দ্বিতীয়বারের মতো টি-২০ বিশ^কাপের শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে আজ ঐতিহাসিক মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে পাকিস্তান ও ইংল্যান্ড। খাদের কিনারা থেকে উঠে এসে শিরোপা জয়ের স্বপ্নে বিভোর পাকিস্তান। অন্য দিকে টুর্নামেন্টে দারুণ খেলার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে ট্রফি ঘরে তুলতে প্রত্যয়ী ইংলিশরা। বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় বিশ^কাপের ফাইনাল ম্যাচটি শুরু হবে।
অনেক কিছু অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে বিশ^কাপ ফাইনাল মঞ্চে পাকিস্তান ও ইংল্যান্ড। ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ^কাপ জয়ের পর এবার নিজেদের দেশে টি-২০ ট্রফিটিও উড়িয়ে নিতে মরিয়া ইংল্যান্ড। অন্য দিকে পাকিস্তান প্রমাণ করতে চায়- গর্ত থেকে উঠে শিরোপাও জয় করা যায়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর প্রথম দল হিসেবে দু’বার টি-২০ বিশ^কাপ জয়ের জন্য মাঠে নামবে পাকিস্তান ও ইংল্যান্ড। এর আগে ২০০৯ সালে পাকিস্তান ও ২০১০ ট্রফি জিতেছিল ইংল্যান্ড। মজার বিষয় হলো ২০১০ টি-২০ বিশ্বকাপের পর এবারই প্রথম দেখা হচ্ছে দল দু’টির। ২০০৯ এবং ২০১০ আসরে দুইবার একে অপরের বিপক্ষে খেলেছিল তারা। দুই ম্যাচেই জিতেছিল ইংল্যান্ড। টি-২০তে দুই দলের মধ্যকার লড়াইয়ে এগিয়ে ইংল্যান্ড। ২৮টি ম্যাচের মধ্যে ১৮ বার জিতেছে ইংল্যান্ড। ৯টি জিতেছে পাকিস্তান। অন্য ম্যাচটি হয়েছে পরিত্যক্ত। টি-২০ বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের কাছে সাত ম্যাচের টি-২০ সিরিজে ৪-৩ ব্যবধানে হেরেছে পাকিস্তান। তবে পরিসংখ্যান, রেকর্ড এবং পারফরম্যান্স ইংল্যান্ডের পক্ষে থাকা মানে এই ৯ ফাইনালে পাকিস্তান কেবল চেয়ে চেয়ে দেখার জন্য মাঠে নামবে।
পাকিস্তানের এবারের যাত্রা অনেকটাই ১৯৯২ ওয়ানডে বিশ্বকাপের মতো। টুর্নামেন্টের শুরুতে দুই ম্যাচ হেরে চাপে পড়েও অসাধারণ পারফরমেন্সে দারুণভাবে লড়াইয়ে ফিরেছে তারা। যেমনটা ইমরান খানের নেতৃত্বে ’৯২ বিশ্বকাপেও হয়েছিল। সেমিফাইনালে হট ফেভারিট নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে এবং সেই বিশ্বকাপের মতো এবারের ফাইনালে ইংল্যান্ডকেই প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে পাকিস্তান। এখন দেখার বিষয় ’৯২ বিশ্বকাপের মতো এবারো শিরোপা জিততে পারে কি না। অনেকটা হোম কন্ডিশনের মতো মেলবোর্নে দর্শকদের বড় সাপোর্ট পাবে বাবর আজমের দল।
বাবর বলেন, টুর্নামেন্টে আমরা নিজেদের প্রথম দু’টি ম্যাচ হেরেছি এবং এজন্য আমাদের মূল্য দিতে হয়েছিল। কিন্তু আমাদের দল শেষ চার ম্যাচে লড়াই করে ফিরে এসেছে এবং তারা খুব ভালো পারফর্ম করেছে। আমরা শেষ চার ম্যাচে সত্যিকারার্থেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। ফাইনালেও ভালো খেলার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করব।
