সৃষ্টিকর্তা তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে মমত্ব অনুভব করবেন এমনটিই স্বাভাবিক। কারণ প্রতিটি সৃষ্টির পিছনে স্রষ্টার সৃজনশীল মনোভাব কাজ করে। এ মনোভাবই সৃষ্ট জিনিসের প্রতি ভালোবাসার সূত্র হিসেবে ভূমিকা রাখে। মহান আল্লাহ পৃথিবী, গ্রহ-নক্ষত্র, মানুষসহ সব প্রাণী, গাছপালার সৃষ্টিকর্তা।
সোজা কথায় যা কিছু সৃষ্ট সবের সৃষ্টিকর্তা তিনি। কারণ আল্লাহ ছাড়া কারোরই সৃষ্টি করার ক্ষমতা নেই। আল্লাহ যেহেতু সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা সেহেতু তিনি চান তাঁর সৃষ্ট জীবেরা তাঁর সব সৃষ্টির প্রতি মমত্ববোধ করুক। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষের উচিত অন্যসব মানুষের প্রতি ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। সহমর্মিতার পরিবেশ বজায় রাখা। শুধু মানুষ নয়, প্রতিটি মানুষের কর্তব্য সব সৃষ্টি তা পশুপাখি, গাছপালা, নদী-পাহাড় সবকিছুর প্রতি মমত্ববোধ পোষণ করা। সদাচরণ ও সেবার বিষয়টি মানব জাতির জন্যই কেবল নির্ধারণ করা হয়নি বরং যে কোনো প্রাণীকে সেবা করলেই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ হবে। এ মর্মে একটি হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে মুসলমান গাছ লাগায় এরপর এটা থেকে যা খাওয়া হয় তা গাছ রোপণকারীর জন্য সদকা হয়ে যায়, যা চুরি হয়ে যায় তা তার জন্য সদকা হয়ে যায়, যা কোনো হিংস্র প্রাণী খায় তাও তার জন্য সদকা হয়ে যায়, যা কোনো পাখি খায় তা-ও তার জন্য সদকা হয়ে যায় এবং কেউ যদি গাছের কোনো কিছু কেটে নেয় তাও তার জন্য সদকা হয়ে যায়।’ মুসলিম। আল্লাহর সৃষ্ট পশু-পাখির সেবাও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। বনি ইসরাইলের একজন খারাপ মহিলাকে এ সেবার কারণে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘একটি বদকার মহিলা গরমের দিনে একটি কুকুরকে কুয়ার পাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখল। কুকুরটি তৃষ্ণায় জিব বের করে ফেলেছিল। তখন মহিলাটি নিজের চামড়ার মোজা খুলে তা দ্বারা পানি উঠিয়ে কুকুরটিকে পান করাল, এর ফলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন।’ মুসলিম। সোজা কথায় সব সৃষ্টির সঙ্গে সদাচরণ ও সৃষ্টির সেবা এক মহান ইবাদত। এ ধরনের ইবাদতকারীকেই আল্লাহ পছন্দ করেন। পক্ষান্তরে যারা আল্লাহর সৃষ্ট জীবের সঙ্গে সদাচরণ করে না এবং তাদের সেবায় এগিয়ে আসে না তাদের তিরস্কার করে আল্লাহ বলেছেন, ‘আপনি কি তাদের দেখেছেন যে শেষ বিচারকে অস্বীকার করে? এবং এ তো সে-ই যে এতিমকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। এবং অভাবগ্রস্তকে অন্নদানে উৎসাহ দেয় না। অতএব দূর হোক সেই নামাজিদের যারা নিজেদের নামাজ সম্পর্কে উদাসীন, যারা লোক দেখানো আমল করে এবং (মানুষকে) নিজ ব্যবহার্য জিনিসও দেয় না।’ সুরা আল মাউন, আয়াত ১-৪। আল্লাহর সৃষ্ট সব জীব এবং প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা থাকলে আমরা তাদের প্রতি অন্যায় থেকে বিরত থাকব। পৃথিবী আরও সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ হয়ে উঠবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর সৃষ্ট মানুষ, জীবজন্তু এবং প্রকৃতির প্রতি মহব্বত পোষণের তৌফিক দান করুন।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।
Leave a Reply