1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৫ অপরাহ্ন

৫২ হাজার কোটি টাকার মুনাফা থেকে বঞ্চিত ব্যাংক

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০২৩

ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। কিন্তু বছরের পর বছর তা পরিশোধ করছেন না। এমন ব্যবসায়ীদের কারণে ব্যাংকিং খাতে বেড়ে যাচ্ছে মন্দ মানের খেলাপি ঋণ। আর এ খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোর মুনাফা কমে যাচ্ছে। বাড়ছে লোকসানী ব্যাংকের সংখ্যা। যে পরিমাণ আয় হচ্ছে তা দিয়ে অনেক ব্যাংক খেলাপি ঋণের বিপরীতে মূলধন ঠিক রাখতে প্রভিশন সংরক্ষণও করতে পারছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, শুধু মন্দ মানের খেলাপি ঋণের কারণে ডিসেম্বের শেষে ৫২ হাজার কোটি টাকার মুনাফা ব্যাংকগুলো আয় খাতে নিতে পারেনি। আয় কমে যাওয়ায় ৭ ব্যাংকের ২০ হাজার কোটি টাকার প্রভিশন ঘাটতির মুখে পড়েছে। এর ফলে এক দিকে ব্যাংকগুলোর মুনাফার পরিমাণ কমে যাচ্ছে পাশাপাশি শেয়ার হোল্ডাররাও বছর শেষে প্রকৃত লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পাশাপাশি টাকা আটকে যাওয়ায় ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে।

গত ৩১ মার্চভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকাই মন্দ ঋণ। এ হিসেবে ১০০ টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে প্রায় ৮৭ টাকাই মন্দ ঋণ, যা আদায় অযোগ্য বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, এ মন্দ ঋণের বিপরীতে সুদ আয় স্থগিত করে রাখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী মন্দ ঋণের বিপরীতে ধার্যকৃত সুদ ব্যাংকগুলোর আয় খাত থেকে আলাদা করে রাখা হয়। অপর দিকে এ ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর আয় খাত থেকে টাকা এনে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হয়।

মন্দ ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এক শ্রেণীর বড় গ্রাহক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা আর পরিশোধ করছেন না। বছরের পর বছর আটকে রাখছেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু এসব মামলা বছরের পর বছরই নিষ্পত্তি হচ্ছে না। অপর দিকে হলমার্ক, বেসিক ব্যাংক, জনতা ব্যাংকসহ বেশ কিছু ব্যাংকে বড় বড় ঋণ কেলেঙ্কারি হয়েছে। বেসিক ব্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারি হয়েছে। এসব ঋণ দীর্ঘ দিন যাবত অনাদায়ি রয়েছে। মূলত ঋণকেলেঙ্কারি বেড়ে যাওয়াই মন্দ ঋণ বেড়ে গেছে। মন্দ ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংক আদালতে মামলা করে থাকে। কিন্তু আইনগত জটিলতায় তা বছরের পর বছর অনাদায়ি থাকে। এসব ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানত নেয়া হয়নি।

দেশের প্রচলিত বিধান অনুযায়ী কোনো নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধের সীমা উত্তীর্ণ হওয়ার ৬ মাস অতিক্রান্ত হলে তা শ্রেণীকৃত ঋণ বা খেলাপি ঋণ হিসেবে ধরা হয়। এ খেলাপি ঋণকে ব্যাংকিং ভাষায় সাব স্ট্যান্ডার্ড বা নিম্নমান ঋণ বলা হয়। এ ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে ২০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়। ঋণের কিস্তি পরিশোধের সীমা উত্তীর্ণ হওয়ার ৯ মাস অতিক্রান্ত হলে তা সন্দেহজনক ঋণ হিসেবে ধরা হয়। এ ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে ৫০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়। আবার ঋণের কিস্তি পরিশোধের সীমা ৯ মাস অতিক্রান্ত হলে তা মন্দ ঋণ হিসেবে ধরা হয়। এ মন্দ ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হয়।

জানা গেছে, মন্দ ঋণ ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ হিসাবে ধরা হয়। আর এ ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে ১০০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়। প্রভিশন ঘাটতি হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ব্যাংকগুলোর জরিমানা বা তিরস্কার গুনতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তিরস্কার বা জরিমানার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ব্যাংকের আয় খাত থেকে টাকা এনে প্রভিশন ঘাটতি পূরণ করে থাকে।
পাশাপাশি মন্দ ঋণের বিপরীতে অর্জিত সুদ ব্যাংকগুলোর আয় খাতে স্থানান্তর করা হয় না। অর্জিত সুদ ব্যাংকের আলাদা হিসাবে স্থগিত করে রাখা হয়। গত ৩১ মার্চভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকিং খাতের ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার মন্দ ঋণের বিপরীতে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকার সুদ আয় খাতে আনা যায়নি। এটা ব্যাংকের আলাদা হিসেবে রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে ৩১ মার্চ প্রান্তিকে বেশি সুদ স্থগিত করা হয়েছে সরকারি মালিকানাধীন ৬ ব্যাংকের। ব্যাংক ৬টিতে আলোচ্য সময়ে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকাই মন্দ ঋণ রয়েছে। এর বিপরীতে প্রায় ২৪ হাজার টাকার সুদ আয় স্থগিত করে রাখা হয়েছে।

৪২টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক আলোচ্য সময়ে খেলাপি ঋণ রয়েছে প্রায় ৬৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫৩ হাজার ১৮১ কোটি টাকাই মন্দ ঋণে পরিণত হয়েছে। মন্দ ঋণের বিপরীতে আলোচ্য সময়ে সুদ স্থগিত করা হয়েছে ২৫ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। অপর দিকে ৯ বিদেশী ব্যাংক আলোচ্য সময়ে ৩ হাজার ৪১ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের বিপরীতে সুদ আয় স্থগিত করেছে ৪১৭ কোটি টাকা। আর ২টি বিশেষায়িত ব্যাংক সুদ স্থগিত করেছে ১ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা।
এ দিকে ৩১ মার্চভিত্তিক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, খেলাপি ঋণের আধিক্যের কারণে মুনাফা দিয়েও ৭ ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারেনি। ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ২০ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের সর্বোচ্চ প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ৭ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। এর পরেই বেসিক ব্যাংকের ৪ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। অগ্রণী ব্যাংকের ৪ হাজার ১০ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ৩ হাজার ৮০ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৩৬০ কোটি টাকা, ঢাকা ব্যাংকের ৪৯৭ কোটি টাকা এবং স্যানপার্ড ব্যাংকের ১৫৯ কোটি টাকার প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com