1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪২ পূর্বাহ্ন

বিশাল লক্ষ্যমাত্রা পূরণে চাপে থাকবে এনবিআর

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৩ জুন, ২০২৩

২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) রাজস্ব আহরণে বিশাল লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, এনবিআরকে আগামী অর্থবছরে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করতে হবে, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৬০ হাজার কোটি টাকা বেশি। এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে অনেক নিত্যপণ্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়েছে, আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ব্যয় করতে পারছেন না অনেকে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক দুই দিক থেকেই চাপ বাড়ছে এবং পরিস্থিতির শিগগিরই পরিবর্তন হবে এমন লক্ষণও নেই। এমন পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরের বিশাল এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয় বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তারা এনবিআরকে রাজস্ব আহরণের জন্য বাস্তবসম্মত লক্ষ্যমাত্রা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজস্ব আহরণে এনবিআরের জন্য মহাচাপের। গত কয়েক অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরকে একটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। কিন্তু তার কোনো নির্দেশনা থাকে না।

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলের উপনেতা জিএম কাদের বলেন, রাজস্ব আহরণে যে বিশাল লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে তা আদায়যোগ্য হবে না। শেষ পর্যন্ত এই বাজেট কার্যকর হবে না।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমদানিকৃত পণ্যের মূল্যস্ফীতি, নিম্নআয়ের ও নিম্নবিত্ত মানুষের ক্রয়ক্ষমতার অবনমন এবং করোনাভাইরাস পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয়তার নিরিখে বাজেট ২০২৩-২৪ ব্যতিক্রমী হয়নি বরং নিষ্প্রভ মনে হয়েছে।

নানা কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে আমদানি পণ্যের দাম বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রা বিশেষ করে মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধি। এই মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ নিয়ন্ত্রণে পথনকশা নেই বাজেটে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানি-রপ্তানির গতি শ্লথ, দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবসাবাণিজ্যে সেই রকম নেই গতি। মানুষের আয় কমে গেছে। ফলে এনবিআরের পক্ষে লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন হবে। সব মিলিয়ে অর্থবছরে পুরো সময়ই রাজস্ব আহরণে চাপে থাকবে। বিশ^ অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অনেকটা অসম্ভবই।

অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, বাস্তবতার আলোকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন।

বাজেটে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকের যেসব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তাকে উচ্চভিলাষী এবং বাস্তবসম্মত নয় বলেও মন্তব্য করেছে সিপিডি। রাজস্ব আহরণে যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে, তা-ও আদায়যোগ্য নয়। বিদায়ী অর্থবছরেও বড় ঘাটতি থাকবে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, আগামী অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশ ধরা হয়েছে। আবার ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপির অনুপাতে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ ছিল ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগ বাড়িয়ে ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু চলতি অর্থবছরে দেশের অর্থনীতি যেভাবে চলছে, সে আলোকে এসব লক্ষ্যমাত্রাকে উচ্চাকাক্সক্ষী বলে মনে হয়েছে।

এসব অনুমিতিগুলোর সঙ্গে বাস্তবতার আসলে কোনো মিল নেই উল্লেখ করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, এসব লক্ষ্য অর্জন করা অনেক কঠিন হবে এবং শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হবে না বলে আমার ধারণা। চলমান সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো পুরোপুরি অনুধাবন করতে এবং সে অনুযায়ী সমাধান খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে বাজেটে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেই। আমরা মনে করি, বাজেটে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা দিয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, এই টার্গেট বাস্তবভিত্তিক নয়। বিশাল ঘাটতি থাকবে আগামী বছরও। জিডিপিতে করের অবদান (কর-জিডিপি অনুপাত) আগামী বছর না বেড়ে আরও কমে যাবে।

জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এনবিআরকে চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে হবে। ফলে প্রতিদিন এনবিআরকে ১ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে হবে। এর মধ্যে আয়কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে ৩২ হাজার ২৪০ কোটি টাকা বেশি। মূল্য সংযোজন কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে ২২ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা বেশি। এতে সব মানুষের ওপর করের চাপ বাড়বে বলে মনে করে বিশ্লেষকরা। সম্পূরক শুল্ক আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬০ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা, যা চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে ২ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা বেশি। আমদানি শুল্কের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার ১৫ কোটি টাকা, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে ২ হাজার ২১ কোটি টাকা বেশি। রপ্তানি শুল্কের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৬ কোটি টাকা, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে ৩ কোটি টাকা বেশি। আবগারি শুল্কের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে ৪৫২ কোটি টাকা বেশি। অন্যান্য কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে ৪৬০ কোটি টাকা বেশি।

রাজস্ব আহরণে তিন খাতেই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। মধ্যবিত্তদের ওপর চাপটা থাকবে বেশি। তবে এ চাপ এনবিআরের জন্যও কম নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংস্কার ছাড়াই বিপুল রাজস্ব আদায় বরাবরের মতো এবারও চাপে থাকতে হবে এনবিআরকে। এ ছাড়া বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আহরণের জন্য যে ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তন, নীতি সংস্কার এবং অন্যান্য সক্ষমতা থাকা দরকার, তার সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রা অনেক বেশি অসঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে করেন তারা। ভ্যাট আইন চালুর পরও সম্পূরক শুল্ক এবং নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের কথা ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। ফলে ভ্যাটের পুরো চাপ জনগণের ওপর আসবে।

যদিও রাজস্ব আহরণের এই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিশাল অংকের রাজস্ব আহরণে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ভিশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ‘স্মার্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ড’ গঠনের দিকে নজর দিয়েছেন তিনি।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেছেন, প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের কর আদায়ের লক্ষ্য পূরণ চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আমার কাছে মনে হয়েছে, ২০৪১ সাল এবং এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনকে মাথায় রেখে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে চ্যালেঞ্জ অবশ্যই আছে, কালেকশনটা চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com