বিভিন্ন হাওরের ফসল ঘরে তুলতে বাঁধরক্ষায় কৃষকদের পাশাপাশি দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন মন্ত্রী, সচিব, প্রশাসন ও পাউবো কর্মকর্তারা। সেখানে নেত্রকোনার খালিয়াজুরীতে রাতের আঁধারে একটি বাঁধ কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার বিরুদ্ধে। নিজেদের মাছের খামারে পানি প্রবেশ করাতে সোমবার রাতে মেন্দিপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুরের বাঁধটি কেটে দেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান হেকিম। এতে বিভিন্ন হাওরে পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় মদন, ইটনা ও খালিয়াজুরীর পাঁচ হাজার কৃষকের সাতটি গ্রামের কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বাঁধ কেটে ফেলার ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী ওবায়দুল হক বাদী হয়ে খালিয়াজুরী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। উপজেলা প্রশাসন, পাউবোসহ স্থানীয় কৃষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ওই বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে।
বাঁধ কেটে দেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পাউবোর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী এমএল সৈকত। তিনি বলেন, এটি নন্দের পেটনার বাঁধ। গত বছরের পুরনো। এটি ভাঙার কোনো কারণ ছিল না। এটি পুরনো ধনুর নদের পাশে অবস্থিত। ফিশারির জন্য লিজ নেওয়া ইজারাদাররা বাঁধ কেটে দিয়েছেন। বাঁধ মেরামতে পাউবোর কর্মচারী ও শ্রমিকদের কাজে লাগিয়েছি।
জানা গেছে, উপজেলার মেন্দিপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামে নন্দের পেটনার বাঁধ। হাওরের ফসল রক্ষায় এ বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) অধীন। এ বাঁধটি কয়েক বছর আগে পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে। বাঁধ এলাকার পাশে পেতনা ফিশারির ইজারা নেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান হেকিম ও তার লোকজন। সোমবার রাতে তারা ২০ ফুট বাঁধটি কেটে দেন। এ খবর পেয়ে এলাকার
কৃষক ও জনতা ঘটনাস্থালে গিয়ে ওই সাবেক চেয়ারম্যানকে ধাওয়া করে এবং তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল বাঁধে ফেলে দেয়। তিনি পরিস্থিতি খারাপ দেখে স্থান ত্যাগ করেন।
মেন্দিপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুরের কৃষক খোকন মিয়া, গোলাপ মিয়া ও সুজনসহ অনেকেই অভিযোগ করে জানান, নন্দের পেটনার বাঁধ এলাকায় পেতনা ফিশারির জন্য বাঁধটি সোমবার রাতে মেন্দিপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা লোকমান হেকিম কেটে দেন। মাছ শিকারের জন্য বাঁধ ভেঙে দেওয়ায় মদন পর্যন্ত টানের জমিগুলো ডুবে যেতে পারে। প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে কোনো রকমে ভেঙে যাওয়া বাঁধ আটকে রাখা হয়েছিল, আর এখন নিজেরা কেটে দিয়ে কৃষকদের ফসল ডুবিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। এ ধরনের অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন এলাকার কৃষকরা।
এ প্রসঙ্গে ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান হেকিমের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তার ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
খালিয়াজুরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান জানান, বাঁধ কাটার বিষয়ে অভিযোগকারী থানায় এসেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খালিয়াজুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম আরিফুল ইসলাম জানান, কেটে দেওয়া বাঁধ সবার সহযোগিতায় মেরামত করা হয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ পেয়েছি, বাঁধ এলাকায় কঠোর নজরদারি থাকবে। ইজারাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।
Leave a Reply