1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৯ অপরাহ্ন

দেড়শ টাকার ফটোকপি বই কেনা হয় ৫১৮০ টাকায়

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২২

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) ১০ লাখ টাকার বই কেনাকাটায় জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। মূল বই কেনার কথা ছিল। কিন্তু ছাপাখানা থেকে গোপনে কেনা হয়েছে ফটোকপি। সেই ফটোকপি বইয়েরই দাম পরিশোধ দেখানো হয়েছে মূল বইয়ের প্রকৃত মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। বই কেনার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অধ্যাপক ও কর্মকর্তা মিলেমিশে এ অনিয়ম করেছেন। এমন অভিযোগ উঠলেও বিল পরিশোধের পর ক্রয় কমিটিকে ‘ক্লিনচিট’ দিয়ে দিয়েছে যাচাই কমিটিও।

জানা যায়, ভারতের এস চাঁদ প্রকাশনীর ড. আর ডি মদনের লেখা ‘মডার্ন ইনোগ্রানিক কেমিস্ট্রি’ মূল বইয়ের মুদ্রিত দাম ১ এক হাজার ২৮০ রুপি। বাংলাদেশে বিক্রি হয় দুই হাজার টাকার কিছু বেশিতে। রাজশাহী নগরীর সোনাদীঘি মোড়ের সবুজ লাইব্রেরির মালিক আবু মুসা বলছেন, বইটির ফটোকপি তারা বিক্রি করেন ১৫০ টাকায়। কিন্তু রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) বইটির ফটোকপিই কিনেছে ৫ হাজার ১৮০ টাকায়। এ বইয়ের দুটি কপি কেনা হয়েছে ১০ হাজার ৩৬০ টাকায়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০২১ সালের ১৬ জুন রুয়েটের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির ভারপ্রাপ্ত লাইব্রেরিয়ান মাহবুবুল আলম জরুরি ভিত্তিতে প্রায় তিন লাখ টাকার বই কেনার জন্য উপাচার্যের কাছে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, স্ট্যান্ডার্ড রিকোয়েস্ট ফর কোটেশন-এসআরএফকিউ’র মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে মূল বই কেনা হবে। ওই দিনই আবেদনটি গ্রহণ করে বই কেনার অনুমোদন দেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল আলম শেখ। পরে রংপুরের কমটেক কম্পিউটার অ্যান্ড প্রিন্টার্স-২ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ইটিই, আইপিই, জিসিই, ইউআরপি এবং এমটিই বিভাগের বই সরবরাহের অর্ডার দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সরবরাহ করেছে মূল বই নয়, ফটোকপি।
জানা গেছে, কমটেক কম্পিউটার অ্যান্ড প্রিন্টার্স-২ নামে প্রতিষ্ঠানটি কোনো লাইব্রেরি নয়। ছাপাখানার ব্যবসা তাদের। রংপুর সিটি করপোরেশন থেকে নেওয়া ট্রেড লাইসেন্সেও দেখা যায়, ব্যবসার বিবরণে ‘ছাপাখানা’ লেখা রয়েছে। রুয়েটের ভারপ্রাপ্ত লাইব্রেরিয়ান মাহবুবুল আলম কয়েক অধ্যাপক ও প্রকৌশল শাখার কর্মকর্তার যোগসাজশে মূল বই বাদ দিয়ে ফটোকপি কিনেছেন। অথচ মূল বইয়ের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি দাম পরিশোধ দেখানো হয়েছে।

একইভাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্বখাত থেকে প্রায় দুই লাখ টাকার বই কেনার অনুমোদন দেন উপাচার্য। পরে ২৭ জুন রংপুরের হাইটেক ডিজিটাল সাইন নামে আরেকটি ছাপাখানাকে বই সরবরাহের অর্ডার দেওয়া হয়। তারা এমএসই, ম্যাথমেটিকস, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও ইকোনমিকস বিভাগের বই সরবরাহ করেছে। এখান থেকেও ফটোকপি বই কেনা হয়েছে। দাম পরিশোধ করা হয়েছে মূল বইয়ের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি। এভাবে এই দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চার লটে ৯ লাখ ৯৭ হাজার ৩৭৭ টাকা বই নেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে রুয়েটের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি উন্নয়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ফারুক হোসেন বলেন, ‘বইগুলো কেনার সময়ই নানা অভিযোগ ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাসে। আমি প্রতিবাদ করে বলেছিলাম ফটোকপি বই লাইব্রেরির জন্য কেনা যাবে না। মূল বই-ই কিনতে হবে। কিন্তু ওপেন টেন্ডার না করে এসআরএফকিউ’ মাধ্যমে চারটি লটে বই কেনার প্রক্রিয়া করে। তারা আমাকে না জানিয়েই গোপনে ফটোকপি বই কিনে লাইব্রেরিতে ভরেছে। বইগুলো হাতে নিলেই বোঝা যায় ফটোকপি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এ ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি কোনোভাবেই মানা যায় না।’

এদিকে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, বই কেনার পর গুণগতমান যাচাইয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি কর্মকর্তা নিয়োগে কেন্দ্রীয় ভা-ার থেকে উপাচার্যের কাছে নোটশিট দেওয়া হয়। পরদিনই অধ্যাপক আবু সুফিয়ান মো. জিয়া হাসানকে প্রধান করে তিন সদস্যের যাচাই কমিটি গঠন করেন উপাচার্য। এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- অধ্যাপক আলী হোসেন ও প্রকৌশলী নোমান পারভেজ।

বই কেনাকাটায় গুরুতর অনিয়ম ও ফটোকপি বই কেনার অভিযোগের বিষয়ে জানতে যাচাই কমিটির প্রধান অধ্যাপক আবু সুফিয়ান মো. জিয়া হাসানের সঙ্গে দেখা করা হলেও কোনো কথা বলতে রাজি হননি। বই কেনাকাটা ও গুণগতমান যাচাইয়ে কোনো অনিয়ম পেয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি কমিটির আরেক সদস্য অধ্যাপক আলী হোসেন।

গত বুধবার দুপুরে রুয়েটের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন ভবনে একটি কক্ষের র‌্যাকে রাখা হয়েছে বেশকিছু বই। কক্ষটি সংস্কারের কাজ চলছে। সেখানে বেশ কয়েকটি বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টিয়ে ফটোকপির প্রমাণ পাওয়া গেছে। বইয়ের গ্রাফ ও ছবিগুলো অস্পষ্ট। লেখাও অস্পষ্ট। এ সময় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত লাইব্রেরিয়ান মাহবুবুল আলমও উপস্থিত ছিলেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মূল বইয়ের নামে বেশকিছু ফটোকপি বই আমাদের সরবরাহ করেছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি। পরে সেগুলো থেকে বেছে বেছে কিছু পরিবর্তনও করা হয়েছিল। তবে এখনো হয়তো কিছু ফটোকপি বই থেকে যেতে পারে’।

বই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কমটেক কম্পিউটার অ্যান্ড প্রিন্টার্স-২ এর মালিক একেএম খুরশীদ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের ছাপাখানার ব্যবসা। লাইব্রেরি নেই। বই সরবরাহের জন্য আলাদা কোনো লাইসেন্সও নেই। তবে আমরা অন্য পার্টির কাছ থেকে কিনে নিয়ে রুয়েটে বই সরবরাহ করেছি। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, বই কেনায় কোনো দুর্নীতি বা জলিয়াতি হয়েছে কি না আমার নেই।

এ বিষয়ে টিআইবি-সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) রাজশাহী শাখার সভাপতি অধ্যাপক দীপকেন্দ্রনাথ দাস বলেন, শিক্ষকরাও যদি পয়সার কাছে নিজেদের বিবেক ও আত্মমর্যাদা বিক্রি করেন তাহলে জাতি আর কোথায় যাবে! এটি জাতির জন্যই লজ্জার বিষয়। রুয়েটে বই কেনায় দুর্নীতির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে দুদককে অবহিত করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com