1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০২ অপরাহ্ন

আল কুরআনে কলম প্রসঙ্গ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০২৩

কলম আল্লাহর সেরা সৃষ্টি। তিনি মানবজাতিকে ‘জ্ঞান’ ও ‘হিকমাহ’ শিক্ষা দেয়ার জন্য শিক্ষার সাথে সাথে শিক্ষা উপকরণও সৃষ্টি করেছেন। কলম শিক্ষা উপকরণগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বপ্রথম। জ্ঞান-বিজ্ঞান, তথ্যাবলি ও উপাত্তগুলো সংরক্ষণের প্রয়োজনে আল্লাহ তায়ালা কলম সৃষ্টি করেছেন। জগৎগুলোর স্রষ্টা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ‘আলিম’। আলামিন তথা জগৎগুলোর সবকিছুর জ্ঞান কেবল তিনিই রাখেন। তিনিই সবধরনের জ্ঞানের ধারক ও সংরক্ষক। কেউই তাঁর সমকক্ষ নয়। তাঁর এত প্রভাব প্রতিপত্তি ও ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তাঁর সৃষ্টিকৌশল হিসেবে সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুক মানবজাতির প্রয়োজন ও কল্যাণে তিনি কলম সৃষ্টি করেছেন। কলম মানবজাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ, যেমনটি জ্ঞান। জ্ঞানের প্রকাশ ও বিকাশ মূলত কলম ব্যবহারের মধ্য দিয়ে সাধিত হয়। জ্ঞানের বাহন বই-পুস্তক কলমের সাহায্যে লিখা হয়। যদিও বর্তমান জামানায় কম্পিউটার কিবোর্ড প্রয়োগে লিখা হয়। এক কথায় লিখনী কার্যক্রমের সূচনা হয়েছে কলম সৃষ্টির মধ্য দিয়ে।

কলমকে মানবজাতির প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে বড় নিয়ামত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মানবজাতির উন্নতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় কলমের ভূমিকা অপরিসীম। মানুষ যা পড়ে বা বলে কিংবা মুখস্থ করে তা মানুষের হৃদয়ে গ্রোথিত হয়, এ সংরক্ষণ কেবল নির্দিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। যদি পড়া বলার সাথে সাথে লেখা হয় তবে সে সংরক্ষণ সুদৃঢ় সংরক্ষণ হিসেবে পরিগণিত হয়। ব্যক্তি পর্যায়ের এ সংরক্ষণ পদ্ধতি জাতীয় সংরক্ষণ হিসেবেও অনেকসময় বিবেচিত হয়। কেননা, একজন গবেষক যখন তার গবেষণালব্ধ জ্ঞান, তথ্য-উপাত্তকে লিখিত আকারে উপস্থাপন করেন তখন সেটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে সংরক্ষণ করে। জাতির কল্যাণে বই-পুস্তক, নানাবিধ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থগুলো রচনাকালে কলমের সাহায্যে লিখিত হয়। প্রাচীন বা আধুনিক কিংবা অত্যাধুনিক যুগসহ সব যুগে কলমের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন ঐতিহাসিক জ্ঞান-বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য, গণিত, চিকিৎসা, সমরবিষয়ক গ্রন্থাবলি কখনো কাগজের ছত্রে, কখনো শিলালিপি, কিংবা পাথর খোদাই, কাঠ বা চামড়াতে লেখা হয়। লিখতে গিয়ে তখন ব্যবহার করা হয় সমকালীন যুগ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে নির্মিত কলম।

পবিত্র কুরআন ও হাদিসে কলম শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়। আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে চার স্থানে কলম শব্দের উল্লেখ করে বলেন- ‘‘পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ থেকে। পড়, আর তোমার প্রভু অতিশয় মহিমান্বিত, যিনি তালিম (শিক্ষা) দিয়েছেন কলমের সাহায্যে। তালিম দিয়েছেন ইনসানকে (মানুষকে) যা সে জানত না।’’ (সূরা আলাক : ১-৫) তিনি আরো বলেন- ‘এটি অদৃশ্য বিষয়ের সংবাদ যা তোমাকে ওহি দিয়ে অবহিত করছি।

মারইয়ামের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব তাদের মধ্যে কে গ্রহণ করবে এর জন্য যখন তারা তাদের কলম নিক্ষেপ করছিল তুমি তখন তাদের কাছে ছিলে না এবং তারা যখন বাদানুবাদ করছিল তখনো তুমি তাদের কাছে ছিলে না।’ (সূরা আলে ইমরান-৪৪) তিনি আরো বলেন- ‘পৃথিবীর সব বৃক্ষ যদি কলম হয় আর সমুদ্র হয় কালি ও এর সাথে আরো সাত সমুদ্র যুক্ত হয়, তবুও আল্লাহর বাণী নিঃশেষ হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা লোকমান-২৭) আল্লাহ তায়ালা স্বতন্ত্রভাবে সূরার নামকরণ করেছেন ‘কলম’ নামে। তিনি এ সূরার প্রথমার্ধে বলেন- ‘নুন, শপথ কলমের এবং সেই বিষয়ের যা তারা লিপিবদ্ধ করে’। (সূরা আল কলম-০১)

