ফিফা বিশ্বকাপের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালের মাঠে বিখ্যাত তারকাদের বিরুদ্ধে তিনি একা। একের পর এক সেভ। গোটা ব্রাজিলের বিরুদ্ধে একাই লড়ে গেলেন ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক ডমিনিক লিভাকোভিচ। মাঠে নেইমার, ভিনিসিয়াস জুনিয়র, লুকা মদ্রিচ এবং ইভান পেরিসিচের মতো বিখ্যাত তারকাদের উপস্থিতি সত্ত্বেও সবার নজর কেড়েছেন ২৭ বছর বয়সী এই তারকা।
গতকাল শুক্রবারের ম্যাচে নেইমারের চারটি আক্রমণ, লুকাস পাকেতার দুটি আক্রমণ এবং ভিনিসিয়াস জুনিয়ার ও অ্যান্টনির একটি আক্রমণকে সহজেই আটকে দেন ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক। আর ৯০ মিনিটে একাই ব্রাজিলকে আটকে দিলেন ডমিনিক লিভাকোভিচ।
হিন্দুস্থান টাইমস, আনন্দবাজার পত্রিকাসহ একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ব্রাজিল বনাম ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচের অতিরিক্ত সময়েও ডমিনিক লিভাকোভিচ পাহাড় হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এর ফলে তিনি এবং তার দল ১১৫ মিনিট পর্যন্ত ব্রাজিলকে ধরে রাখতে পেরেছিলেন।
আবার এক্সট্রা টাইমের প্রথমার্ধের শেষের অতিরিক্তি সময়ে ব্রাজিল লিড নেওয়ায় নেইমার তাকে পরাজিত করে গোল করেছিলেন। যদিও দ্বিতীয় অধ্যায় ক্রোয়েশিয়া পাল্টা আঘাত করে এবং লিভাকোভিচ ক্রোয়েশিয়াকে নিশ্চিন্ত করেন। কারণ খেলাটিকে পেনাল্টিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য শক্তিশালী ছিলেন।
১২০ মিনিট জুড়ে তিনি একটি অবিশ্বাস্য ১১টি সেভ করেছিলেন, যেখানে ব্রাজিল গোলরক্ষক অ্যালিসন একটিও সেভ করতে পারেননি। পরে পেনাল্টিতে রদরিগোর শটটি সেভ দিয়ে এক ম্যাচে মোট ১২টি সেভ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বীরত্ব পেনাল্টি শুটআউটে অব্যাহত ছিল, কারণ তিনি ক্রোয়েশিয়ার লিড রক্ষা করার জন্য ব্রাজিলের প্রথম প্রচেষ্টাটি রক্ষা করেছিলেন এবং মারকুইনহোস শেষ স্পট কিকটি পোস্টে আঘাত করায় ক্রোয়েশিয়া এই ম্যাচে জয়ী হয়।
কে এই ডমিনিক লিভাকোভিচ?
লিভাকোভিচ এন কে জাগরেব যুব অ্যাকাডেমির মাধ্যমে বিশ্বফুটবলে এসেছিলেন। প্রথম দলে চার বছরে নিজের জন্য একটি নাম তৈরি করেছিলেন তিনি। তবে জাতীয় দলের জার্সিতে ক্যারিয়ারের শুরুটা ভালো হয়নি লিভাকোভিচের।
জানা গেছে, পরিবারের সবাই শিক্ষিত। বাবা দেশের প্রাক্তন মন্ত্রী। ঠাকুরদা চিকিৎসক, ঠাকুমা শিক্ষক। কিন্তু লিভাকোভিচ ছোট থেকেই ফুটবলের ভক্ত। ইকার ক্যাসিয়াস, ড্যানিয়েল সুবাসিচ তার আদর্শ। পরিবার অবশ্য সব সময় পাশে থেকেছেন লিভাকোভিচের। স্বপ্ন পূরণে তাকে সাহস জুগিয়েছেন মা-বাবা।
২০১৬ সালের মে মাসে প্রথম ক্রোয়েশিয়া শিবিরে ডাক পান তিনি। পরের বছর চীন কাপে চিলির বিরুদ্ধে অভিষেক হয় তার। সেই ম্যাচে টাইব্রেকারে বেশ কিছু ভুল করেছিলেন তিনি। তার বগলের তলা দিয়ে বল গোলে চলে গিয়েছিল। লিভাকোভিচের ভুলে ম্যাচ হারে ক্রোয়েশিয়া। সেই গোলরক্ষকই এবার হয়ে উঠলেন দেশের নায়ক।
২০১৮ সালের বিশ্বকাপেও দলের সঙ্গে ছিলেন লিভাকোভিচ। কিন্তু নিয়মিত সুযোগ পেতেন না। লভ্রে কালিনিচের খারাপ ফর্মের জন্য ২০২০ সালের ইউরো কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্ব থেকে ক্রোয়েশিয়ার প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক হয়ে যান তিনি। তার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
২০১৮ সালের বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক ছিলেন সুবাসিচ। তিনি সেবার টাইব্রেকারে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল ও কোয়ার্টার ফাইনালে দলকে জিতিয়েছিলেন। সেই কাজ এবার করলেন তাকে আদর্শ মেনে চলা লিভাকোভিচ।
Leave a Reply