একজন মালীর জন্য বাগানের প্রতিটি ফুল যেমন অসাধারণ গুরুত্বের হয় ঠিক তেমনি রোজাদারের জন্য রমজানের প্রতিটি দিন স্পেশাল। শুধু খাদ্য ও পানীয় থেকে মাহরুম থাকার নাম রমজান নয়; বরং রমজান শিক্ষা দেয়- ‘একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন যিনি সবকিছুর বিধানকারী’।
রমজান সে মাস যাতে কুরআনুল কারিম নাজিল করা হয়েছে, রমজান সে মাস যে মাসের প্রতিটি সেকেন্ড মু’মিনের জন্য আনন্দের সংবাদ বহন করে। আল্লাহ সুবহানাহু এ মাস সম্পর্কে বলেছেন- ‘রমজান সে মাস যাতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়াত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য বিধানকারী।’ (সূরা বাকারাহ-১৮৫)
অগণিত হৃদয় তৃষ্ণার্ত থাকে এ মাসের সৌরভ পাওয়ার জন্য, কোটি কোটি মুসলিমের অশ্রুসিক্ত হাত মুনাজাতরত থাকে এ মাসে উপনীত হওয়ার জন্য। ক্ষমার মাস রমজানের রহমত, বরকত আর মাগফিরাত মুমিন হৃদয় ধুয়েমুছে পবিত্র করে দেয়। মুআলা বিন ফজল রহিমাহুল্লা বলেন, ‘আমাদের পূর্বসূরিরা নিরাপদে রমজানে উপনীত হওয়ার জন্য ছয় মাস আগে থেকেই আল্লাহ দরবারে মুনাজাত করতেন।’
প্রকৃতপক্ষে তারা রাত-দিন ইবাদতের মাধ্যমে রমজানের প্রস্তুতি নিতেন, দাঁড়িয়ে বসে সিজদায় লুটিয়ে বিনয়াবনত অবস্থায় আবেগাপ্লুত কণ্ঠে রবের দরবারে নিবেদন করতেন। ইয়াহইয়া ইবনে আবি কাসির রহ: বলেন, ‘পূর্বসূরিরা তাদের প্রার্থনায় এই নিবেদন করতেন- হে আল্লাহ রমজান অবধি আমাদের সুস্থ ও নিরাপদে রাখুন। রমজানের জন্যও নিরাপদে রাখুন। আমাদের এ মাস কবুল করে নিন। প্রকৃতপক্ষে তারা ছিলেন রমজানের ফরজিয়াত গভীরভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে পরিপূর্ণ সক্ষম।
তাকওয়া তথা আল্লাভীতি রমজানের শিক্ষা, প্রকৃত অর্থে যিনি তাকওয়া অর্জন করতে সচেষ্ট হোন তার যেন সবকিছুই অর্জন হয়ে গেল। আল্লাহ সুবহানাহু বলেন- ‘হে ঈমানদাররা তোমাদের ওপর সওম ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল পূর্ববর্তীদের ওপর যেন তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো।’ (সূরা বাকারাহ-১৮৩)
তাকওয়াবান একজন মু’মিন এই পার্থিব নগণ্য সম্পদের চেয়ে বহুগুণ শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ বলেন- ‘যে ব্যক্তি রাত্রিকালে সিজদার মাধ্যমে অথবা দাঁড়িয়ে ইবাদত করে, পরকালে ভয় রাখে এবং পালনকর্তার রহমত প্রত্যাশা করে, সে কি তার সমান যে এরূপ করে না। বলুন, যারা জানে ও যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে? বোধশক্তিসম্পন্ন লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সূরা জুুমার-৯)
রমজান মাসে রোজা রেখে অন্যায় জুলুম কাজে রত অশ্লীল ভাষা প্রয়োগকারীর পানাহার বর্জন, ফুটো বালতিতে পানি সংরক্ষণের সদৃশ। রাসূল সা: বলেছেন, ‘সওম ঢালস্বরূপ, যদি না (সওম পালনকারী নিজেই) তা বিদীর্ণ করে দেয়, তোমাদের কেউ যদি সওম রাখে সে যেন অশ্লীলতায় জড়িয়ে না পড়ে, কেউ তার সাথে অশ্লীল কথা ও ঝগড়ায় লিপ্ত হতে চাইলেও সে যেন তাকে বলে দেয় আমি সিয়াম পালনকারী, আমি সওম রেখেছি।’ (মুসলিম-২৮৬২)
রমজান একাধারে পুণ্যার্জনের মাস, পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র হওয়ার মাস। আল্লাহ সুবহানাহু আমাদেরকে এ মাসের নূরানিয়াত ও রহমতের ভাগিদার করুন, আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং রমজানের সৌরভে আমাদের জীবন সুশোভিত করে দিন। আমিন।
লেখক :
শিক্ষার্থী, আল-কুরআন অ্যান্ড
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
Leave a Reply