ক্রিকেট মানেই যেখানে অনিশ্চয়তার খেলা, পাকিস্তান ক্রিকেট মানেই যেন তা যেন আরো রঙিন হয়ে উঠা। নিশ্চিত হার থেকেও জয়ের স্বপ্ন যেমন দেখাতে জানে পাকিস্তান, তেমনি জয়ের মুখ থেকেও হারের তেতো স্বাদ আস্বাদন করাতে বেশ ভালোই পারে তারা। যার আরো একটি প্রদর্শনী দেখল ক্রিকেট বিশ্ব। জয়-পরাজয়ের দোলাচালে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৪ রানে হেরেছে তারা।
সোমবার রাতে ১২ ওভারে মাত্র ৬৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে তখন দিশাহীন পাকিস্তান। হার তো দেখেই ফেলেছে, তিন অংকের ঘরে যেতে পারে কিনা তা নিয়েও তখন শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় পুরো ৩৬০°খেলার মোর ঘুরিয়ে দিয়েছেন ইফতেখার আহমেদ। ধ্বংসস্তূপ থেকেই দেখিয়েছেন রঙিন এক স্বপ্ন। যদিও তা শেষ মুহূর্তে গিয়ে পূর্ণতা পায়নি। খুব কাছে গিয়েও জয় ছিনিয়ে আনা হয়নি। তবে একপেশে ম্যাচটায় বেশ উত্তেজনা ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন ইফতেখার।
গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে আজ নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয় পাকিস্তান। প্রথম দুই ম্যাচে পরে ব্যাট করে ব্যর্থ হওয়ায় আজ টসে জিতে আগে ব্যাটিং নিতে ভুল করেননি কিউই অধিনায়ক টম লাথাম। আগে ব্যাট করতে নেমে ব্যাট হাতেও দলকে সম্মুখ থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তার ৪৯ বলে ৬৪ রানের ইনিংসে ভর করে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৬৪ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড।
এদিন স্বভাববিরুদ্ধ মন্থর গতিতে ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। প্রথম ১০ এভারে মোটে ৬৪ রান আসে ২ উইকেট হারিয়ে। তবে তৃতীয় উইকেট জুটিতে খানিকটা গতি আসে রানে। টম লাথাম ও ডেরিয়েল মিচেল মিলে যোগ করেন ৪৩ বলে ৬৫ রান। ২৬ বলে ৩৩ রান করে মিচেল আউট হলে ভাঙে এই জুটি।
পরের ওভারেই ফেরেন টম লাথামও। আউট হবার আগে তুলে নেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে নিজের তৃতীয় ফিফটি। এরপর জিমি নিশামের ৬ বলে ১০ ও মার্ক চাপম্যান করেন ৯ বলে অপরাজিত ১৬ রান। পাকিস্তানের হয়ে দুটো করে উইকেট নেন শাহিন শাহ আফ্রিদি ও হারিস রউফ।
১৬৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে আজ দিশাহীন হয়ে যায় পাকিস্তান। আশাহত করে বাবর-রিজওয়ানের বিখ্যাত উদ্বোধনী জুটি। দ্বিতীয় ওভারেই ৬ বলে ১ রান করে ফেরেন বাবর, আর ৩.৪ ওভারে দলীয় ১৭ রানের মাথায় ১০ বলে ৬ রান করে ফেরেন রিজওয়ান।
সেই ধাক্কা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি পাকিস্তান, নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে স্বাগতিকেরা। ১০ ওভারে মাত্র ৫৪ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা৷ সাইম আইয়ুব ১০, ফখর জামান ১৭ ও ইমাদ ওয়াসিম ফেরেন ৫ বলে ৩ রান করে।
ষষ্ঠ উইকেটের পতন হতেও সময় লাগেনি, ১২তম ওভারেই ফেরেন ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে সাতে ব্যাট করতে আসা শাহিন আফ্রিদি। আট নাম্বারে ব্যাট করিরে নেমে ইফতেখার আহমেদ পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা চালান। শাদাব খানকে সাথে নিয়ে যোগ করেন ১৬ বলে ২৪ রান।
শাদাব ফিরলেও ব্যাটের তেজ কমেনি ইফতেখার আহমেদের। এবার ফাহিম আশরাফকে সাথে নিয়ে ছুটতে থাকেন তিনি। এডাম মিলনের করা ১৮তম ওভারেই যোগ করেন ২৩ রান। ফলে শেষ ২ ওভারে জয়ের জন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ২৩ রান। ১৯তম ওভারেই ২০ বলে অর্ধশতক তুলে নেন ইফতেখার। তবে ওই ওভারে আসে মোটে ৮ রান।
শেষ ওভারে ১৫ রান রান প্রয়োজন হলে প্রথম ৩ বলেই চার-ছক্কায় ১০ রান আনেন ইফতেখার। ফলে শেষ ৩ বলে প্রয়োজন ছিল ৫ রান। এমন সময় ইফতেখার ধরা পড়ে যান, ২৪ বলে ৬০ রানের বিধ্বংসী ফিরতে হয় তাকে। ৩ চার আর ৬ ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান ইফতেখার।
যাহোক ইফতেখার ফেরায় শেষ ২ বলে প্রয়োজন দেখা দেয় ৫ রানের, তবে একটা রানও বের করতে পারেননি নাসিম শাহ ও হারিস রউফ। ৪ রানে হেরে যায় স্বাগতিকরা। অন্যথায় আজই সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলত পাকিস্তান। বিপরীতে অবশ্য পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে তৃতীয় ম্যাচে এসে প্রথম জয়ের স্বাদ পেল কিইউরা। এখনো অবশ্য তারা সিরিজে পিছিয়ে আছে ২-১ ব্যবধানে।
Leave a Reply