1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ১০:৪৭ অপরাহ্ন

মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা : কী করবে সরকার

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৮ মে, ২০২৩

আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে যে একটি হুমকি আসছে এটি বেশ কিছুদিন থেকেই বাংলাদেশের সরকার সম্ভবত আঁচ করছিল। কারণ, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে খোলাখুলি আমেরিকার তীব্র সমালোচনা শোনা গেছে।

এপ্রিলে তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন আমেরিকা চাইলে যেকোনো দেশেই ক্ষমতা ‘উল্টে-পাল্টে’ দিতে পারে। এ মাসে লন্ডনে তিনি বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেন, ‘আমেরিকা আমাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না।’

কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো, ওয়াশিংটনের কাছ থেকে কাগজে-কলমে ভিসা নিষিদ্ধের এই হুমকি চলে আসার পর কী করবে আওয়ামী লীগ সরকার?

অগামী নির্বাচন অবাধ এবং নিরপেক্ষ হবে বলে যে প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রী হাসিনা এবং তার মন্ত্রীরা দিতে শুরু করেছেন, তাতে কি আমেরিকাকে আশ্বস্ত করা যাবে?

বেশির ভাগ পর্যবেক্ষক তা মনে করছেন না, কারণ এ মাসেই ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সাথে বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের পক্ষ থেকে দেয়া অবাধ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতির দুই সপ্তাহ না যেতেই ব্লিনকেন নিজে এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকি ঘোষণা করেন।

বোঝাই যাচ্ছে, আমেরিকা প্রমাণ দেখতে চাইছে।

তবে কেউই বিশ্বাস করছেন না যে আমেরিকার কাছ থেকে এই হুমকির পর রাতারাতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক আবহ বদলে যাবে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কোনো চাপ ছাড়াই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হতে পারবে, বা গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে।

ঢাকায় একাধিক সাবেক কূটনীতিক বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, এই রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক চাপ সামাল দিতে তলে তলে আমেরিকার সাথে দেন-দরবার দর-কষাকষির পথে যাবে সরকার।

‘এটাই প্রটোকল, অতীতেও বিভিন্ন ইস্যুতে তা করা হয়েছে, এবারো হবে। কারণ, আমেরিকার সাথে সম্পর্ক এখনো বাংলাদেশের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্পর্ক অগ্রাহ্য করার কোনো রাস্তা এখনো নেই,’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন সাবেক একজন কূটনীতিক।

দর-কষাকষির শক্তি
কিন্তু আমেরিকার মতো দেশের সাথে দেন-দরবার বা দর-কষাকষির জন্য শক্তি কতটুক রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের? তাদের হাতে এমনকি রয়েছে যার বিনিময়ে কিছু প্রতিদান আদায় করতে সক্ষম হবে?

রাজনৈতিক-অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন ক্ষমতার সম্পর্কে কোনো একটি দেশের দেন-দরবারের সক্ষমতা বেশ কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে : ক্রয় ক্ষমতা, অভ্যন্তরীণ বাজারের আয়তন এবং বিনিয়োগ আকর্ষণের সক্ষমতা।

পাশাপাশি, ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বা ঔপনিবেশিক যোগসূত্র কূটনৈতিক দেন-দরবারে কাজে লাগে।

এসব কারণেই ভারত বা সৌদি আরবের মতো দেশ আমেরিকান নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে রাশিয়ার সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখলেও বাইডেন প্রশাসনকে তা হজম করতে হচ্ছে।

কিন্তু এসবের বিবেচনায় বাংলাদেশ অপেক্ষাকৃত একটি দুর্বল রাষ্ট্র।

‘বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক প্রধানত ষ্ট্রাটেজিক, বাজার বা বিনিয়োগ নয়। বরঞ্চ বাজারের ওপর যেটুক নির্ভরতা তা প্রায় পুরোটাই বাংলাদেশের। ২০ থেকে ২৫ শতাংশ তৈরি পোশাক এক যুক্তরাষ্ট্রে যায়, ফলে বাজারের প্রয়োজন শুধু বাংলাদেশের,’ বলেন ড. ভট্টাচার্য।

এ মাসের মাঝামাঝি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হঠাৎ ঘোষণা দেন বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে এমন দেশ থেকে আমদানি বন্ধের তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্তের কোনো গুরুত্বই আমেরিকার কাছে নেই।

