প্যারিসের ক্লাবে শেষটা ভালো হলো না লিওনেল মেসির। ম্যাচ শেষে মওসুমের সব থেকে বেশি অ্যাসিস্ট (গোলের পাস দেয়া) করার পুরস্কার হয়তো তিনি পেলেন, কিন্তু শেষ ম্যাচে গোলের পাস বাড়াতে পারলেন না। নষ্ট করলেন সহজ সুযোগ। দেখে মনে হচ্ছিল, সত্যিই এই ক্লাবে আর মন নেই মেসির। শুধু মেসি কেন, পিএসজির সব ফুটবলারকেই যেন ক্লান্ত দেখাল। অন্য দিকে ক্লেরমঁ দাপটে খেলল। ফরাসি লিগ জয়ী দলের বিরুদ্ধে পিছিয়ে পড়েও আক্রমণ কমাল না তারা। তার ফলও পেল। শেষ ম্যাচে ঘরের মাঠে ২-৩ গোলে হেরে মাঠ ছাড়তে হলো মেসিদের।
মঞ্চ ছিল মেসির বিদায়ের। মঞ্চ ছিল সের্খিয়ো র্যামোসের বিদায়েরও। কিন্তু ওই মঞ্চ শুধু আর মেসি বা র্যামোসে থেমে থাকল না, সেখানে থাকলেন আরো একজন। সের্খিয়ো রিকো। গোটা মরসুমে প্যারিস সঁ জরমঁ-র হয়ে একটি ম্যাচও খেলেননি তিনি। তবুও তিনি থাকলেন। কারণ, দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি রিকো। এই সময়ে তার পাশে সতীর্থরা। মেসি, এমবাপ্পেরা সবাই রিকোর নাম লেখা জার্সি পরে খেললেন। গোটা মাঠজুড়ে দেখা গেল রিকোর টিফো।
খেলা শুরু হওয়ার আগে পার্ক দ্য প্রিন্সেসে উৎসবের পরিবেশ। সন্তানদের নিয়ে মাঠে নামলেন মেসি, র্যামোসরা। খেলার শুরুটা বোধহয় হালকা চালেই শুরু করেছিল পিএসজি। ম্যাচের ৫ মিনিটেই পিএসজির জালে বল জড়িয়ে দেন ক্লেরমঁ-র স্ট্রাইকার গ্রেজন কিয়েই। কিন্তু তার আগেই রাশানি হ্যান্ডবল করায় ভারের নির্দেশে বাতিল হয় সেই গোল।
১০ মিনিটের পর নিজেদের খেলা শুরু করে পিএসজি। প্রান্ত ব্যবহার করে আক্রমণে উঠতে শুরু করে তারা। বল পায়ে বেশি পেতে শুরু করেন মেসি। ১৫ মিনিটের মাথায় মেসির পাসে গোল করার সুযোগ ছিল এমবাপের। ভাল বাঁচান ক্লেরমঁ-র গোলরক্ষক। কিন্তু পরের মিনিটেই ভিটিনহার ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে পিএসজিকে এগিয়ে দেন র্যামোস। ক্লাবের হয়ে নিজের শেষ ম্যাচে গোল করলেন তিনি।
তিন মিনিট পরেই আশরফ হাকিমিকে ফাউল করায় পেনাল্টি পায় পিএসজি। স্পট থেকে মওসুমের ২৯তম গোল করেন এমবাপ্পে। তার পরেই রিকোর জার্সি তুলে ধরে উল্লাস করতে দেখা যায় তাকে। ২১ মিনিটের মাথায় প্যারিসের রক্ষণের ভুলে এক গোল শোধ করে ক্লেরমঁ। ভেরাত্তির দুর্বল ব্যাক পাস গোলরক্ষক ডোনারুমার কাছে যাওয়ার আগেই গোল করে দেন জোহান গাস্টিয়েন।
প্রথমার্ধে মাঝেমধ্যেই চোখে পড়ছিল পিএসজি-র রক্ষণের দুর্বলতা। একবার কোনো রকমে পরিস্থিতি সামলান ডোনারুমা। ৩৬ মিনিটের মাথায় একিটিকে হ্যান্ডবল করায় পেনাল্টি পায় ক্লেরমঁ। কিয়েই ওই বল বাইরে মারেন। ৪১ মিনিটে মেসির ফ্রিকিক একটুর জন্য বেরিয়ে যায়। প্রথমার্ধের বিরতিতে যাওয়ার ঠিক আগেই ক্লেরমঁ-র হয়ে দ্বিতীয় গোল করেন মেহেদি জিফান। মোহম্মদ চানের শট ডোনারুমা বাঁচিয়ে দিলেও ফিরতি বলে গোল করেন জিফান।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটা ক্লেরমঁ ভালো করলেও ৫৩ মিনিটের মাথায় ম্যাচের সহজতম সুযোগ পেয়েছিলেন মেসি। প্রতিআক্রমণ থেকে ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ফাঁকায় থাকা মেসিকে বল বাড়ান এমবাপ্পে। মেসির বাঁ পায়ের শট বার উঁচিয়ে চলে যায়। যে জায়গা থেকে তিনি চোখ বন্ধ করে গোল করতে পারেন, সেখান থেকেই গোল নষ্ট করলেন মেসি। ৫৮ মিনিটের মাথায় মেসির শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে বাঁচান প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক। ক্লেরমঁ হাই প্রেসিং ফুটবল খেলছিল। প্রতিটা বলের জন্য তাড়া করছিলেন ফুটবলাররা। তার ফল পায় ক্লাব। ৬৩ মিনিয়ে কিয়েই দলের তৃতীয় গোল করেন। এগিয়ে যায় ক্লেরমঁ।
ম্যাচের সংযুক্তি সময়ে ফ্রিকিক থেকে সমতা ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিলেন মেসি। কিন্তু তার বাঁ পায়ের শট ঝাঁপিয়ে বাঁচিয়ে দেন ক্লেরমঁ-র গোলরক্ষক। অনেক চেষ্টা করেও গোলের মুখ খুলতে পারেননি মেসি, এমবাপ্পেরা। ফলে শেষ ম্যাচ হেরে মাঠ ছাড়তে হলো তাদের।
কয়েক দিন আগেই পিএসজি কোচ ক্রিস্টোফ গালটিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন, এটিই ক্লাবের জার্সিতে মেসির শেষ ম্যাচ। ওই ম্যাচ খেলে ফেললেন তিনি। এর পরে তিনি কোথায় যাবেন তা এখনো নিশ্চিত নয়। সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলাল ও মেজর সকার লিগের ইন্টার মায়ামি মেসিকে প্রস্তাব দিয়েছে। মেসির প্রাক্তন ক্লাব বার্সোলানোও মেসিকে নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। তাদের সাথে কথা বলছেন, মেসির বাবা ও এজেন্ট জর্জে। তবে প্যারিসে শেষটা ভালো হলো না মেসির। বিদায়বেলায় জয়ের স্বাদ পেলেন না তিনি।
Leave a Reply