চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় ডলারের দাম বেড়েই চলছে। এবার আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের দাম ৫০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ পয়সা বাড়ানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৩ মে) আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলার ১০৮ টাকা ৭৫ পয়সা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ডলার লেনদেনের ব্যয়ও বাড়বে। এতে বাড়বে পণ্য আমদানি ব্যয়। আর পণ্য আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার অর্থই হলো জিনিষপত্রেরে দাম আরো বাড়বে। এদিকে ডলারের সরবরাহ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এবার রেমিট্যান্স বাড়াতে নেয়া হয়েছে বিকল্প উদ্যোগ। এর অংশ হিসেবে ছুটির দিনেও বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশী ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সোনালী এক্সচেঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রে ছুটির দিনে তাদের কিছু শাখা ও বুখ খোলা রাখছে। এছাড়া যেসব এক্সচেঞ্জ হাউসের সাথে রেমিটেন্স পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর চুক্তি রয়েছে সেগুলোর কিছু শাখাও ছুটির দিনে খোলা রাখার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। ছুটির দিনে প্রবাসীরা ব্যাংকিং সুবিধা পেলে রেমিটেন্স পাঠানো যেমন সহজ হবে, তেমনি প্রবাসীরাও আগ্রহী হবেন।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বৈদেশিক মুদ্রার যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে সরবরাহ তার চেয়ে অনেক কম। যেসব ব্যাংক আগে আন্তঃব্যাংকে অহরহ ডলার বিক্রি করত সরবরাহ কম থাকায় তারাও আর ডলার বিক্রি করতে পারছে না। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকগুলোরও ডলারের চাহিদার চেয়ে সরবরাহ অনেক কম। বেসরকারি ব্যাংকগুলো ডলারের সংস্থান অনুযায়ী পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলছে। কিন্তু সরকারি ব্যাংকগুলো তার উপায় নেই। কারণ সরকারি অতিগুরুত্বপূর্ণ পণ্য যেমন, জ্বালানি তেল, সার, খাদ্যদ্রব্যসহ বিভিন্ন প্রকল্পের পণ্য কিনতে এলসি খুলতে হচ্ছে। এসব এলসির দায় পরিশোধ করতে এসেছে পড়ছে বিপাকে। রিজার্ভ কমে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও কাঙ্ক্ষিত হারে ডলার সরবরাহ করতে পারছে না। যেমন, একটি ব্যাংক ২১ কোটি ডলার চেয়েছিল জরুরি পণ্য আমদানি ব্যয় মেটাতে। কিন্তু তাদেরকে দেয়া হয়েছে ২ কোটি ডলার। এভাবে প্রয়োজনীয় ডলার সংস্থান করতে পারছে না অনেকেই। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে।
গত সোমবার আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম বাড়ানো হয়েঝে সর্বনিম্ম ৫০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ পয়সা বেড়েছে। মঙ্গলবার প্রতি ডলার সর্বনিম্ম ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১০৮ টাকা ৭৫ পয়সা দরে লেনদেন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার যা ছিল সর্বনিম্ম ১০৭ টাকা ৯৫ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা। ব্যাংকে ডলারের সরবরাহ কমে যাওয়ায় ও আমদানির দায় মেটাতে এর চাহিদা বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট চলছে। এ কারণে এর দাম বাড়ছে। এর আগে গত ২ মে থেকে রফতানি ও রেমিটেন্সে ডলারের দাম এক টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। এর প্রভাবে ৪ মে থেকে আমদানিতেও ডলারের দাম এক থেকে দেড় টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে এখন রফতানি বিল বিক্রি হচ্ছে ১০৬ টাকা করে। রেমিটেন্সে ডলার কেনা হচ্ছে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা করে। আমদানিতে ডলারের দাম প্রায় ১০৯ টাকা। তবে কিছু ব্যাংক ১০৭ টাকা থেকে ১০৮ টাকা দরে বিক্রি করছে। বেশির ভাগ ব্যাংকই আমদানিতে ডলারের দাম রাখলে ১০৮ টাকার বেশি থেকে ১০৯ টাকার সামান্য কম। তবে অনেক ব্যাংক এরচেয়ে বেশি দামে আমদানিতে ডলার বিক্রি করছে। তারা প্রতি ডলাওে সর্বোচ্চ ১২২ টাকাও নিচ্ছে। ডলারের দর ১০৮ টাকা দেখিয়ে বাকি টাকা অন্য খাতে দেখাচ্ছে। এ বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংক তদন্ত করে দেখছে।
