ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া মানুষের মুখ থেকে ভয়াবহতার কথা শুনেছেন সংবাদকর্মীরা। কয়েকটি গণমাধ্যম থেকে নেওয়া হলো ভয়াল অভিজ্ঞতার বর্ণনা :
দিকহারা পাখিদের মতো বিভ্রান্ত
ওজগুল আরও বলেন, ‘আমি ল্যাম্পের (বাতি) দিকে তাকালাম। মনে হচ্ছিল ল্যাম্পটি ভেঙে যাচ্ছে। আমরা আমাদের তিন বছর বয়সী ভাতিজাকে সঙ্গে নিয়ে লাফিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।’
ওজগুল বলেন, ‘আমাদের চোখের সামনে আফটার শকে একটি ভবনের জানালাগুলো ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়।’
ভূমিকম্পে ওজগুলদের ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের আশপাশের পাঁচটি ভবন ধসে গেছে। তিনি বলেন, অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে এখন খুব ঠাণ্ডা রয়েছে। তুষারপাত হচ্ছে। এটা আরেক উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
ওজগুল বলেন, সব লোক এখন রাস্তায় অবস্থান করছেন। তারা কী করবে, তা নিয়ে বিভ্রান্ত। ভূমিকম্পের ঘটনায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে তুরস্ক। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়া লোকজনকে উদ্ধারে জোর তৎপরতা চলছে।
কেউ কোথাও বেঁচে আছে কি
দক্ষিণাঞ্চলীয় তুর্কি শহর গজিয়ানতেপ। নিজ বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন আরদেম। তুরস্কের ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী এক ভূমিকম্পে মুহূর্তের মধ্যে তার ঘুম ভেঙে যায়। তিনি বলেন, ‘আমার ৪০ বছরের জীবনে এমন ভূমিকম্প কখনই দেখিনি। আমরা অন্তত তিনবার অত্যন্ত জোরালোভাবে কেঁপে উঠলাম। ঠিক যেভাবে দোলনায় শিশুরা দোল খায়।’
আরদেম বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে বাঁচার জন্য লোকজন তাদের গাড়িতে পালিয়ে যান। আমার ধারণা গজিয়ানতেপের কোনো বাড়িতে একজন মানুষও আর নেই।’
গজিয়ানতেপ থেকে ১৩০ মাইলেরও বেশি পশ্চিমের শহর আদানায় বসবাস করেন নিলুফার আসলান। গতকালের এই ভূমিকম্পে যখন তাদের পঞ্চম তলার অ্যাপার্টমেন্ট কেঁপে ওঠে তখন তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা সবাই মারা যাবেন, এমনটা ধরেই নিয়েছিলেন নিলুফার।
তিনি বলেন, ‘আমার জীবনে এমন ভূমিকম্প কখনো দেখিনি। আমরা প্রায় এক মিনিটের জন্য দুলছিলাম। তখন আমি পরিবারের সদস্যদের বললাম, ভূমিকম্প হচ্ছে। চল সবাই একসাথে মরি… এই বিষয়টিই তখন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল।’
ভূমিকম্প থেমে যাওয়ায় বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েন আসলান। তিনি বলেন, ‘আমি কোনোকিছু সঙ্গে নিতে পারিনি। কেবল জুতো পরেই বাইরে চলে এসেছি। আমাদের ভবনের আশপাশের অন্তত চারটি ভবন একেবারে ধ্বংস হয়েছে।’
থাকে শুধু হাহাকার
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল গজিয়ানতেপ থেকে ৩০০ মাইল পূর্বের দিয়ারবাকির এলাকায় উদ্ধারকারীদের সাহায্য করার জন্য রাস্তায় ছুটে আসেন লোকজন। ৩০ বছর বয়সী এক যুবক বলেন, সর্বত্রই চিৎকার। ‘আমি হাত দিয়ে পাথর সরাতে শুরু করলাম। আমরা বন্ধুদের সহায়তায় আহতদের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করেছি। কিন্তু আর্তনাদ থামছে না। এরপর উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা আসেন।’
শহরের অন্য একটি এলাকায় মুহিতিন ওরাক্কি নামের এক ব্যক্তির পরিবারের সাত সদস্য চাপা পড়েছেন বলে জানান তিনি। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেছেন, আমার বোন এবং তার তিন সন্তানও চাপা পড়েছে। এবং তার স্বামী, শ্বশুর এবং শাশুড়িও চাপা পড়েছেন।
ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে প্রায় দুই ঘণ্টার দূরত্বে সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে অসংখ্য ভবন ধসে পড়েছে। সেখানকার স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক জিয়াদ হাগে তাহা বলেন, বিপর্যয়ের পর আহত ব্যক্তিরা ঢেউয়ের মতো ছুটে আসছেন।
Leave a Reply