‘আমি এমন কিছু দেখিনা যেটা দেখিয়ে বাংলাদেশ আমেরিকার কাছ থেকে চাপ দিয়ে কিছু আদায় করে নিতে পারবে,’ বলেন সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেন।

‘একটি গুজব শুনি আমেরিকা নাকি তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা কৌশলের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে একটি সামরিক ঘাঁটি করতে চায়। আমি বিশ্বাস করি না সে কারণে এই চাপ। যুক্তরাষ্ট্র কি সত্যিই বিশ্বাস করে চাপ দিয়ে ঘাঁটি তৈরি করা যাবে। আমি একেবারেই তা মনে করি না,’ তিনি বলেন।

চীন ফ্যাক্টর
এটা ঠিক চীনের সাথে রেষারেষিতে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোকে দলে টানার চেষ্টা রয়েছে আমেরিকা। জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে চার দেশীয় জোট কোয়াডে যোগ দেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের ওপর চাপ রয়েছে বলে নানা সময় খবর বেরিয়েছে। বাংলাদেশে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ কোনো অবকাঠামোতে চীনা বিনিয়োগে আমেরিকার আপত্তির কথা শোনা যায়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের ওপর যেভাবে নির্ভরশীলতা বাড়িয়েছে বাংলাদেশে, সেটাও আমেরিকা ভালো চেখে দেখছে না।

কিন্তু, তৌহিদ হোসেন বিশ্বাস করেন না যে চীনের সাথে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই প্রধান কারণ আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর আমেরিকার চাপের প্রধান কারণ।

তিনি বলেন, ‘চীনের সাথে সম্পর্ককে খুব বড় করে দেখানো হচ্ছে। চীনা বিনিয়োগ তেমন কোনো বড় অংকের নয়। সেই ঋণ ফেরত দিতে গিয়ে কী পরিণতি দাঁড়াতে পারে তা নিয়ে বাংলাদেশর কর্তা ব্যক্তিদের উদ্বেগ রয়েছে, কারণ তারা পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার অবস্থা দেখছেন…আর তাছাড়া আমেরিকাও খুব ভালো করে বুঝতে পারে সরাসরি চীনের বিরুদ্ধাচরণ করা বাংলাদেশের পক্ষে কখনই সম্ভব নয়।’

তৌহিদ হোসেন মনে করেন, বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার চেষ্টা আমেরিকার ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নীতিগত সিদ্ধান্ত। ‘তারা ভাবছে এতে বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা বাড়বে এবং একটি দলের সাথে সম্পর্ক চটলেও সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে তাদের সুনাম, গ্রহণযোগ্যতা, প্রভাব বাড়বে।’

আমেরিকা বেশি চাপ দিলে চীনের দিকে আরও ঝুঁকে পড়ার পাল্টা হুমকির কোন কৌশল কি আওয়ামী লীগ নিতে পারে?

ওই ঝুঁকি আওয়ামী লীগ নেবে বলে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন না। এপ্রিলে প্রকাশিত তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতিতে সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে তারা মধ্যপন্থার পথ থেকে সরবে না।

ভারত পাশে দাঁড়াবে?
তাহলে আওয়ামী লীগ সরকারের সামনে আমেরিকার এই রাজনৈতিক চাপ মোকাবেলার রাস্তাগুলো ঠিক কোথায়?

অনেক ক্ষেত্রেই দুর্বল রাষ্ট্রগুলো বিপদে মধ্যস্থতার জন্য শক্তিধর বন্ধু রাষ্ট্রের শরণাপন্ন হয়। আমেরিকা র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর সুরাহার জন্য বাংলাদেশ সরকার দিল্লির দ্বারস্থ হয়েছিল বলে খবর বেরিয়েছিল যা তারা অস্বীকার করেনি।

ভারত এখন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি কৌশলগত সহযোগী দেশ। কোয়াডের সদস্য। খুবই ঘনিষ্ঠ একটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা গড়ে উঠেছে দুই দেশের মধ্যে। তাছাড়া, ভারতের বাজারও আমেরিকান বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর জন্য খুবই লোভনীয়।

কিন্তু দিল্লি কি তাদের সেই কূটনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আওয়ামী লীগের ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করবে?

