1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০৪ পূর্বাহ্ন

সেই লিমন এখন গণবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৫ মার্চ, ২০২০

উচ্চমাধ্যমিকের শুরুতে র‌্যাবের গুলিতে পা হারিয়েছিলেন কৃষক পরিবারের ১৬ বছরের কিশোর লিমন হোসেন। কিন্তু শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে যাননি। অদম্য সেই লিমন এখন ২৫ বছরের যুবক। সাভারের আশুলিয়ার গণবিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) আইন বিভাগে শিক্ষকতা করছেন তিনি। গত ১০ ফেব্রুয়ারি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন তিনি।

গত ৯টি বছর ছিল লিমনের জন্য চরম যন্ত্রণার। ছিল সন্ত্রাসী পরিচয়ের যন্ত্রণা, কাটা পা নিয়ে নিজেকে বয়ে বেড়ানোর যন্ত্রণা। মাসে মাসে আদালতে হাজিরার যন্ত্রণাও ছিল। গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল লিমনের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিল। সেই দুঃসহ পরিস্থিতিকে পায়ে দলে এগিয়েছেন লিমন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকেও পড়ালেখা করেছিলেন। সঙ্গে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে ভর্তি পরিক্ষা দিয়েছিলেন। তবে কৃতকার্য না হওয়ায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তাকে গণবিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ করে দিয়েছিলেন। ২০১৩ সালে আইন বিভাগে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে।

শিক্ষক লিমন হোসেন বলেন, ‘আমি অন্ধকার এক গুহায় আটকে গিয়েছিলাম।’ আইনের প্রভাষক লিমন হোসেন বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রের কাছে যতটা নির্যাতিত হয়েছি, তার চেয়ে বেশি মানুষের স্নেহ, সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছি।’

শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখেননি লিমন হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার জীবনের মূল লক্ষ্য অসহায়, নির্যাতিত মানুষের জন্য কাজ করা। তাদের পাশে থাকা। বাংলাদেশে মানুষকে কীভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে, আমার চেয়ে ভালো কেউ বর্ণনা করতে পারবেন না। স্বপ্ন দেখতে মানা নেই। আমিও স্বপ্ন দেখছি, এর পর আমি ব্যারিস্টারি পড়তে চাই।

লিমন শিক্ষক হিসেবে অনেক ভালো বলে জানিয়েছেন তার ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা। লিমনের জন্য শুভ কামনা জানিয়েছেন গণবিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেলোয়ার হোসেন ও শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

২০১১ সালের ২৩ মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম সাতুরিয়ায় নিজের বাড়ির পাশে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন লিমন। বাড়ির পাশের মাঠ থেকে গরু আনতে গেলে র‌্যাব সদস্যরা এক সন্ত্রাসীকে ধরতে গিয়ে তাকে ধরে পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করেন। তার পর লিমনকে প্রথমে বরিশালের শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে স্থানান্তর করা হয় ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে। জীবন বাঁচাতে সেখানে তার বাঁ পা ঊরুর নিচ থেকে কেটে ফেলতে হয়। এ ঘটনার পর র‌্যাব লিমনসহ আটজনের নামে রাজাপুর থানায় দুটি মামলা করে। একটি অস্ত্র আইনে, অপরটি সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে।

এর পর ওই বছরের এপ্রিলে লিমনকে নিয়ে খবর ছাপে বিভিন্ন গণমাধ্যম। এতে প্রবল প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন মহল থেকে ব্যাপক প্রতিবাদ উঠেছিল। রাষ্ট্রযন্ত্রের দেওয়া সব অপবাদ অসত্য প্রমাণ করে লিমন নতুন জীবন ফিরে পান। পা হারানো লিমনকে রাষ্ট্রীয় হয়রানির কঠিন বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয়।

তরুণ লিমন পিজিএস কাউখালী কারিগরি বহুমুখী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০১০ সালে এসএসসি এবং ২০১৩ সালে এইচএসসি পাস করেন। ২০১৭ সালে গণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স এবং ২০১৯ সালে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com