ঘূর্ণিঝড় মোখা’র প্রভাবে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ও বাংলাদেশী জনগোষ্ঠীর জন্য জাতিসঙ্ঘ ও এর অংশীদাররা মঙ্গলবার চার কোটি ২১ লাখ মার্কিন ডলারের আবেদন করেছে।
ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের ৩৩টি শরণার্থী শিবির ও আশপাশের গ্রামগুলোকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী সাড়াদানের আওতায় জরুরি আবেদনের মধ্যে রয়েছে শরণার্থী ও বাংলাদেশী জনগোষ্ঠীর কল্যাণে তিন কোটি ৬৫ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়া টেকনাফের বাংলাদেশী পরিবারের জন্য ৫৬ লাখ মার্কিন ডলার চেয়েছে জাতিসঙ্ঘ এবং এর অংশীদার সংস্থাগুলো।
এই আবেদনে জরুরি চাহিদা পূরণ, বর্ষার আগে প্রস্তুতি এবং জীবন বাঁচানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ আশ্রয়ণ ও সেবাকেন্দ্রগুলোর জন্য বৈরী আবহাওয়া এবং আগুন প্রতিরোধক উপকরণ ব্যবহারের বিষয়গুলো প্রধান্য পেয়েছে।
গত ১৪ মে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’। ঘূর্ণিঝড়ে লাখ লাখ বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে নির্মিত আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত ও সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়।
আরো অনেকে বিশুদ্ধ পানি এবং অন্যান্য স্যানিটেশন সুবিধার সুযোগ হারিয়েছেন। এছাড়াও শিক্ষা, পুষ্টি, সুরক্ষা এবং অন্যান্য সুবিধাকেন্দ্রগুলোও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসঙ্ঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশী ও শরণার্থী জনগোষ্ঠীর ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। আমাদের যা করতে হবে তা হলো- স্থাপনাগুলো বৈরী আবহাওয়া এবং অগ্নি-প্রতিরোধক উপকরণ দিয়ে আরো ভালোভাবে তৈরি করা।’
তিনি আরো বলেন, ‘ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মার্চ মাসে অনেক শরণার্থী তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছেন এবং পুনরায় সবকিছু নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। ঘূর্ণিঝড়ের পরে তারা এখন আবার তাদের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পুনর্নির্মাণ করছে এবং আসন্ন বর্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’
এ বছর রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বিশেষ ঝুঁকিতে রয়েছেন, কারণ ২০২৩ সালে ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আবেদনের প্রেক্ষিতে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত মাত্র ১৭ শতাংশ অর্থায়নের অঙ্গীকার পাওয়া গেছে। তহবিল ঘাটতির কারণে বছরের মার্চ এবং জুন মাস থেকে দ্বিতীয়বারের মতো রেশন কমানোর ফলে খাদ্য সহায়তা ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ হ্রাস পাবে। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি ও কার্যক্রমও বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।
শরণার্থীদের কাজ করার সুযোগ নাই এবং তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল উল্লেখ করে লুইস বলেন, ‘শরণার্থীদের সম্পূর্ণ খাদ্য, রেশন নিশ্চিত করতে পাঁচ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার প্রয়োজন। এখন ঘূর্ণিঝড়ের পরে ক্যাম্পগুলোর পুনর্গঠন এবং বর্ষার প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত সহায়তাও প্রয়োজন।’
লুইস ঘূর্ণিঝড়ের সময় মানুষের জীবন রক্ষায় দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং সাড়াদানে কার্যকর ব্যবস্থাগ্রহণের জন্যে বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
মিয়ানমারের মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোও ঘূর্ণিঝড় মোখায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৬ লাখ মানুষের সহায়তায় মঙ্গলবার ৩৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আবেদন করেছে।
সূত্র : ইউএনবি
Leave a Reply