এ দেশ আমার। আমাদের এ দেশ। এদেশের প্রতি ইঞ্চি মাটির সঙ্গে আমাদের অস্তিত্বের সম্পর্ক। রক্তের বাঁধন এ মাটির সঙ্গে। ইমানের বন্ধন এ মাটিতে। আমার ধর্ম আমাকে শিক্ষা দেয়-জীবনের বিনিময় হলেও দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে।
সাহাল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর পথে একদিন সীমান্ত পাহারা দেওয়া দুনিয়া ও এর ওপর যা কিছু আছে তা থেকে উত্তম। জান্নাতে তোমাদের কারও এক চাবুক পরিমাণ স্থানও দুনিয়া ও তার ওপরে যা আছে তা থেকে উত্তম। আল্লাহর পথে এক সকাল চলা বা এক বিকাল চলা দুনিয়া ও এর ওপরে যা আছে তা থেকে উত্তম’। (বুখারি ও মুসলিম)।
কুরআন-সুন্নাহে বারবার দেশপ্রেমের প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। ইসলাম প্রেমের ধর্ম। সুন্দর ও কল্যাণের ধর্ম। স্বদেশ ও স্বজাতির জন্য ইসলামের রয়েছে দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস। নবি ও সাহাবিদের জীবনে রয়েছে দেশপ্রেমের কীর্তিগাথা।
আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের ন্যায়পরায়ণ শাসকের আদেশ মেনে চল’ (সূরা নিসা : ৫৯)। অন্য আয়াতে এসেছে- ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অপরকে চিনতে পার। আর তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মর্যাদাবান সে, যে আল্লাহকে সর্বাধিক ভয় করে (সূরা হুজুরাত, আয়াত : ১২)।
হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘আমি খেদমতের নিয়তে রাসূলের সঙ্গে খায়বার অভিযানে গেলাম। অতঃপর যখন অভিযান শেষে নবি করিম (সা.) ফিরে এলেন, উহুদ পাহাড় তার দৃষ্টিগোচর হলো। তিনি বললেন, এ পাহাড় আমাদের ভালোবাসে, আমরাও একে ভালোবাসি (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৮৮৯)।
হুজুর (সা.) বিদায় হজের ভাষণে বলেন, ‘হে লোক সকল! জেনে রেখ! তোমাদের প্রতিপালক একজন, তোমাদের পিতা একজন। জেনে রেখ, অনারবের ওপর, আরবের ওপর অনারবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। সাদার ওপর কালোর, কালোর ওপর সাদার কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তবে তাকওয়ার ভিত্তিতে একজন আরেকজনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে পারবে’ (মুসনাদে আহমদ, ৫/৪১১; বাইহাকির সূত্রে দুররে মানসুর ৬/১২২)।
ইসলামের ১৪শ বছরের ইতিহাস অধ্যায়ন করলে যে কারও কাছে এ কথা দেদীপ্তমান হবে যে, পূর্বসূরি মনীষীরা দেশকে জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। মীর নিসার আলি তিতুমীর, টিপু সুলতান, হাজী শরীয়তুল্লাসহ অসংখ্য মুসলিম নেতা দেশের স্বাধীনতা, মানুষের ধর্মীয় ও জাগতিক অধিকারের জন্য জীবনদান করে গোটা উম্মতের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। ইসলামে দেশপ্রেমকে ইমানের অঙ্গ বলে আখ্যায়িত করা হয়। নিজ জন্মভূমির প্রতি নবি (সা.) যে ভালোবাসা ছিল, তা অসাধারণ।
শুধু তাই নয়, ইসলামের নবি (সা.) হৃদয়ে যেমন ছিল স্বদেশপ্রেম, তেমনি তার সাহাবায়ে কেরামের মাঝেও বিদ্যমান ছিল এ দেশপ্রেম। হিজরতের পর মদিনায় হজরত আবুবকর (রা.) ও হজরত বেলাল (রা.) জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। অসুস্থ অবস্থায় তাদের মনে-প্রাণে প্রিয় স্বদেশ মক্কার স্মৃতিচিহ্ন জেগে উঠেছিল। তারা জন্মভূমি মক্কার কথা স্মরণ করে আবেগে আপ্লুত হয়ে কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলেন।
এ অবস্থায় নবি করিম (সা.) সাহাবিদের মনের এ দুরবস্থা দেখে প্রাণভরে দোয়া করলেন-‘হে আল্লাহ! আমরা মক্কাকে যেমন ভালোবাসি, তেমনি তার চেয়েও বেশি মদিনার ভালোবাসা আমাদের অন্তরে দান করুন।’ (বুখারি) বিশ্বনবি (সা.)-এর দোয়া ও ভালোবাসার নিদর্শন যুগে যুগে সব দেশ-জাতিগোষ্ঠী ও বর্ণের মানুষের জন্য স্বদেশ প্রেমের অনন্য শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা।
লেখক : শিক্ষার্থী, কবি নজরুল কলেজ, ঢাকা
Leave a Reply