এদিকে আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম বাড়ায় ব্যাংকগুলোর ডলার কেনার খরচ বেড়ে যাবে। ফলে বিক্রির ক্ষেত্রেও তারা দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। আন্তঃব্যাংককে ডলারের দাম বাড়ায় এর সাথে সমন্বয় রেখে অন্যান্য মুদ্রার দামও বেড়েছে। এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক মুদ্রা প্রতি ইউরো বিক্রি হয়েছে সর্বনিম্ম ১১৪ টাকা ৭০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১১৭ টাকা ৬৫ পয়সা দরে। যুক্তরাজ্যেও মুদ্রা পাউন্ড বিক্রি হয়েছে সর্বনিম্ম ১৩৩ টাকা ২১ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১৩৫ টাকা ৪৩ পয়সা দরে। অষ্ট্রেলিয়ার মুদ্রা অষ্ট্রেলিয়ান ডলার সর্বনিম্ম ৭১ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭২ টাকা, সিঙ্গাপুরের মুদ্রা সিঙ্গপুরী ডলার সর্বনিম্ম ৭৯ টাকা ৬২ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ৮০ টাকা ৮০ পয়সা দরে বিক্রি হয়েছে।
এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে গেছে। এর মধ্যে রেমিটেন্সের প্রধান উৎস্য সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি কমেছে। তবে তৃতীয় বৃহত্তম উৎস্য সংযুক্ত আরব আমীরাত থেকে বেড়েছে। দেশটিতে হুন্ডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠাতে শুরু করেছেন।
সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের একটি প্রতিনিধি দল সংযুক্ত আরব আমীরাত ঘুরে এসেছে। তারা সেখানে দেখতে চেয়ে যেখানে প্রবাসীরা থাকেন তার পাশেপাশেই হুন্ডিবাজদের বিশাল চক্র রয়েছে। তারা প্রবাসীদের কাছে গিয়ে রেমিটেন্স সংগ্রহ করেন এবং সাথে সাথে তা প্রবাসীরা আত্মীয় স্বজনের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এছাড়া প্রবাসীদের আবাস ও কর্মস্থল থেকে ব্যাংকের সেবার নেয়ার স্থান অনেক দূরে। প্রবাসীরা ছুটির দিন ছাড়া অন্য দিনে ব্যাংকে যেতে পারেন না। আবার ছুটির দিনে ব্যাংক বন্ধ থাকে। এসব কারণে হুন্ডিতে রেমিটেন্স বেশি আসছে।
এজন্য প্রবাসীদের কাছে ব্যাংকিং সুবিধা বাড়াতে ছুটির দিনে বিদেশে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংক, ব্যাংকের শাখা ও এক্সচেঞ্জ হাউস খোলা রাখার সিন্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সোনালী এক্সচেঞ্জের কিছু শাখা ছুটির দিনেও খোলা রাখা হচ্ছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্স বাড়তে শুরু করেছে। তবে গত কয়েক মাস ধওে আবার কমছে। সে দেশে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে রেমিটেন্স কমছে।
সূত্র জানায়, বিদেশে বাংলাদেশের ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ হাউস খোলা রাখতে হলে সংশ্লিস্ট দেশের নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোকে বলা হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর বিদেশী যেসব মানি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর সাথে রেমিটেন্স পাঠানোর চুক্তি আছে সেগুলোর সাথেও আলোচনা করে ছুটির দিনে কিছু শাখা খোলা রাখার ব্যাপারে আলোচনা করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
Leave a Reply