বাংলাদেশ পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: মো: মোজাহেরুল হক বলেছেন, গুণগত মানসম্পন্ন ব্যবস্থাপনা (কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট) না থাকলে করোনা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হতে পারে। ‘আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখছি, আমাদের এখানে বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি’- এমন আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো অবকাশ নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি, চীনা সিডিসি গাইড লাইন অনুসারে আমাদের কাজ করা উচিত। হোম কোয়ারেন্টাইন সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে হোম কোয়ারেন্টাইন নামে শব্দ নেই, এটি হবে সেল্ফ কোয়ারেন্টাইন। নিজেকে বাইরের মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার নামই সেল্ফ কোয়ারেন্টাইন। এ ব্যবস্থাটি হলো, ‘কোনো একজন তার নিজের কক্ষে অবস্থান করবেন। এটা যে শুধু তার নিজের বাড়িতেই হতে হবে, তা নয়। কারণ বাড়িতে অনেকের সাথে বাস করতে হয়। সেল্ফ কোয়ারেন্টাইন থাকতে হলে তাকে বাথরুমসংলগ্ন একটি কক্ষে থাকতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের গ্রামের বাড়িতে এমন ব্যবস্থা খুবই বিরল।’
অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, সেল্ফ কোয়ারেন্টাইন একজনকে অন্যদের থেকে পৃথক হয়ে থাকতে হয়। আমাদের গ্রামের বাড়িতে এমন সুবিধা সম্ভব নয়। ফলে এ ধরনের কোয়ারেন্টাইন থাকা লোকজন সমাজের জন্য ঝুঁকির কারণ হবে। নিজের বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনের এ পদ্ধতিটি সমর্থনযোগ্য নয়। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকৃত অর্থে কোনো একজনকে যথাযথভাবে সেল্ফ কোয়ারেন্টাইন রাখার কোনো পদ্ধতি নেই।
তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন কোনো হাসপাতালে করাও উচিত নয়। কারণ এখান থেকে অন্য রোগী অথবা তাদের স্বজনদের মধ্যে রোগটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমন স্থানে কোয়ারেন্টাইন করা উচিত হবে না যেখানে স্বাস্থ্যকর্মীদের আসা-যাওয়া আছে। এমনকি পরিচ্ছন্নতা কর্মীরাও যেখানে যাবেন সেখানেও কোয়ারেন্টাইন করা উচিত নয়।
অধ্যাপক মোজাহেরুল হক চীনের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘চীন সরকার স্টেডিয়াম, জিমনেসিয়াম অথবা উন্মুক্ত স্থানে অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ করেছে। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের স্থান হবে এমন এলাকায় যেখানে ঘনবসতি নেই। এখানেই কোয়ারেন্টাইনের সাথে আইসোলেশনের ব্যবস্থা এবং করোনা আক্রান্তদের হাসপাতাল সুবিধা থাকতে পারে। সুস্থ হওয়ার পর যাদের ছেড়ে দেয়া হবে তাদের নিজ জেলার স্টেডিয়ামে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা যেতে পারে। এটি সম্ভব না হলে শুধু করোনা রোগের জন্য পৃথক হাসপাতালই নির্মাণ করা যেতে পারে।
অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীদের চার ধরনের দল থাকতে পারে। এদের তিনটি দল ২৪ ঘণ্টায় ৮ ঘণ্টা করে করে ডিউটি করবেন। অন্য একটি টিম রিজার্ভ হিসেবে থাকবেন। এদের কেউ যদি হাসপাতাল ত্যাগ করেন তা হলে বাইরে গিয়ে অবশ্যই ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন অথবা তারা হাসপাতালে ডিউটি করে যাবেন।
তিনি বলেন, শুধু আইইডিসিআরে করোনার পরীক্ষা করাই যথেষ্ট হবে না। ঢাকা যেহেতু একটি ঘনবসতিপূর্ণ শহর, এ কারণে সন্দেহভাজন ব্যক্তি যাদের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়নি তাদেরও পরীক্ষা করে দেখতে হবে। বেশ কিছু মেডিক্যাল কলেজে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যত দ্রুত সম্ভব পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা করা উচিত। আমাদের পূর্ণ প্রস্তুতির জন্যই এটি করা উচিত।
অধ্যাপক মোজাহেরুল হক প্রস্তুতির ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘বিভাগীয় পর্যায়ে বায়ো সেফটি ল্যাব প্রস্তুত করে রাখা উচিত। বিভাগীয় পর্যায়ে এবং মেডিক্যাল কলেজ পর্যায়ে পরীক্ষার সুবিধা সম্প্রসারণ করতে পারলে পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।’ তিনি বলেন, গুণগত মানসম্পন্ন ব্যবস্থাপনা না থাকলে পরিস্থিতি অবশ্যই অবনতির দিকে যাবে। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের দায়িত্বটা সেনাবাহিনীকে দেয়া যেতে পারে। কারণ তাদের ফিল্ড হাসপাতাল তৈরির সক্ষমতা আছে। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে ৫০ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ফলে মন্ত্রণালয়কে অত্যাবশ্যকীয় সব কিছু অবশ্যই ঠিক করে নিতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে মন্ত্রণালয়কে ল্যাব সুবিধা, পরীক্ষার কিট, কোয়ারেন্টাইন পদ্ধতি এবং ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
Leave a Reply