আল্লাহ তায়ালা প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মাদ সা:-কে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। সেই রহমতের চাদরে নিজেকে জড়াতে চাইলে রাসূল সা:-এর নাম শুনলে দরুদ শরিফ পাঠ করতে হবে। বিশ্বজাহানের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ নিজেও নবী করিম সা:-এর ওপর রহমত বর্ষিত করেন। ফেরেশতারাও নবীর সা:-এর ওপর দরুদ পাঠ করেন। আল্লাহ তায়ালা রাসূলের প্রতি দরুদ পাঠের নির্দেশ দিয়ে পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর প্রতি রহমত নাজিল করেন এবং তার ফেরেশতারাও নবীর জন্য রহমতের দোয়া করে। হে মুমিনরা! তোমরাও নবীর প্রতি রহমতের দোয়া করো এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’ (সূরা আহজাব-৫৬)
রাসূলের প্রতি দরুদ পাঠের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বর্ণনা করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ প্রেরণ করবে আল্লাহ তায়ালা তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করবেন।’ (সহিহ মুসলিম) রাসূল সা: আরো বর্ণনা করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করে আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন, তার ১০টি গুনাহ ক্ষমা করা হয় এবং তার জন্য মর্যাদার ১০টি স্তর বৃদ্ধি করে দেয়া হয়।’ (সুনানে নাসায়ি) রাসূলের প্রতি দরুদ পাঠকারী ব্যক্তি কিয়ামতের দিন রাসূল সা:-এর কাছে থাকবে।
এ সম্পর্কে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে- তিনি বলেন, রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘কিয়ামত দিবসে লোকদের মধ্যে ওই ব্যক্তিই আমার অধিক নিকটতম হবে, যে ব্যক্তি তাদের মধ্যে আমার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করবে।’ (তিরমিজি)
রাসূল সা:-এর রওজা মোবারকের কাছে গিয়ে তার প্রতি দরুদ পাঠ করলে রাসূল সা: তা সরাসরি শুনতে পান। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কবরের কাছে এসে আমার প্রতি দরুদ পাঠ করে, আমি তা সরাসরি শুনতে পাই। আর যে ব্যক্তি দূর থেকে আমার প্রতি দরুদ পাঠ করে, তা আমার কাছে পৌঁছে দেয়া হয়।’ (শুয়াবুল ঈমান)
প্রিয়নবী সা:-এর কোনো উম্মত যদি রাসূল সা:-এর প্রতি দরুদ পাঠ করে তাহলে তা ফেরেশতারা রাসূলের কাছে পৌঁছে দেন। এ সম্পর্কে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘মহান আল্লাহর কিছুসংখ্যক ফেরেশতা রয়েছেন, তারা পৃথিবীতে বিচরণ করতে থাকেন এবং আমার উম্মতের পক্ষ থেকে আমার কাছে সালাম পৌঁছে দেয়।’ (নাসায়ি ও দারেমি) অন্য হাদিসে রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা আমার প্রতি দরুদ পেশ করো। তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, নিশ্চয়ই তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছবে।’ (নাসায়ি)
শুধু তাই নয়, কারো সামনে রাসূল সা:-এর নাম উচ্চারিত হলে তার উচিত হবে রাসূল সা:-এর প্রতি দরুদ পাঠ করা। এ সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলায় মলিন হোক (সে অপমাণিত হোক) যার সম্মুখে আমার নাম উচ্চারিত হয়েছে, অথচ সে আমার প্রতি দরুদ পাঠ করেনি।’ (তিরমিজি) হজরত আলী রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি বড় কৃপণ, যার সম্মুখে আমার নাম উচ্চারণ করা হয়, অথচ সে আমার প্রতি দরুদ পাঠ করে না।’ (তিরমিজি)
লেখক : প্রভাষক, গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা, যশোর
Leave a Reply