বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গত শতাব্দীর মহান ব্যক্তিত্বদের মধ্যে অন্যতম। তার সমগ্র জীবন আমাদের সবার জন্য অনেক বড় প্রেরণা বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার আদর্শ অনুসরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তারও ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজন মুজিববর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া এক শুভেচ্ছাবার্তায় তিনি এ কথা বলেন। জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান ‘মুক্তির মহানায়কে’র অংশ হিসেবে তার এই শুভেচ্ছাবার্তা টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়।
শুরুতেই বাংলা ভাষাতে জাতির জনকের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ভারতের ১৩০ কোটি জনগণের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানান নরেন্দ্র মোদি। তিনি তার বার্তায় বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পৃথিবীর মহান ব্যক্তিত্বদের মধ্যে একজন ছিলেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন নিপীড়িতের নেতা; তিনি ন্যায়বিচার, সাম্য আর মর্যাদার পক্ষে লড়াকু নেতা। তিনি বর্বরতার বিরুদ্ধে লড়াই করা একজন নেতা। তিনিই একাত্তরে লাখো তরুণকে সব প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে দেশের স্বাধীনতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ার পথ দেখিয়েছেন। আজ আমি খুবই খুশি যখন দেখছি বাংলাদেশের মানুষ তারই স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন বঙ্গবন্ধু। যারা তার মানুষদের সঙ্গে অন্যায় করেছেন, তিনি তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। বঙ্গবন্ধু দেখিয়েছেন, ঘৃণা ও নেতিবাচকতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ইতিবাচক ও প্রগতিশীল একটি সমাজ করতে তিনি নিজেকে আত্মোৎসর্গ করেছেন। কিন্তু তার এই প্রচেষ্টা কিছু মানুষের পছন্দ হয়নি। তারাই আমাদের মাঝ থেকে তাকে ছিনিয়ে নিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ও আমাদের সবার জন্য সৌভাগ্য যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানার ওপর সৃষ্টিকর্তার রহমত ছিল। তা না হলে তারাও পঁচাত্তরে হিংসা ও ঘৃণার বলি হতেন। কিভাবে কূটরাজনীতি একটি দেশকে নিচে নামিয়ে দিতে পারে, তা আমরা দেখেছি। কিন্তু সেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রেরণা নিয়ে তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতি থেকে শুরু করে খেলাধুলা- সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নাগরিকদের দক্ষতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য দেখাচ্ছে।
বাংলাদেশ ও ভারত এখন সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় পার করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি বলেন, আমরা স্থলসীমায় ছিটমহল থেকে শুরু করে সমুদ্রসীমার মতো জটিল বিষয়গুলো অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করেছি। আজ বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদারও। ভারতের বিদ্যুতে বাংলাদেশের লাখো ঘর ও কল-কারখানাকে আলোকিত করছে। সড়ক, আকাশ ও জলপথ এবং ইন্টারনেটসহ সব খাতে আমাদের দুই দেশের নাগরিকরা আরও বেশি সংযুক্ত হচ্ছেন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁন, লালন শাহ, জীবনানন্দ দাস, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো মনীষীদের দুই দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সেতুবন্ধন বলে অভিহিত করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এসব ব্যক্তিত্বের ঐতিহ্য আর বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণা আমাদের সবসময় একটি বন্ধনে আবদ্ধ রেখেছে। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ ধরে আমাদের দুই দেশের মধ্যেকার যে আত্মিক সম্পর্ক, সেটাই এই দশকেও দুই দেশের অংশিদারিত্ব, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির মজবুত ভিত্তি।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, আগামী বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবে। ২০২২ সালে ভারতও স্বাধীনতার হিরকজয়ন্তী পালন করবে। আমার বিশ্বাস, এই দুই উপলক্ষ দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবেন।
Leave a Reply