চরম আবাসন সংকটে পড়েছে ‘গৃহহীনদের রাজধানী’খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস শহর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব নিয়েই নগরীতে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন সেখানকার নতুন মেয়র কারেন বাস। ফক্স নিউজ, সিবিএস নিউজ, এবিসি নিউজ। স্থানীয় সময় রোববার তিনি নগরীর নতুন মেয়র হিসাবে দায়িত্ব নেন। পরদিন সোমবারই প্রথম কাজ হিসাবে তিনি ‘ঘর সংকট’ ঠেকাতে জরুরি অবস্থা জারি করেন। এই পদক্ষেপকে ‘ভূকম্প বদল’ আখ্যা দিয়ে মেয়র কারেন বাস বলেন, ‘এই পদক্ষেপ সমস্যাটি সমাধানের প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করবে।’ লস অ্যাঞ্জেলেস ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে শহরের প্রথম নারী মেয়র বাস বলেন, ‘আমি এই গৃহহীন সংকটকে মেনে নিতে পারছি না, যা ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে এবং এর প্রভাব পড়ছে আমাদের প্রত্যেকের ওপর।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগামী দিনে গৃহহীনদের নিয়ে একাধিক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করব।’ তিনি আরও বলেন, সম্মিলিত কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইতোমধ্যেই তিনি শহর বিভাগের প্রধান, গৃহহীন-সেবা প্রদানকারী এবং এলএ মেট্রোর সাথে দেখা করেছেন। ঘর সংকট নিরসনে কিছু পদক্ষেপও ঘোষণা করেছেন বাস-রাস্তা থেকে ক্যাম্পগুলো সরিয়ে দেওয়া হবে। অবিলম্বে ভাড়া করা হোটেলে তাদের আবাসন এবং অস্থায়ী আবাসন থেকে দীর্ঘমেয়াদে অস্থায়ী আবাসন ত্বরান্বিত করবেন। এসব কাজের জন্য প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাস। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও আধুনিক দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এই দেশেরই তৃতীয় বৃহত্তম অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়া। আর বিলাসিতা ও উন্নতির মানদণ্ডে বিশ্বের অন্যতম সেরা একটি শহর এই ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস। অথচ ঘর-বাড়ির অভাবে ফুটপাতে থাকতে হয় হাজার হাজার মানুষকে। গার্ডিয়ান। লস অ্যাঞ্জেলেস গৃহহীন সেবা কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, ফি বছরই শহরটিতে বেড়েই চলেছে গৃহহীনদের সংখ্যা। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পরিচালিত জনশুমারি অনুযায়ী ওই নগরীতে বর্তমানে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা ৬৯ হাজার ১৪৪ জন। বিগত বছরগুলোতে সেখানে গৃহহীনদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়লেও করোনা মহামারির সময়ে কিছুটা কমেছে বলে দাবি করেছে লস অ্যাঞ্জেলেস গৃহহীন সেবা কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেদনটি গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশ করা হয়। যদিও এই জনশুমারিতে পূর্ববর্তী হিসাবের চেয়ে কিছুটা অগ্রগতির তথ্য দেয়, লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির গৃহহীন জনসংখ্যার ৭০ শতাংশই এখনো বাইরে বসবাস করছে, যেখানে ৪৮ হাজার ৫৪৮ মানুষকে পুরোপুরি আশ্রয়হীন বলে মনে করা হয়। চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে মানবিক বিপর্যয়। সেখানে গৃহহীনদের তাঁবু, ছাউনি, গাড়ি, আরভি (রিক্রিয়েশনাল ভেহিক্যালস), অস্থায়ী কাঠামোতে, ফ্রিওয়ে, সেতুর নিচে, প্রধান শহরের পার্ক, সমুদ্রসৈকত, রাস্তায় এবং ফুটপাতে রাত কাটাতে হচ্ছে। জানা গেছে, লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টিতে প্রতিদিন গড়ে পাঁচজন ঘরবিহীন মানুষ মারা যায়।
Leave a Reply