করোনা মানুষের মধ্যে অনেক পরিবর্তন এনেছে। বিশেষ করে, কারো কারো মাথায় মৃত্যুচিন্তা ভর করেছে। করোনার সময়ে অনেক মানুষ তার পরিবারের নিকটজনকে হারালেও শেষ দেখা দেখতে পারেননি। কবর দিতেও যেতে পারেননি। আবার অনেকের কবর পেতেও সমস্যা হয়েছে। সব মিলিয়ে কঠিন সময় গেছে। ওই সময়ের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে মানুষ সচেতন হওয়ার চেষ্টা করছে। বয়স্ক মানুষের কেউ কেউ মৃত্যুর পর
তার জন্য যাতে কবরের ব্যবস্থা করতে পরিবারকে বেগ পেতে না হয়, সে জন্য নিউইয়র্কে আগাম কবর কেনার চিন্তা করছেন। করোনার সময়ে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনের সংগ্রহে থাকা অনেক কবর বিক্রি হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে কবরের সংখ্যা কমে গেছে। এ কারণে বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে কবর সংগ্রহ করতে নতুন নতুন উদ্যোগ নিতে হচ্ছে। তারা কবরের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে কবরের জায়গার দাম আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এ কারণে সাধ্যের মধ্যে কবর কেনা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
জ্যামাইকার একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, আমাদের সংগ্রহে আগে অনেক কবর ছিল। এগুলো ছিল লং আইল্যান্ডে। এখনো সেখানেই কিছু কবর রয়েছে। তবে সংখ্যায় কম। কারণ করোনার সময় মারা যাওয়া আমাদের কমিউনিটির অনেকের জন্য কবর দিতে হয়েছে। আমরা আগে যে দামে কবর কিনেছিলাম, এখন লং আইল্যান্ডে সেই দামে কবর কেনা যাচ্ছে না। কবর কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। কারণ সেখানে কবরের জায়গাও আগের মতো অত বেশি নেই। একেকটি কবরের দাম এখন পড়ছে নয় হাজার ডলার। এই অর্থ দিয়ে একটি কবর কেনা অনেক পরিবারের পক্ষে সম্ভব না-ও হতে পারে। আমাদের মধ্যে যাদের এ দেশে কবর কেনার সামর্থ্য নেই বা তার পরিবারের দাফন-সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ বহন করার সক্ষমতা নেই, তাদের জন্য কমিউনিটির বিভিন্ন মানুষের সহায়তা নিয়ে আমরা কবরের ব্যবস্থা করে থাকি।
সূূত্র জানায়, এ দেশে যারা বাস করেন ও যাদের বয়স বেশি, তারা অনেকেই আগে মনে করতেন, তিনি মারা গেলে যাতে তার দেশের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে কিংবা নিজের গ্রামের এলাকার কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে বা সেখানে তাকে কবরে সমাহিত করা হয়। এ জন্য মৃত ব্যক্তির জীবিত থাকা অবস্থার ইচ্ছার ওপর ভিত্তি করে এখান থেকে দেশে লাশ নেওয়ার ব্যবস্থা করা হতো। এখন এ ক্ষেত্রে মানুষের চিন্তাধারায় কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। এ কারণে নিউইয়র্কে যেসব বয়স্ক মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আছেন, দেশে পরিবার-পরিজন তেমন নেই, সবাই এখানে থাকছেন, তারা মনে করছেন, তিনি মারা গেলে তাকে দেশে কবর দেওয়া হলে কেউ তার কবর জিয়ারত করতে যেতে পারবে না। এখানে কবর দেওয়া হলে অন্তত বছরে একবার হলেও সন্তানেরা যেতে পারবে। বাংলাদেশে হলে অনেক সন্তান বছর বছর বাবা-মা কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যের মৃত্যু হলে তার কবর জিয়ারত করার জন্য যেতে পারবে না। তাই সব দিক বিবেচনা করে তারা দেশের পরিবর্তে নিউইয়র্কের মাটিতেই সমাহিত হতে চাইছেন।
এ ব্যাপারে জ্যামাইকার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটির ওই নেতা বলেন, আসলে মৃত ব্যক্তির দেহ বাংলাদেশে নিয়ে যেতে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অনেক সময় লাগে। আবার লাশ দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া করতেও বড় অঙ্ক খরচ হয়। লাশ দেশে পৌঁছার পর লাশবাহী গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যেতেও অনেক সময় ও অর্থ ব্যয় হয়। ইসলামের নিয়ম অনুসারে, কেউ মারা গেলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব তার লাশ দাফনের ব্যবস্থা করতে হবে।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও এর সঙ্গে আগ্রহীরা কবর কেনার জন্য যোগাযোগ করছেন। কিন্তু পছন্দমতো জায়গায় কবর কিনতে পারছেন না। তার পরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
জেএমসির পরিচালনা পরিষদের জয়েন্ট সেক্রেটারি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার বলেন, লং আইল্যান্ড কবরস্থানে আমাদের কেনা কবর রয়েছে। তবে কবরসংখ্যা কম থাকায় আমরা আগাম কোনো কবর এখন বিক্রি করতে পারছি না। আমরা চেষ্টা করছি নিউজার্সিতে কবর কিনতে। নিউজার্সিতে কবর কেনা সম্ভব হলে কবরের সংখ্যা বাড়বে, তখন কবরের দামও তুলনামূলক কম হবে। আগে নিউইয়র্কে বসবাসকারী বেশির ভাগ বাংলাদেশি মুরব্বি চাইতেন, মৃত্যুর পর তার কবর যেন দেশের মাটিতে হয়। কিন্তু করোনার পর অনেকেই সেই মনোভাব পরিবর্তন করছেন, চাইছেন এখানেই সমাহিত হতে।
Leave a Reply