করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশে একবার ব্যবহার করা প্লাস্টিক বর্জ্যরে পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে বছরে ৮ লাখ ২১ হাজার ২৫০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর ৪০ শতাংশ, অর্থাৎ ২ লাখ ২৮ হাজার টনের মতো রিসাইকেল বা পুনঃব্যবহার হয়। বাকি বর্জ্য পরিবেশে পড়ে থাকে। নদী ও পরিবেশে মেশা এসব বর্জ্য মাছ ও প্রাণীর শরীরে ঢুকে পড়ছে। এসব রোধে সরকার একটি বিধান করতে যাচ্ছে, যাতে যারা বর্জ্য উৎপাদন করবে তারাই উৎস থেকে সেটি ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করবে। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশের যে বর্জ্য উৎপন্ন হয়, তার ৩০ শতাংশের বেশি হয় রাজধানী ঢাকায়। এই শহরে দিনে ৬৮১ টনের মতো বর্জ্য উৎপন্ন হয়। সারাদেশের মানু বছরে মাথাপিছু ৯ কেজি বর্জ্য উৎপন্ন করলেও রাজধানীতে এটি দ্বিগুণ বা ১৮ কেজি।
সরকার ২০১৬ সালের মধ্যে একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক বন্ধের পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এ ধরনের প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
পাট থেকে তৈরি করা ব্যাগ বাজারজাত শুরু করা গেলে ঢাকায়ও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব হবে বলে জানান পরিবেশমন্ত্রী। তিনি বড় বড় শপিংমলে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার না করে ক্রেতাদের কাছ থেকে দাম নিয়ে কাগজের ব্যাগ দেওয়ার অনুরোধ জানান।
তবে পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন করা হলেও, কার্যকর প্রয়োগের অভাবে প্লাস্টিক দূষণ উদ্বেগজনক রয়েছে বলে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, প্লাস্টিক দূষণের কারণে আমাদের বাস্তুতন্ত্র ও ভূমির ব্যাপক দূষণ ঘটায় গাছপালা ও অন্যান্য প্রাণীর অস্তিত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন। এ ছাড়া জৈব রাসায়নিক সারে প্রচুর পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকায়, তা কৃষিকাজে ব্যবহারের ফলে স্থায়ীভাবে মাটি দূষিত হচ্ছে। তিনি প্লাস্টিক বর্জ্য সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বিধিমালা প্রণয়ণের পাশাপাশি প্লাস্টিকের পরিবেশবান্ধব প্রাকৃতিক বিকল্প উৎপাদনে প্রণোদনা ও উৎসাহ প্রদানের তাগিদ দেন।
প্লাস্টিক দূষণ রোধে নতুন একটি বিধানের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ। তিনি জানান, সরকার এমন একটি বিধান করতে যাচ্ছে, যাতে যারা বর্জ্য উৎপাদন করবে তারাই উৎস থেকে সেটি ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করবে।
এদিকে এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভারত ও মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের ১৮টি আন্তঃসীমান্ত নদীতে প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার ৩৪৫ টন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক প্রবেশ করে। প্রতি বছর বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করছে প্রায় অর্ধ মিলিয়ন টন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য। গত ২০ নভেম্বর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডো গবেষণার এ ফলাফলটি প্রকাশ করেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে ‘প্লাস্টিক দূষণ সমাধানে শামিল হই সকলে’ প্রতিপাদ্য এবং ‘সবাই মিলে করি পণ, বন্ধ হবে প্লাস্টিক দূষণ’ সেøাগানে আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে আজ সকালে গণভবনে বৃক্ষরোপণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে হবে পরিবেশ দিবসের অনুষ্ঠান। এতে বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন ২০২২, পরিবেশ পদক ২০২২, বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার ২০২১ এবং সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের লভ্যাংশের চেক বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া শেরেবাংলা নগরে ৫ থেকে ১১ জুন পর্যন্ত পরিবেশ মেলা এবং ৫ থেকে ২৬ জুন ও ১ থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত বৃক্ষমেলা চলবে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।
Leave a Reply