পাল্টে গেছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট দৌলতদিয়া পাটুরিয়া ঘাটের দৃশ্য। আগে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কাছে দুর্ভোগের নাম ছিল এ নৌরুট। ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কিন্তু এখন ঘাটে ফেরিই অপেক্ষা করছে গাড়ির জন্য। আসন্ন ঈদুল ফিতরে ভোগান্তিমুক্ত পারাপারে কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেছে নানা উদ্যোগ। তাই এবার ঈদের আগে ও পরে ঘাটে কোনো দুর্ভোগ হবে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
আজ বুধবার সকাল সরেজমিন দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় দেখা যায়, সড়কে নেই কোনো গাড়ীর সারি। আগের মতো হাঁক-ডাক নেই হকারের। দৌলতদিয়া ঘাটের শতাধিক হোটেলের চেয়ার টেবিলে পড়েছে ধুলার আস্তর। ঘাটকেন্দ্রিক অধিকাংশ হোটেল বন্ধ হয়ে গেছে আরো আগেই। স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে কমেছে যানবাহনের সংখ্যা। বিআইডাব্লিউটিসির তথ্য মতে প্রতি দিন গড়ে দুই হাজার গাড়ি পার হয়। অথচ পদ্মা সেতু চালুর আগে প্রতি দিন সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার গাড়ি পারাপার হত।
তবে ভিন্ন রকমের ভোগান্তির অভিযোগ করেন দৌলতদিয়া ৫ নম্বর ফেরি ঘাটে যানবাহনের জন্য অপেক্ষমান রোরো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানে থাকা ব্যাক্তিগত গাড়ি চালক স্বাধীন মোল্লা।
তিনি জানান, ভোগান্তির চিত্র পরিবর্তন হলেও দৌলতদিয়া ঘাটে ভোগান্তি রয়েই গেছে।
আগে ফেরির নাগাল পাওয়া ছিল সোনার হরিণের মতো। কিন্তু এখন চিত্র ভিন্ন। প্রায় একঘণ্টা তীব্র রোদের মধ্যে ফেরিতে উঠে বসে আছি। পর্যাপ্ত যানবাহন লোড না হওয়ার কারণে ফেরি ছাড়ছে না। এটা আরেক ধরনের ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
রাবেয়া পরিবহনের সুপার ভাইজার শফিফুর রহমান জানান, এখন ঘাটগুলোতে গাড়ির অপেক্ষায় ফেরি বসে থাকে। অনেক সময় পর্যাপ্ত গাড়ি না পেয়ে অর্ধেক গাড়ি নিয়েই ফেরি ছেড়ে যায়। এজন্যই এরুটে এবার ঈদে দুর্ভোগ হবে না। তবে এবারের ঈদে পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দেয়ায় এ ঘাটে আর কোনো চাপ রইল না।
বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মোহাম্মাদ সালাউদ্দিন জানান, আগামী ঈদুল ফিতরে ঘরমুখো ও কর্মস্থলগামী মানুষকে নির্বিঘ্নে পারাপার করতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ঈদের আগে ও পরে নৌরুটের ফেরি বহরে ছোট-বড় মিলিয়ে ২০ ফেরি চলবে। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে ঈদের আগে ও পরে পারাপরে কোনো প্রকার দুর্ভোগ হবে না ঘাটে।
রোববার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গোয়ালন্দ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দৌলতদিয়া ঘাটের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও যাত্রী পারাপারসহ যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে অনুষ্ঠিত হয় ঈদ সমন্বয় সভা। এতে উপস্থিত ছিলেন ঘাট সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগ।
সভা সূত্রে জানা যায়, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে চলাচলকারী ফেরিগুলোর খুটিনাটি সমস্যা মেরামতের কাজ পুরোদমে চলছে। পারাপারে যেন কোনো সমস্যা না হয়, এ উদ্দেশে নৌরুটের ফেরি বহরে ২০টি ফেরি প্রস্তুত করা হচ্ছে। এছাড়া যাত্রী পারাপারের জন্য ফেরির পাশাপশি ২২টি লঞ্চ চলাচল করবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: জাকির হোসেন জানান, দৌলতদিয়া ঘাটে যাত্রী হয়রানি বন্ধ, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ন্ত্রণে ভাড়া মনিটরিং করবে প্রশাসন। এছাড়া সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমান আদালত কাজ করবে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় ঘাট এলাকায় পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকবে।
Leave a Reply