গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সবাইকে তাক লাগিয়ে ৪০তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন বিপ্লব কুমার দাস। তিনি দাবি করেছিলেন, পুলিশ ক্যাডারের তালিকায় তার অবস্থান ৩৬তম। বিপ্লবের এমন সাফল্যে অভিনন্দনের জোয়ার চারদিকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম কোনো ছাত্র বিসিএস ক্যাডার হওয়ায় উৎসব ছিল সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যেও। বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় বিপ্লবের এ সাফল্য নিয়ে করা হয় বিশেষ প্রতিবেদনও। কিন্তু বাস্তবে বিপ্লব পুলিশ ক্যাডার হননি।
আদতে তিনি দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছেন সরকারি চাকরির। এর পরও বিসিএসে উত্তীর্ণের মিথ্যা খবর রটিয়েছিলেন তিনি। মূলত বন্ধু এবং প্রেমিকার কাছে নিজের গুরুত্ব বাড়াতেই এমন অভিনব প্রতারণার আশ্রয় নেন বিপ্লব।
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কৃষক পরিবারের সন্তান বিপ্লব কুমার দাস দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছেন সরকারি চাকরির। বেশ কয়েকটি চাকরির পরীক্ষা দিলেও তিনি উত্তীর্ণ হতে পারেননি, যা নিয়ে তার পরিবারের মধ্যে আক্ষেপ ছিল। চাকরি না থাকায় প্রেমিকার কাছেও তাকে ছোট হতে হচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতেই বিসিএস নিয়ে প্রতারণার কৌশল মাথায় আসে বিপ্লবের। সর্বশেষ প্রকাশিত ৪০তম বিসিএসের রেজাল্ট বের হওয়ার পর তিনি দাবি করেন, পুলিশ ক্যাডারে ৩৬তম অবস্থান নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। প্রকাশ করেন পরীক্ষার প্রবেশপত্রও। এতে তার রোল নম্বর ১৪০১১০৭৩। তবে আমাদের সময়ের অনুসন্ধান বলছে খুলনা অঞ্চল থেকে আবেদন করা এই রোল নম্বরটি বিপ্লব কুমার দাসের নয়। বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের তথ্যানুযায়ী, এই রোল নম্বরে পরীক্ষা দিয়েছেন মারজিয়া রহমান নামে এক শিক্ষার্থী।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মারজিয়া রহমান পড়াশোনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৭তম আবর্তনের শিক্ষার্থী তিনি। পরিবারসহ স্থায়ীভাবে বসবাস করেন খুলনা শহরে। অপরদিকে ভুয়া পরিচয় দেওয়া বিপ্লব কুমার দাসের বাড়িও খুলনার পাইকগাছায়। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য যোগাযোগ করা হয় বিপ্লব দাসের সঙ্গে। তিনি তখনো দাবি করছিলেন, ৪০তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু প্রবেশপত্র চাইলে দিতে অস্বীকার করেন। নানা প্রশ্নের মুখে একপর্যায়ে বিপ্লব স্বীকার করেন পুলিশ ক্যাডার উত্তীর্ণ হননি।
বিপ্লব জানান, খেটে খাওয়া পরিবারের সন্তান তিনি। অনেক কষ্টে পড়াশোনা করিয়েছেন বাবা। সরকারি চাকরির চেষ্টা করেও এতদিনে তিনি চাকরি পাননি। বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়স্বজনদের কাছে মুখ দেখাতে পারছিলেন না। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতেই বিসিএস উত্তীর্ণের ভুয়া খবর ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। এমনকি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাফল্যের বিষয়ে সাক্ষাৎকারও দেন তিনি। বিপ্লব বলেন, আমি প্রলোভনের শিকার। একজন মানুষ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় ভয় ছিল, বন্ধুবান্ধবদের কাছে ছোট হয়ে যাচ্ছিলাম। তাই সবার কাছে বড় হতেই পুলিশ ক্যাডারে উত্তীর্ণ হওয়ার পরিচয় দিয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় ৩৬তম অবস্থান নিয়ে পুলিশ ক্যাডারে উত্তীর্ণ হওয়া মারজিয়া রহমানের সঙ্গে। তিনি পুলিশ ক্যাডার উত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টির প্রমাণস্বরূপ দেখিয়েছেন তার প্রবেশপত্রও।
Leave a Reply