এক বছর আগে ঠিক আজকের এ দিনটিতে (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২) ইউরোপে আবার যুদ্ধ শুরু হয়েছে শুনে গোটা বিশ্ব জেগে উঠতে শুরু করেছিল।
কিয়েভে ভোরের আলো ফোটার আগেই আঘাত করছিল একের পর এক রুশ ক্ষেপণাস্ত্র, শহর ছেড়ে পালাচ্ছিল হাজার হাজার মানুষ।
তারপর ক্রেমলিন থেকে এসেছিল রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের এক কঠোর হুঁশিয়ারি।
শত্রুপক্ষকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের কাজে যারাই বাধা দেবে বা আমাদের দেশকে হুমকি দেবে, তাদের জেনে রাখা উচিৎ, রাশিয়া সাথে সাথে পাল্টা জবাব দেবে। এর পরিণতি হবে এমন, যা ইতিহাসে কেউ আগে দেখেনি।’
এই যুদ্ধের ঘাত-প্রতিঘাতে কেবল ইউক্রেন বা ইউরোপ নয়, গোটা পৃথিবীর রাজনীতি-কূটনীতি-অর্থনীতিতে শুরু হয়েছে এক বিরাট অস্থিরতা। ইউক্রেন যুদ্ধের অবস্থা এখন কি? এই সঙ্ঘাতের শেষ কোথায়? এই যুদ্ধ কিভাবে পাল্টে দিয়েছে বিশ্ব পরিস্থিতি? ইউক্রেন যুদ্ধ কি আসলে আরো একটি মহাযুদ্ধের শুরু মাত্র? বিবিসির এই প্রতিবেদনে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট পুতিন কি তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন?
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রুশ বাহিনীর হাজার হাজার সৈন্য যখন ইউক্রেনে ঢুকে পড়েছে, বিশাল এক ট্যাংক আর সাঁজোয়া বহর এগিয়ে যাচ্ছে কিয়েভের দিকে, তখন ইউক্রেনের পরাজয় মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর একটি দেশের বিরুদ্ধে এক অসম লড়াইয়ে ইউক্রেন কত দিন টিকতে পারবে, তা নিয়ে অনেকেই ছিলেন সন্দিহান। কিন্তু এক বছর পর এই যুদ্ধ এখনো চলছে।
যুদ্ধে উভয় পক্ষেরই বিরাট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু সবাইকে যা অবাক করেছে, তা হলো রাশিয়ার মতো এক বিরাট ক্ষমতাধর দেশের সামরিক দুর্বলতা। যুদ্ধে প্রথম কিছু সাফল্য দেখালেও রাশিয়াকে ইউক্রেনের অনেক এলাকা হতে পিছু হটতে হয়েছে।
এর মানে কি রাশিয়া তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে?
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সমর বিশেষজ্ঞ ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী বলছেন, এই যুদ্ধ শুরুর সময় রাশিয়ার ঘোষিত লক্ষ্য ছিল তিনটি। প্রথমত কিয়েভে, মস্কোর ভাষায়, যে নাৎসীবাদীরা ক্ষমতায়, তাদের উৎখাত করা। দ্বিতীয়ত ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীকে নিরস্ত্র করা। তৃতীয়ত ইউক্রেন যেন কোনদিন নেটো জোটের সদস্য হতে না পারে, তার ব্যবস্থা করা।
‘নাৎসি বলতে প্রেসিডেন্ট পুতিন কাদের বুঝিয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়। তবে দক্ষিণ ইউক্রেনের রুশ ভাষাভাষী মানুষের বিরুদ্ধে আযভ ব্যাটালিয়ন নামে যে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি তৎপর ছিল, তাদেরকে নিষ্ক্রিয় করতে পেরেছে রাশিয়া। কাজেই বলা যায়, প্রথম লক্ষ্য তারা অর্জন করেছেন।’
তাদের দ্বিতীয় লক্ষ্য, ইউক্রেনীয় বাহিনীকে নিরস্ত্র করা, সেক্ষেত্রে তো রাশিয়া সফল হয়নি?
সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, ‘যুদ্ধে রুশ বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও, ইউক্রেনীয় বাহিনীও কিন্তু বেশ দুর্বল হয়েছে। কিন্তু ইউক্রেন নেটো জোটের কাছ থেকে বিপুল সামরিক সহায়তা পেয়েছে, আরো পাবে বলে প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। এসব প্রতিশ্রুতি যদি বাস্তবায়িত হয়, ইউক্রেনের বাহিনী আরো বেশ কিছু দিন যুদ্ধ করে যাবার শক্তি পাবে। সুতরাং বলা যেতে পারে, ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনী নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব হয়নি।’
‘তৃতীয়ত, নেটো জোটে কিন্তু ইউক্রেন এখনো যোগ দিতে পারেনি। যত দিন সেখানে যুদ্ধ চলছে, ইউক্রেনের কিছু অস্ত্র রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকছে, তত দিন হয়তো ইউক্রেন নেটো জোটের অংশ হতে পারবে না। ’ কাজেই বলা যেতে পারে রাশিয়া তাদের কিছু লক্ষ্য অর্জন করেছে, কিছু করতে পারেনি’।
যুদ্ধের কারণে রাশিয়াকে কি একঘরে করা গেছে?