‘আওয়ামী লীগ দিল্লির ওপর ভরসা করে এবং এখনও করবে, কিন্তু ভারতেরও কিছু সমস্যা রয়েছে। ভারত কি আমেরিকাকে বলবে বাংলাদেশ নিয়ে তোমরা যা করছো সেটি ঠিক নয়? আমার মনে হয় না ভারত তা করবে,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন ভারতের জিন্দাল স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের অধ্যাপক এবং দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক প্রফেসর শ্রীরাধা দত্ত।

তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক যে কূটনীতি বিভিন্ন চ্যানেলে হয়, ভারত হয়ত ট্র্যাক টু বা ট্র্যাক থ্রি চ্যানেলে একথা তুলবে, কিন্তু ভারত সরকার কখনই মার্কিন সরকারের কাছে গিয়ে বাংলাদেশ বা আওয়ামী লীগের হয়ে দেন-দরবার করবে না।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশের চাপ থাকলেও রোহিঙ্গা সঙ্কটে নিয়েও মিয়ানমার সরকারের ওপর ভারত কখনই খোলাখুলিভাবে কোনো চাপাচাপি করেনি।

তবে শ্রীরাধা দত্ত স্বীকার করেন ভারত চায় আওয়ামী লীগের সরকার বাংলাদেশে থাকুক কারণ, তার মতে, নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের উদ্বেগগুলো সবসময় শেখ হাসিনা আন্তরিকভাবে সাথে বিবেচনা করেছেন যা নিয়ে দিল্লি কৃতজ্ঞ।

এ কারণে, তিনি বলেন, পরপর দুটি নির্বাচন নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন উঠলেও ভারত চোখ বুজে ফলাফল মেনে নিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক যে ভারত আওয়ামী লীগকে অন্ধের মত সমর্থন করেছে…কিন্তু আমেরিকা এখন যেভাবে ক্ষেপে উঠেছে সেটা ভারতের জন্য চিন্তার জায়গা তো বটেই। মনে হচ্ছে না আমেরিকানরা পেছোবে। সেখানে ভারত কী করতে পারবে তা নিয়ে আমি সন্দিহান।’

এর আগে র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়েও ভারত যে বাংলাদেশের হয়ে আমেরিকার সাথে জোরালো কোনো দেন-দরবার করেছে তার কোনো প্রমাণ নেই।

তাছাড়া, শ্রীরাধা দত্ত বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনা নিয়ে দিল্লি ও ওয়াশিংটনের সম্পর্কে সম্প্রতি চাপ তৈরি হয়েছে। ‘ভারত যতই নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবুক না কেন তাদের তো অনেক জায়গাতেই যুক্তরাষ্ট্রকে প্রয়োজন।’

‘সমস্যা অনেকদূর গড়িয়েছে’
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে কিছু রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সুবিধা দিয়ে পরিস্থিতি সামলানোর পথে যাবে আওয়ামী লীগ, এবং তার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে।

সম্প্রতি কোনো টেন্ডার ছাড়াই মার্কিন তেল কোম্পানি এক্সনকে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের অনুমতি দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির কিছু শর্ত শিথিল করা হয়েছে। এপ্রিলে বাংলাদেশ তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল ঘোষণা করে বলার চেষ্টা করেছে তারা চীনের বলয়ে নেই। জাপানের সাথে সামরিক সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছে।

কিন্তু এগুলো দিয়ে আমেরিকানদের কতটা নিরস্ত করা যাবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে ড. ভট্টাচার্যের।

তিনি বলেন, ‘সমস্যা অনেকদূর গড়িয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান আবহে অনেকেই উদ্বিগ্ন, অনেকের স্বার্থ জড়িয়ে গেছে – সিভিল সোসাইটি, গণমাধ্যম, রাজনীতিবিদ, বেসরকারি খাত।’

তার মতে, আমেরিকার সাথে দরকষাকষিতে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো তাদের ক্ষমতার প্রশ্নবিদ্ধ বৈধতা।

তিনি বলেন, যেকোনো সরকারের মূল ক্ষমতা অভ্যন্তরীণ। তারা কি গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের ভেতর নিয়ে নির্বাচিত? সেটা বিরাট প্রশ্ন। তুরস্কের এরদোগান, ব্রাজিলের বোলসোনারো, রুয়ান্ডার গল কাগামে বা ভারতের নরেন্দ্র মোদির গণতান্ত্রিক আচরণ নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন উঠেছে, কিন্তু তারা সবাই গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ভেতর দিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। ক্ষমতায় তাদের বৈধতা নিয়ে তো কোনো প্রশ্ন নেই।

কূটনীতিতে চোখে চোখ তুলে কথা বলার জন্য এই বৈধতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বলেন ড. ভট্টাচার্য।
সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com