কালাজ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। মূলত কাঁচাবাড়ির বাসিন্দারা এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গে একসময় কলেরা বা বসন্তের মতো কালাজ্বরের প্রকোপ ছিল অনেক বেশি। সে সময় এই জ্বরে মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের। ২১ শতকে যখন কলেরার প্রাদুর্ভাব নেই বললেই চলে, তখন পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় দেখা দিয়েছে কালাজ্বর।
স্বাস্থ্য ভবনের সূত্র অনুযায়ী, ১১টি জেলায় কালাজ্বরে আক্রান্ত ৬৫ জন রোগীর খোঁজ পাওয়া গেছে। উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, দার্জিলিং, কালিম্পং, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়াসহ অন্য জেলায় রোগীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এই রোগ চিহ্নিত করা কঠিন নয়। বিশেষ পরীক্ষার মাধ্যমে ১৫ মিনিটের মধ্যে এ রোগ নির্ণয় করা সম্ভব।
ম্যালেরিয়া যেভাবে মশার মাধ্যমে ছড়ায় তেমনি কালাজ্বর ছড়ায় মাছির মাধ্যমে। ১৪ দিনের বেশি জ্বর, কাশি, লিভার বেড়ে যাওয়া, রক্তাল্পতা বা ত্বকের রং পরিবর্তনসহ নানা উপসর্গ থাকলে বোঝা যায় কেউ কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। ভিজে, স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় বসবাসকারী স্যান্ডফ্লাই বা বেলেমাছি এই রোগের জীবাণু বহন করে। এই মাছি মানুষকে কামড়ালে তার দেহে কালাজ্বরের জীবাণু চলে আসতে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে এই রোগে মৃত্যু অসম্ভব নয়। এ বছর কালাজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা চিন্তায় ফেলার মতো।
রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তাদের দাবি, মূলত বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা মানুষজনের মাধ্যমে এই রোগ পশ্চিমবঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে। ইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদার বলেন, কয়েকটি অঞ্চলে এই রোগ বেশি হয়। বিশেষত গাঙ্গেয় অববাহিকাসংলগ্ন অঞ্চল, যেহেতু এসব এলাকায় বেলে মাছির বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. সিদ্ধার্থ নিয়োগী জানিয়েছেন, এ রোগ চিহ্নিত হওয়ার পর রোগীকে ওষুধ দেয়া হচ্ছে। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, গ্রামের হতদরিদ্র মানুষেরই এই রোগ হয়, যাদের মাটির ঘর, ঠিকমতো নিকোনো হয় না, যাদের ঘরের মেঝেতেই শুয়ে দিন কাটাতে হয়, তারা বেলে মাছির শিকার। এই মাছি বেশি উঁচুতে উড়তে পারে না। খাটে মশারি টাঙিয়ে ঘুমলেই এর থেকে রেহাই পাওয়া যায়। কিন্তু দরিদ্র মানুষের সেটুকু জোগাড়ের সামর্থ্য নেই। খবর: ডয়চে ভেলে।
Leave a Reply