যুদ্ধের পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলো যে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, তার লক্ষ্য ছিল রাশিয়াকে দুর্বল করা, একঘরে করে ফেলা। শুরুতে রুশ অর্থনীতিতে এর বিরাট ধাক্কা লেগেছিল। পশ্চিমা কোম্পানিগুলো যখন একের পর এক রাশিয়া থেকে ব্যবসা গুটাতে শুরু করে, রাশিয়ার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য চালানো কঠিন করে তোলা হয়, তখন রুশ মুদ্রা রুবলের মানে বিরাট ধস নামে।
অন্যদিকে ইউরোপের যেসব দেশ নেটো সামরিক জোটে যোগদানের পক্ষে একটা নিরপেক্ষ অবস্থানে ছিল, সেসব দেশ একের পর নেটো জোটে যোগ দেবে বলে ঘোষণা দিতে থাকে। তার মানে যুদ্ধের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট পুতিন যা অর্জন করতে চেয়েছিলেন- নেটোকে ঠেকানো- যুদ্ধের কারণে কি তার উল্টো ফল হয়নি?
সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব রাজনীতির ভারসাম্য রাশিয়ার বিপক্ষে চলে গেছে কিনা- সেটা নিয়ে দু’ধরণের মতামতই আছে।
‘একদিকে নেটো বলছে, রাশিয়া প্রচণ্ডভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে, সামরিক, অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক সমস্ত দিক থেকে। বৃহৎ সামরিক শক্তি হিসেবে রাশিয়ার যে একটা বিরাট ভাবমূর্তি ছিল, সেটা নষ্ট হয়েছে। তাদের সেনাবাহিনীর বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কাজেই রাশিয়া দেখতে যতটা শক্তিধর মনে হয়, কার্যত তারা ততটা নয়।’
সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, ইউরোপের অনেক দেশ এখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলে গেলেও বাকি বিশ্ব, বিশেষ করে এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার দেশগুলো কিন্তু সেরকম কট্টর কোনো অবস্থান নেয়নি।
‘কাজেই রাশিয়া একঘরে হয়ে গেছে এটা বলা যাবে না বলে মনে করেন মাহমুদ আলী।
এই যুদ্ধ কতটা বদলে দিয়েছে বিশ্ব রাজনীতি?
‘৯০ দশকের শুরুতে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ধসে পড়ল, তখন কমিউনিজমের পতনকে পশ্চিমা গণতন্ত্রের চূড়ান্ত বিজয় বলে ঘোষণা করেছিলেন অনেকে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা তো ‘দ্য অ্যান্ড অব হিস্ট্রি অ্যান্ড দ্য লাস্ট ম্যান’ বলে একটা বই লিখে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু ইউরোপে আবার এক রক্তাক্ত যুদ্ধে একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বব্যবস্থা উলট-পালট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
আমেরিকান পাবলিক ইউনিভার্সিটি সিস্টেমের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একজন শিক্ষক, সৈয়দ ইফতেখার আহমেদ বলেন,‘এই যুদ্ধ বিশ্ব রাজনীতিকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। ফ্রান্সিস ফুকুয়ামার ধারণা ছিল, স্নায়ু যুদ্ধের অবসানের পর ইতিহাসের পরিসমাপ্তি ঘটবে। অর্থাৎ ইউরোপে বোধ হয় আর কোনো যুদ্ধ ঘটবে না। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিশ্ব জুড়ে উদার গণতান্ত্রিক এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আধিপত্য কায়েম হবে। কিন্তু তাদের হিসেবে একটা বড় ভুল ছিল।’
সৈয়দ ইফতেখার আহমেদ আরো বলেন, ‘রাশিয়ার যে আবার পুনরুত্থান ঘটতে পারে, সেখানে যে একটি পশ্চিমাবিরোধী রুশ জাতীয়তাবাদ মাথাচাড়া দিতে পারে, এই সমীকরণটা গণায় ধরা হয়নি। প্রেসিডেন্ট পুতিনের নেতৃত্বে রাশিয়া তার অর্থনীতি এবং সামরিক শক্তিকে সংহত করার পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থার বিরুদ্ধে মূলত এক বড় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। বিশ্ব জুড়ে এখন যে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকব্যবস্থার প্রাধান্য, এটি বজায় থাকবে কিনা, সেটাই এখন পশ্চিমা দুনিয়ার সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা।’
তিনি বলেন, সবকিছুই এখন নির্ভর করছে ইউক্রেন যুদ্ধের ফলাফলের ওপর।
চীন যদি এই যুদ্ধে রাশিয়ার পাশে দাঁড়ায় তখন কি ঘটবে?
ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে গত কয়েক দিন ধরে যে খবরটি সবচেয়ে বড় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে, তা হলো চীনের ভূমিকা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তনি ব্লিনকেন বলেছেন, তাদের কাছে এমন গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে চীন রাশিয়াকে হয়তো সামরিক অস্ত্রশস্ত্র জোগান দিতে পারে।
সামরিক সরঞ্জামের অভাবে রাশিয়া এখন বেকায়দায় আছে। কাজেই চীন যদি সত্যি সত্যি রাশিয়াকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে, তাহলে সেটিকে অনেক বিশ্লেষক একটা ‘গেম চেঞ্জার’ বলে বর্ণনা করছেন। চীন যদি এই কাজ করে, তাহলে কি পুরো পরিস্থিতি আমূল বদলে যেতে পারে?
এ প্রশ্নের উত্তরে সৈয়দ মাহমুদ আলী বলছেন, বহু দশক ধরে পশ্চিমা দেশগুলোর একটা বড় দুশ্চিন্তা ছিল, রাশিয়া এবং চীন যদি তাদের বিরুদ্ধে একজোট হয়, তখন কি হবে। ‘ইউরেশিয়া অর্থাৎ ইউরোপ এবং এশিয়া, দুই মহাদেশ জুড়ে যে বিশাল ভূখণ্ড, সেখানে যদি কোনো দিন একটি দেশ বা একাধিক দেশের মৈত্রী জোট যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, সেটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটা বিরাট বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এজন্যেই পশ্চিমা শক্তি রাশিয়াকে চীন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। তারা চীনকে একঘরে করে চীনবিরোধী সংগ্রামের চেষ্টা করেছে। কিন্তু সেটা হয়নি। পশ্চিমা দেশগুলোকে এখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে। অন্যদিকে রাশিয়া এখন চীনের আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
চীন রাশিয়াকে সরাসরি সামরিক সহায়তা দেবে কিনা বা কতদূর দেবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। সৈয়দ মাহমুদ আলী মনে করেন, চীন তাদের মধ্যম এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থের কথা মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নেবে।
তিনি আরো বলেন, ‘যদি চীন এবং রাশিয়া সত্যি একটি মৈত্রী জোটে পরিণত হয়, যখন নেটো কিনা ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়ে একটি প্রক্সি ওয়ার বা পরোক্ষ যুদ্ধ চালাচ্ছে, তখন বিশ্ব রাজনীতিতে আমরা একটা বিরাট বিভাজন বা দ্বি-মেরুকরণ দেখব। এর একদিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং নেটো জোট, অন্যদিকে চীন-রাশিয়া এবং তাদের সহযোগী দেশগুলো।’
সৈয়দ মাহমুদ আলী মনে করেন, এটি হবে বিশ্ব রাজনীতির জন্য খুবই বিপজ্জনক এক মোড়।
তিনি আরো যোগ করেন, ‘এই দুই মেরুর দেশগুলোর মধ্যে যখন যুদ্ধ চলছে, যাদের মধ্যে রয়েছে পাঁচটি পরমাণু শক্তিধর দেশ, এই পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের শক্তি, ক্ষমতা এমনকি ইচ্ছে পর্যন্ত যাদের আছে, সেখানে গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে।’
ইউক্রেন যুদ্ধের মাধ্যমে কি আসলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে?
কয়েক দিন আগে প্রেসিডেন্ট পুতিনের এক সাবেক মুখপাত্র সের্গেই মারকভ, যিনি এখন মস্কোর ইন্সটিটিউট অব পলিটিক্যাল স্টাডিজের একজন পরিচালক, বিবিসিকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। ইউক্রেনে এখন যে যুদ্ধ, সেটি তার ভাষায়, আসলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নেটোর যুদ্ধ। তার মতে, ইউক্রেনের এই হাইব্রিড যুদ্ধ কার্যত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
আমেরিকান পাবলিক ইউনিভার্সিটি সিস্টেমের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের শিক্ষক সৈয়দ ইফতেখার আহমেদ অবশ্য এই যুদ্ধকে এখনই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বলতে রাজী নন। তবে এরকম একটা যুদ্ধের সম্ভাবনা তিনি উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
তিনি আরো বলেন, ‘এটা হয়তো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নয়। কিন্তু এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে যে মেরুকরণ আমরা দেখতে পাচ্ছি, তাতে করে যুক্তরাষ্ট্র হতে শুরু করে ইউরোপের অনেক দেশই কিন্তু পরোক্ষভাবে এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। রাশিয়ার অনেক নীতিনির্ধারকও মনে করেন, রাশিয়া এখন পশ্চিমাদেশগুলোর বিরুদ্ধে লড়ছে। এর ফলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের যে একটা হুমকি তৈরি হয়েছে, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।’
সূত্র : বিবিসি
Leave a Reply