে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার সার্বভৌম অধিকারের প্রতি সবাই সম্মান দেখাবেন বলে আমরা আশা করি।
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ : ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান গত বুধবার বৈঠক করেছেন। বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের সাথে বাংলাদেশ ইস্যুতেও আলোচনা হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের ওপর সুনির্দিষ্ট ফোকাসসহ এশিয়াজুড়ে বেইজিংয়ের বিস্তৃত পদচারণা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া ভারতের প্রতিবেশী দেশসহ অন্যান্য আঞ্চলিক ইস্যু আলোচ্যসূচিতে ছিল।

বৈঠক সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ভারতের দুই প্রতিবেশী মালদ্বীপ ও বাংলাদেশে যথাক্রমে এই বছরের শেষের দিকে এবং পরের বছরের শুরুতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভারতের অভিমত, তার প্রতিবেশী দেশগুলোতে এমন কোনো উদ্যোগ নেয়া উচিত নয়, যা দিল্লির জাতীয় স্বার্থের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

ব্রিকসে যোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ : পশ্চিমা শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭ এর প্রতিযোগী হিসেবে গড়ে উঠা ব্রিকসে যোগ দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর ফলে ভূরাজনীতিতেও নতুন মেরুকরণ হচ্ছে। জেনেভায় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট মাতামেলা সিরিল রামাপোশার সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকালে বিষয়টি উত্থাপিত হওয়ায় শিগগিরই বাংলাদেশের ব্রিকসের সদস্যপদ পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর সাথে জেনেভা সফরে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন সাংবাদিকদের দেয়া ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান। তিনি বলেন, ব্রিকসে বর্তমানে পাঁচ সদস্য রয়েছে। তারা হলো- চীন, রাশিয়া, ভারত, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ভবিষ্যতে আরো আটটি দেশের সদস্য পদ পাবে। দক্ষিণ আফ্রিকায় আগামী আগস্টে ব্রিকস সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী এতে যোগ দেবেন। আমন্ত্রিত অন্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইন্দোনেশিয়া।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com