চলতি বিশ্বকাপে ব্যাটিংয়ে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করেছেন ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৬ ইনিংসে ১টি হাফসেঞ্চুরিতে ১৬০ রান। ব্যাটিং গড়-২৬.৬৬ এবং স্ট্রাইক রেট ১০৯.৫৮। ইনজুরি থেকে সুস্থ হয়ে বিশ^কাপ দিয়ে আবারো মাঠে ফিরেছেন পাকিস্তানের পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি। এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি আফ্রিদি। ৬ ইনিংসে ১৪২ রানে ১০ উইকেট নেন আফ্রিদি। গড়-১৪.২০ ও ইকোনমি ৬.১৭। ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কত্ব পাওয়ার প্রথম বছরই একটি বড় ট্রফি জিতে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানোর দ্বারপ্রান্তে জশ বাটলার। মেলবোর্নের ফাইনালের সংবাদ সম্মেলনে বাটলার বলেন, আমি আগের মতো আবারো বলছি-সত্যিই আমরা একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ আশা করছি। অতি সম্প্রতি তাদের সাথে আমরা বেশ কয়েকবার মুখোমুখি হয়েছি এবং তাদের বিপক্ষে আমরা দুর্দান্ত কিছু ম্যাচ খেলেছি এবং দুর্দান্ত স্পিরিট ছিল। আমি নিশ্চিত আগামীকালও (আজ) এর ব্যতিক্রম হবে না।
এবারের টি-২০ বিশ^কাপে ইংল্যান্ডের হয়ে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান করেছেন ওপেনার অ্যালেক্স হেলস। ৫ ইনিংসে ২টি হাফসেঞ্চুরিতে ৫২.৭৫ গড়ে এবং ১৪৮.৫৯ স্ট্রাইক রেটে ২১১ রান করেছেন। বোলিংয়ে ইংল্যান্ডের সেরা বোলার স্যাম কারান ৫ ইনিংসে ১৩.৬০ গড়ে ও ৭.২৮ ইকোনমিতে ১৩৬ রানে ১০ উইকেট নেন।
বাটলার জানান, পাকিস্তানি পেসারদের শক্ত হাতে মোকাবেলা করাটাই হবে সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। শাহীন শাহ আফ্রিদির নেতৃত্বাধীন পেস বোলিংয়ের দলটি নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত এবং ছোট দল জিম্বাবুয়ের কাছে হারের পরও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাটলার বলেন, পাকিস্তানের দুর্দান্ত ফাস্ট বোলার তৈরি অনেক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং আমি যে দলটি দেখছি, আমরা যাদের বিপক্ষে খেলতে নামছি তারাও আলাদা নয়।
আত্মবিশ্বাসের সাথে সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে জয়সহ অন্যান্য বড় দলের বিপক্ষে ভালো খেলেছে ইংলিশরা। তারপরও গ্রুপ পর্বে আয়ারল্যান্ডের কাছে পরাজিত হওয়াটা এই বিশ^কাপে ইংল্যান্ডের একটি বড় দাগ। বাটলার বলেন, দল হিসেবে অবশ্যই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি আমাদের জন্য একটি বড় হতাশার। আমি মনে করি ম্যাচটি থেকে আমরা অনেক কিছুই শিখেছি এবং সব কিছু পেছনে ফেলেই বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠেছি।
পাকিস্তান দল : বাবর আজম (অধিনায়ক), শাদাব খান (সহঅধিনায়ক), আসিফ আলি, হায়দার আলি, হারিস রউফ, ইফতিখার আহমেদ, খুশদিল শাহ, মোহাম্মদ হাসনাইন, মোহাম্মদ নওয়াজ, মোহাম্মদ রিজওয়ান, মোহাম্মদ ওয়াসিম, নাসিম শাহ, শাহিন শাহ আফ্রিদি, শান মাসুদ ও ফখর জামান।
ইংল্যান্ড দল : জস বাটলার (অধিনায়ক), মঈন আলী, হ্যারি ব্রুক, স্যাম কারান, ক্রিস জর্ডান, লিয়াম লিভিংস্টোন, ডেভিড মালান, আদিল রশিদ, ফিল সল্ট, বেন স্টোকস, টাইমাল মিলস, ডেভিড উইলি, ক্রিস ওকস ও মার্ক উড।
Leave a Reply