পুলিশের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি কলেজছাত্র সৈয়দ ফয়সল (২০) হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে সেমাবার অপরাহ্নে ক্যাম্ব্রিজ সিটি হলের সামনে জড়ো হওয়া শতশত মানুষের সমাবেশে হাজির হয়ে মেয়র সম্বুল সিদ্দিকী বলেছেন, ‘আজ আমি আপনাদের দুঃখবোধ, কষ্ট, হতাশা আর বিভ্রান্তির সাথে সংহতি প্রকাশ করছি। সিটির মেয়র হিসেবে আমাদের অনেক কাজ অসমাপ্ত রয়েছে, যেগুলো সম্পন্ন করতে হবে। এমন পরিস্থিতির আর অবতারণা হবে না-এমন প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে।’
মেয়রের পাশে এ সময় ছিলেন সিটির পুলিশ কমিশনার ক্রিস্টিন ইলো, মিডলসেক্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি ম্যারিয়েন রায়ান, ক্যাম্ব্রিজ সিটির ম্যানেজার ঈ-য়েন হুয়াং-সহ পদস্থ কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব নিউইংল্যান্ড (বেইন)’র ডাকে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে মানবাধিকার নিয়ে বস্টন এলাকায় কর্মরত ৫১টি সংগঠনের সাথে হাজির হন আরিফের ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেট্স’র শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও। ছিলেন ‘ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার্স’ এবং ‘কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশন্স’ (কেয়ার), মুসলিম জাস্টিস লীগ, বস্টন সাউথ এশিয়ান কোয়ালিশন’র কর্মকর্তারাও। অর্থাৎ ফুসে উঠেছে গোটা কম্যুনিটির বিবেক।
উদ্ভুত পরিস্থিতির আলোকে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে ফয়সল হত্যার তদন্ত অনুষ্ঠানের পর দায়ী অফিসারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রক্রিয়া অবলম্বনের আহ্বানে ক্ষুব্ধ জনতার মধ্য থেকে মেয়রের সাথে কথা বলেন ইকবাল ইউসুফ, সালাহউদ্দিন চৌধুরী, শাহাবুদ্দিন চৌধুরী, আব্দুল আজিজ, মোহাম্মদ রহমান বাবুল প্রমুখ।
উল্লেখ্য, নিজ বাসার জানালা দিয়ে লাফিয়ে খালি গায়ে ছুরি হাতে নিজেকে জখমের চেষ্টা করেন ফয়সল-এমন ফোন পেয়ে একদল পুলিশ অকুস্থলে হাজির হয় এবং আরিফকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা চালান বলে তদন্ত কর্মকর্তাদের দাবি। পুলিশের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে ফয়সল বেশ কয়েক ব্লক দৌড়ে পালানোর চেষ্টাও করেন বলে পুলিশ বলেছে। পুলিশ আরো উল্লেখ করে যে, এক পর্যায়ে ফয়সল পেছনে ফিরে ছুরি উচিয়ে পুলিশের দিকে ধেয়ে আসছিলেন, সে সময়েই পুলিশ গুলি চালায় এবং ফয়সল গুরুতরভাবে আহত হন। রক্তাক্ত ফয়সলকে পুলিশের অ্যাম্বুলেন্সে নিকটস্থ হাসপাতালে নেয়ার পরই কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশের এ দাবির সাথে একমত নন ফয়সলের পরিবার ও তার ঘনিষ্ঠজনেরা। কারণ, ফয়সল ছিলেন মা-বাবার একমাত্র সন্তান। ৭ বছর আগে ইমিগ্র্যান্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। হাই স্কুল পেরিয়ে ইউম্যাসের বস্টন ক্যাম্পাসে ভর্তি হন দু’বছর আগে। কলেজেন সহপাঠি এবং শিক্ষকেরাও উল্লেখ করেছেন, ফয়সল কখনোই উচ্ছৃঙ্খল ছিলেন না। মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্নেও ছিলেন তৎপর। ক্ষুব্ধ কম্যুনিটির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সিটি মেয়র, পুলিশ কমিশনার উভয়েই জানান, তদন্ত চলছে সর্বোচ্চ নিরক্ষেতায়। তবে এজন্য সময় দিতে হবে।
ক্যাম্ব্রিজ সিটি প্রশাসনের একটি সূত্রে বলা হয়েছে, এ ধরনের তদন্ত করতে ৬ মাসের অধিক সময় লাগতে পারে। পুলিশ কমিশনার ক্রিস্টিন ইলো জনতাকে স্বস্তি দিয়ে বলেন, জনগণের আস্থা অটুট রাখতে আমরা সাধ্যমত সচেষ্ট রয়েছি। কারণ এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা প্রশাসনের সাথে সর্বসাধারণের সম্পর্কে অবনতি ঘটাতে পারে। এ সময় র্যালিতে স্লোগান উঠে ‘জাস্টিস ফর ফয়সল’, ‘ফয়সল নীডেড হেল্্প-নট বুলেটস’। সিটি মেয়র জানান, তদন্ত চলছে। ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিসে তদন্ত রিপোর্ট পাঠানোর পর তারা সিদ্ধান্ত নেবেন কী ধরনের অভিযোগ গঠিত হবে গুলি বর্ষণকারির বিরুদ্ধে।
ফয়সলের পারিবারিক নাম ছিল প্রিন্স। এ তথ্য কেয়ারের কর্মকর্তাগণকে জানিয়েছেন ফয়সলের বাবা সৈয়দ মুজিবউল। তিনি বলেছেন, প্রিন্স ছিল ভ্রমণপ্রিয়, ছবি আঁকতেও ভালবাসতো। পারিবারিক মূল্যবোধে ছিল একাকার। মেধাবি ছাত্র হিসেবেও তার খ্যাতি ছিল। সহপাঠিদের সাথে খেলাধূলাকে প্রাধান্য দেয় সব সময়। এমন একটি মানুষ কিভাবে পুলিশের নিশানা হলো সেটি ভাবতে পারছি না।
কম্যুনিটির দাবি পরিপ্রেক্ষিতে বস্টনের পুটনাম এভিনিউতে অবস্থিত মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র হাই স্কুলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত একটি সভা হবে। সে সময় লোকজনের বক্তব্য/মতামত শ্রবণ করা হবে ফয়সলের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে। এরপর ১৮ জানুয়ারি বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত সিটি হলে আরেকটি বিশেষ মিটিং হবে পুলিশী আচরণের আলোকে। উল্লেখ্য, ফয়সলকে গুলিবর্ষণকারি পুলিশ অফিসারের নাম এখনও গোপন রাখা হয়েছে। ৭ বছরের পুরনো এই অফিসারকে প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে বলে সিটি মেয়র জানান।
Leave a Reply