তাফসিরে বর্ণিত রয়েছে- ‘আল্লাহ সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেন এবং তাকে লেখার নির্দেশ দেন। সে মতে কলম কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে, সব লিখে ফেলে। এ কিতাব আল্লাহর কাছে আরশে রক্ষিত আছে।’ (তাফসিরে কুরতুবি) হজরত উবাদা ইবনে ছামিত রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর কলমকে বললেন, লেখো। কলম বলল, হে প্রভু! কী লিখব? আল্লাহ বললেন, ‘লেখো ইতঃপূর্বে যা হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত যা কিছু হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ-২২৭০৭)

উল্লেখ্য, কলম তিন ধরনের- ১. আল্লাহর কুদরতি হাতে সৃষ্ট কলম, আল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন- ‘যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলমের সাহায্যে’। (সূরা আলাক-৪); ২. ফেরেশতাদের কলম, যে কলম দিয়ে তারা মানুষের আমলনামা লিখে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন- ‘কিয়ামতের দিন আমি তাকে একটি কর্মলিপি বের করে দেবো এবং সে তা খোলা অবস্থায় পাবে ও বলা হবে, তোমার আমলনামা পড়ে দেখো, আজ তুমিই তোমার নিজের হিসাবের জন্য যথেষ্ট।’ (সূরা বনি ইসরাঈল : ১৩-১৪); ৩. সাধারণ কলম, মানুষ যে কলম দিয়ে জ্ঞানবিষয়ক কোনো কিছু লেখে। এ প্রসঙ্গে তাফসিরে এসেছে- হজরত কাদাতাহ রা: বলেন, ‘কলম আল্লাহ তায়ালার একটি বড় নিয়ামত। কলম না থাকলে কোনো ধর্ম প্রতিষ্ঠিত থাকত না এবং দুনিয়ার কাজকারবারও সঠিকভাবে পরিচালিত হতো না।’ হজরত আলী রা: বলেন, ‘এটি আল্লাহ তায়ালার একটি বড় কৃপা যে, তিনি তাঁর বান্দাকে অজ্ঞাত বিষয়গুলোর জ্ঞান দান করেছেন এবং তাদের মূর্খতার অন্ধকার থেকে জ্ঞানের আলোর দিকে বের করে এনেছেন। তিনি মানুষকে লিখন বিদ্যায় উৎসাহিত করেছেন। কেননা, এর উপকারিতা অপরিসীম। আল্লাহ ছাড়া কেউ তা গণনা করে শেষ করতে পারে না। যাবতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান, পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের ইতিহাস, জীবনালেখ্য ও উক্তি, আল্লাহ তায়ালার অবতীর্ণ কিতাবগুলো সবই কলমের সাহায্যে লিখিত হয়েছে এবং পৃথিবীর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অক্ষয় হয়ে থাকবে। কলম না থাকলে ইহকাল ও পরকালের সব কাজকর্মই বিঘিœত হবে।’ (তাফসিরে মা’আরিফুল কুরআন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা : ২৪-২৫)

কলম মানবজাতির প্রতি আল্লাহর দেয়া আমানত। মানবজাতি এর সাহায্যে দুনিয়া ও আখিরাতের প্রভূত কল্যাণ লাভ করে থাকে। কলমের ব্যবহার স্বাভাবিক দু’ভাবে হয়ে থাকে। একটি হলো সদ্ব্যবহার আরেকটি হলো অসদ্ব্যবহার। ন্যায়নীতি ও কল্যাণের কাজে যার কলম ব্যবহৃত সে ব্যক্তি উত্তম। আর যার কলম অন্যায়, দুর্নীতি, ষড়যন্ত্র ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয় সে ব্যক্তি অসৎ ও অধম। কিরামান কাতিবিনের কলমে মানুষের ভালোমন্দ সবকিছুই ‘আমলনামা’ নামীয় বিশেষ সংরক্ষিত কিতাবে লিখা হয়। মানবসৃষ্ট সাধারণ কলম অন্যায়ভাবে ব্যবহৃত হলেও আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাদের কলম সর্বদা সঠিক ও ন্যায়সঙ্গত কাজে ব্যবহৃত হয়। মানুষের তৈরি কলম নষ্ট হতে পারে, হারাতে পারে, সংস্করণ বা ডিজাইনের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হতে পারে; কিন্তু আল্লাহর কুদরতি কলম সর্বদা অপরিবর্তনীয়, সব ধরনের ত্রুটিমুক্ত। আল্লাহর কলমের প্রকৃত রূপ কেমন তা জগতের মানুষ কোনোকালেই অনুমান করতে অপারগ।

লেখক :

  • মো: আবদুল গনী শিব্বীর

মুহাদ্দিস, নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদরাসা, সোনাপুর, সদর

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com