যখন বিষন্ন মনে আইপিএল নিলাম থেকে চোখ সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বাংলাদেশী ক্রিকেটপ্রেমীরা, তখনই চমকটা এলো। আবারো কলকাতা বাংলাদেশীদের মুখে হাসি ফেরালো, বাঙালী দুই ক্রিকেটারকে আপন করে নিলো। প্রথম ডাকে অবিক্রীত থাকা সাকিব আল হাসান ও লিটন দাসকে ভিত্তিমূল্যেই দলে ভিড়িয়েছে শাহরুখ খানের কলকাতা নাইট রাইডার্স।
এবারের মিনি নিলামে শেষ মুহূর্তে এসে তাদের দু’জনকে দলে নেয় কলকাতা নাইট রাইডার্স। এর আগে আগের আসরে বল হাতে ভালো করায় মোস্তাফিজুর রহমানকে রিটেইন করে দিল্লি ক্যাপিটালস। ফলে প্রথমবারের মতো একই আসরে বাংলাদেশের তিনজন ক্রিকেটারকে আইপিএলে মাঠ মাতাতে দেখা যাবে। এইদিন সাকিবকে দেড় কোটি ও লিটন দাসকে ৫০ লাখ রূপিতে দলে ভেড়ায় নাইট শিবির।
আইপিএলে বাংলাদেশীদের ইতিহাস খুব একটা সমৃদ্ধ নয় বরং পারফরম্যান্সের গ্রাফটা বেশ নিচের দিকেই বলা যায়। তবে গড়পড়তা সাকিব আল হাসান আর চমক দেখানো মোস্তাফিজুর রহমানের সৌজন্যে অন্তত বলার মতো কিছু খুঁজে পেয়েছে বাংলাদেশ। এই দু’জন ছাড়া আইপিএলে সুযোগ পেয়েছিলেন আরো চারজন ক্রিকেটার। তবে বেশিদূর আগায়নি তাদের ক্যারিয়ার।
বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক আইপিএলে সুযোগ পাওয়া প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার। টুর্নামেন্টের প্রথম আসর, অর্থাৎ ২০০৮ সালে ৫০ হাজার ডলারে (৪১ লাখ ৪২ হাজার টাকা) রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুতে ডাক পান। কিন্তু একাদশে সুযোগ মিলে মাত্র ১টি ম্যাচে। যেখানে ২ ওভার বল করে রাজ্জাক খরচ করেছিলেন ২৯ রান।
২০০৯ সালের আইপিএলের দ্বিতীয় আসরে আইপিএলে সুযোগ মেলে দুই বাংলাদেশী। যাদের একজন হলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। নিলামে আশরাফুলকে প্রায় ৬২ লাখ ১২ হাজার টাকায় কিনে নেয় মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। কিন্তু খেলার সুযোগ হয় মাত্র একটি ম্যাচে। সুযোগ পেয়েও যেখানে ব্যর্থ আশরাফুল, সাজঘরে ফিরেন মাত্র ২ রান তুলে।
অন্যদিকে একই আসরে মাশরাফি মর্তুজাকে নিয়ে শুরু হয় অর্থযুদ্ধ। ৫০ হাজার ডলার ভিত্তিমূল্য থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে করতে যা পৌঁছায় ৬ লাখ মার্কিন ডলারে! অর্থাৎ, বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। নিলামে মাশরাফিকে নিজেদের করে নেয় কলকাতা। আর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশীদের মাঝে মাশরাফিই আইপিএলে সর্বোচ্চ মূল্যধারী ক্রিকেটার। তবে সুযোগ পেয়ে ব্যর্থ হওয়ায় এক ম্যাচেই থেমে যায় তার আইপিএল ক্যারিয়ার।
আইপিএল ইতিহাসেরই অন্যতম পরিচিত মুখ সাকিব আল হাসান। পারফরম্যান্স খুব একটা আকর্ষণীয় না হলেও, এবার দশমবারের মতো আইপিএলে খেলবেন তিনি। যেখানে ৭ আসরই খেলেছেন কলকাতার হয়ে। বাকি ২ আসর খেলেছেন সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের জার্সি গায়ে। কলকাতার দুইবার শিরোপা জয়েও ছিল সাকিবের অবদান। সব মিলিয়ে ৭১ ম্যাচে ২০ গড় আর ১২৫ স্ট্রাইক রেটে ৭৯৩ রান সাকিবের। আছে ৭.৪৪ ইকোনমিতে ৬৩ উইকেটও।
২০১২ ও ২০১৩ সালের আইপিএল আসরে পঞ্চম বাংলাদেশী হিসেবে আইপিএলে সুযোগ মিলে তামিম ইকবালের। মাঝে ২০১১ সালে সুযোগ পান সাকিব আল হাসান। ভিত্তিমূল্য ৫০ হাজার ডলারেই তামিম ডাক পেয়েছিলেন পুনে ওয়ারিয়র্সে। তবে প্রথম আসরে মাঠে এলেও কোনো ম্যাচ খেলা হয়নি তামিমের, আর দ্বিতীয় আসরে তাকে মাঠেই আনেনি ম্যানেজমেন্ট।
সাকিব আল হাসান আইপিএলে বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচিত মুখ হলেও মোস্তাফিজুর রহমান হলেন সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকা। প্রথম আসরেই সুযোগ পেয়ে বাজিমাত করেন তিনি, জিতে নেন সেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কারও। এখন পর্যন্ত ৪ আসরে ৪৬ ম্যাচ খেলে ৭.৮০ ইকোনমিতে সমান ৪৬ উইকেট নিয়েছেন তিনি। শিরোপা জিতেছেন হায়দ্রাবাদের হয়ে। মাঝে মুম্বাই ও রাজস্থান হয়ে এবার খেলছেন দিল্লির হয়ে।
মাঝে বিকল্প ক্রিকেটার হিসেবে লখনৌ তাসকিনকে দলভুক্ত করতে আমন্ত্রণ জানালেও জাতীয় দলের ব্যস্ত সূচির কারণে খেলা হয়নি। ফলে এবার সপ্তম বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএলে ডাক পেয়েছেন লিটন দাস। দেখা যাক, তিনি কতোটা সুযোগ পান, আর সুযোগ পেলেই বা কতোটা আলো ছড়াতে পারেন শত তারার ভিড়ে!
Leave a Reply