আফ্রিকার ৫৪ দেশের মধ্যে ৪২ দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। ইতোমধ্যেই আফ্রিকার দেশগুলোতে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে লকডাউনে চলে যাচ্ছে গোটা আফ্রিকা। বাকি মহাদেশগুলোর তুলনায় এতদিন করোনার কম প্রকোপ দেখা গিয়েছিল আফ্রিকাতে।
তবে পরিস্থিতি অবনতির দিকে যেতেই লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিলো আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ। আফ্রিকায় বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাব বেশ জোড়ালো হচ্ছে। জাতিসঙ্ঘের পক্ষ থেকে আফ্রিকাকে সব থেকে খারাপ কিছুর জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
আফ্রিকায় করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব এশিয়া মহাদেশ এবং ইউরোপ মহাদেশ থেকে অনেক কম। এই দু’টি মহাদেশ থেকে ভ্রমণ করা লোকদের থেকে আফ্রিকা মহাদেশে ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে। আফ্রিকা মহাদেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। কারণ আফ্রিকার দেশগুলোর করোনার মতো ভয়াবহ মহামারী মোকাবেলা করা সক্ষমতা নেই।
দক্ষিণ আফ্রিকার ৯টি প্রদেশের মধ্যে ছয়টি প্রদেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। ইতোমধ্যে শনাক্ত হওয়া ১৫০ জন ছাড়াও নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৫২ জন। সবমিলিয়ে এখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ২০২ এ। করোনা আক্রান্ত রোগীর মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক সংক্রমিত হয়েছে হাইটেং (জোহানসবার্গ) প্রদেশে, যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা শুক্রবার পর্যন্ত ৮১। এ ছাড়া ওয়েস্টার্ন ক্যাপ (কেপটাউন) প্রদেশে ৫৬, কোয়াজুলু নাটাল প্রদেশে ২৫ এবং ফ্রি স্টেইট, পুমালংগা ও লিম্পুপু প্রদেশে মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ জন।
এছাড়া ইস্টার্নক্যাপ, নর্দানক্যাপ ও নর্থওয়েস্ট প্রদেশ এখনো করোনার সংক্রমণ থেকে মুক্ত রয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিডিয়ার সাথে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেছেন, করোনার আক্রমণ দক্ষিণ আফ্রিকায় ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
আফ্রিকাতে এখন পর্যন্ত এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আইভরি কোস্ট করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে সীমান্ত বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। আফ্রিকার কয়েকটি দেশে দর্শনীয় স্থান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিদেশ ফেরত নাগরিকদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন ইথিওপিয়াতে বিদেশ ফেরত নাগরিকদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হচ্ছে। কঙ্গো ও ঘানাও তাদের আন্তর্জাতিক সীমান্ত বন্ধ করে দিচ্ছে।
ফ্লাইট বন্ধ নাইজেরিয়ায়
এ দিকে এই পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যেই নাইজেরিয়া তাদের দেশে বিমানের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। রাওয়ান্ডাতে প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া আগামী দুই সপ্তাহর জন্য বন্ধ।
তিউনিসিয়াতে লকডাউন
তিউনিসিয়াতে লকডাউন জারি করা হয়েছে কয়েক দিন আগে। তিউনিসিয়া করোনভাইরাস স্বাস্থ্য সঙ্কটের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব মোকাবেলার জন্য আড়াই কোটি দিনার (৮৫০ মিলিয়ন ডলার) বরাদ্দের দোষণা দিয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইলিয়াস ফখফখ এ কথা জানিয়েছেন।
আক্রান্ত বুরকিনা ফাসোর ৪ মন্ত্রী
আফ্রিকার অনুন্নত দেশ বুরকিনা ফাসোর মন্ত্রিসভার চার সদস্য সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরা হচ্ছেন পররাষ্ট্র, খনিজ, শিক্ষা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। স্থানীয় সময় শনিবার দেশটির সরকারের এক মুখপাত্র এ খবর দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা দেশটি করোনা সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে তাদের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৪ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪ জনে।
গত ১১ মার্চ দেশটির মন্ত্রিসভার একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে তাতে সব মন্ত্রী ছিলেন কি না তা এখনো জানা যায়নি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, যারা ওই বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন তারা প্রত্যেকেই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলফা ব্যারি স্থানীয় সময় শুক্রবার এক টুইট বার্তায় জানান, ‘আমি এইমাত্র জানতে পারলাম যে, আমি কোভিড-১৯ পজিটিভ।’ দেশটির খনিজমন্ত্রী ওমারোউ ইদানি, শিক্ষামন্ত্রী স্ট্যানলিম ওউরাউ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিমিওন সোয়াদোগো প্রত্যেকেই ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর জানিয়েছেন। বুরকিনা ফাসোতে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূতও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বিবিসি, রয়টার্স ও আল আরাবিয়া।
Leave a Reply