করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে একযোগে পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেশনজট এড়াতে এ ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া করোনার এই সময়ে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে নিতে বিকল্প ব্যবস্থায় ক্লাস চালু রাখারও চিন্তা করা হচ্ছে। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রীর সাথে বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের প্রধানদের অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে শিক্ষাকার্যক্রম। ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত কয়েক কোটি শিক্ষার্থী। করোনার কারণে স্থগিত করা হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষা। গত ২ এপ্রিল এ পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। কবে নেয়া হবে সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। অন্য দিকে প্রাথমিক স্কুলের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। একই সাথে মাধ্যমিক পর্যায়ের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর ষাণ¥াষিক পরীক্ষাও নেয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় শিক্ষার্থীরা যাতে পাঠ্যবই থেকে দূরে সরে না থাকে সে জন্য প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শ্রেণীর আলাদা আলাদা ক্লাস নেয়া হচ্ছে সংসদ টিভিতে। এ দিকে কলেজ এবং সরকারি ও বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যও অনলাইনে ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীদের জন্য টিভি বা অনলাইনে ক্লাস চালু রাখার উদ্দেশ্য হলো, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যাতে সব শ্রেণীর পরীক্ষার আয়োজন করা যায়। একই সাথে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকেও আগাম ঘোষণা দেয়া হয়েছে স্কুল খোলার ১৫ দিনের মধ্যেই এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেয়া হবে।
এ দিকে গতকাল রোববার জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের অধিভুক্ত দুই হাজার দুইশত ৬০টি কলেজকে তাদের পাঠকার্যক্রম অনলাইনে চালানোর নির্দেশনা দিয়েছেন ভিসি প্রফেসর ড. হারুন অর রশিদ। নির্দেশনায় তিনি বলেছেন সব ক্লাস এখন থেকে অনলাইনে চালু করতে হবে। যাদের অনলাইন সেবা চালু নেই তাদেরকে অবিলম্বে এর আওতায় আসতে হবে। শিক্ষার্থীদেরও এই সেবার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তিনি আরো জানিয়েছেন অনলাইনে পাঠকার্যক্রম চালু রাখতে হবে এ জন্য যে, করোনা চলে গেলে স্বাভাবিক পরিবেশে সব কলেজ বা বিশ^বিদ্যালয় কম সময়ের মধ্যেই যাতে পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে ওপরের ক্লাসে প্রমোশন দিতে পারেন। এতে সেশনজট হবে না।
অন্য দিকে দেশের ১০৫টি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় তাদের পাঠকার্যক্রম অনলাইনে চালুর অনুমতি পেয়েছে। যদিও বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কিছু বিশ^বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে নামেমাত্র পরীক্ষা নিয়ে সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের অনলাইনে পাঠ, পরীক্ষা ও ভর্তি কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। পরে গত ৩০ এপ্রিল ত্রিপক্ষীয় এক সভার পর শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি কয়েকটি শর্তে বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়গুলোকে অনলাইনে কার্যক্রম চালনার অনুমতি দিয়েছেন। বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন জানান, এখন আমরা অনলাইনে ক্লাস চালু রাখতে চাই। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে একযোগে পরীক্ষা ও খাতা মূল্যায়ন করা হবে। শিক্ষাসচিব মো: মাহবুব হোসেন এ বিষয়ে জানিয়েছেন, আমরা অগ্রাধিকার দিতে চাই শিক্ষার্থীদের। তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগেই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আর এই দীর্ঘ ছুটির মধ্যে তাদের পড়াশোনার যাতে কোনো ঘাটতি বা গ্যাপ না হয় তাই সংসদ টিভিতে নিয়মিত ক্লাস চালু করা হয়েছে। করোনা কেটে গেলে এই ক্লাসের আলোকেই পরীক্ষা নেয়া হবে। আশা করছি, শিক্ষার্থীদের সেশনজট হবে না, পড়াশোনাতেও কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না।
Leave a Reply