জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত বছর ইসরায়েলি সেনাদের হাতে ১৭০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে শিশুর সংখ্যা ছিল ৩০। এই সংখ্যাটি অধিকৃত পশ্চিমতীর ও পূর্ব জেরুজালেমে। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি মাস শেষ হতে না-হতেই শুধু পশ্চিমতীরে ২৯ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছে, যার মধ্যে ৫টির বেশি শিশু রয়েছে। সম্প্রতি ইসরায়েল প্রায় প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করছে। আর প্রতিটি অভিযানে ফিলিস্তিনি হতাহতের ঘটনা ঘটছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, চলতি বছর ইসরায়েলের হাতে ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা পূর্বের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।
আল জাজিরাসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বৃহস্পতিবার পশ্চিমতীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলের অভিযানে ৯ জন নিহতের পর সেখানে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এরপর শুক্রবার পূর্ব জেরুজালেমে ইহুদিদের উপাসনালয় সিনাগগে হামলায় ৭ জন নিহতের ঘটনায় উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সিনাগগে হামলার জেরে ৪২ জনকে আটক করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের পুলিশ জানিয়েছে, ১৩ বছরের বালক ওই হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। এ ছাড়া পুরাতন জেরুজালেমে গতকাল পৃথক একটি হামলায় দুইজন আহত হয়েছেন। এমনই উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে ফিলিস্তিনে। এমন তপ্ত পরিস্থিতির আড়ালে রয়েছে ইসরায়েলের ‘ব্রেক দ্য ওয়েভ’ নামের বিশেষ সামরিক অভিযান। মূলত এই অভিযানের কারণেই ফিলিস্তিনিরা মারা যাচ্ছেন। ইসরায়েল বলছে, তারা সশস্ত্র বিদ্রোহীদের দমনের লক্ষ্যেই এই অভিযান শুরু করেছে। কিন্তু আদতে দেখা যাচ্ছে, বেসামরিক লোকসহ ফিলিস্তিনি শিশুরাও ইসরায়েলের বন্দুকের টার্গেটে পরিণত হচ্ছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে হাতেগোনা কয়েকটি সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠী নিজেদের ‘জেনিন ব্রিগেডস’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। আরও কয়েকটি গোষ্ঠী আত্মপ্রকাশ করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নাবলুস ব্রিগেডস, লায়নস ডেন, বালাতা ব্রিগেডস এবং অতিসম্প্রতি জেনিনে আত্মপ্রকাশ করা ইবাদ ব্রিগেডস। এসব মুক্তিকামী ফিলিস্তিনি সংগঠনগুলো সাধারণ ইসরায়েলের তল্লাশি চৌকি লক্ষ্য করে হামলা করে থাকে। এর জবাবে ইসরায়েল অভিযান পরিচালনা করে থাকে। এর মধ্যে ইসরায়েলে এসেছে কট্টর ডানপন্থি নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকার। আগের সরকারের তুলনায় নতুন সরকার উগ্র ডানপন্থিদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এমনই একজন হলেন ইতামার বেন-গভির। ১৯৯৪ সালে মসজিদে ২৯ ফিলিস্তিনিকে হত্যাকারী ইহুদি বারুচ গোল্ডস্টেইনের প্রতি সমর্থনের কথা জানিয়েছে বেন-গভির। বর্তমান সরকারের তিনি জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী। একই সঙ্গে পশ্চিমতীরে ইসরায়েলি বর্ডার পুলিশ বিভাগও নিয়ন্ত্রণ করবেন তিনি। তার কট্টর নীতির কারণে আগামী দিনগুলোয় এ ধরনের অভিযানে আরও ফিলিস্তিনির রক্ত ঝরবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
Leave a Reply