নিজের কাছে এক সময় থাকা অস্ত্র নিয়ে পুলিশ মেমোরিয়াল ডের আলোচনা সভায় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বক্তব্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তবে সেই সময়কার অস্ত্রে প্রসঙ্গ তুলে তিনি অতীতের নিজের আধিপত্য, ক্ষমতা প্রকাশ করতে চেয়েছেন এমনটা মনে করছেন নারায়ণগঞ্জের মানুষ।
কেউ বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে ভয়ের শাসন কায়েম করার জন্য, জনমনে ভীতি সঞ্চার করতেই এই বক্তব্য।
শামীম ওসমান দাবি করেন, আর কোনো অবৈধ অস্ত্র নেই তার কাছে। তিনি বলেন, আগে মনে করতাম অস্ত্রই শক্তিশালী, কিন্তু এখন বিশ্বাস করি পৃথিবীতে একমাত্র আল্লাহই শক্তিশালী।
গত রোববার নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইন মাঠে পুলিশ মেমোরিয়াল ডের আলোচনা সভা ও সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শামীম ওসমান। সেখানে তিনি বলেন, ১৯৯১ সালের আগে জেলা পুলিশ ফোর্সের কাছে যত অস্ত্র না ছিল, তার থেকে বেশি অস্ত্র একা আমার নিজের কাছেই ছিল। অনুষ্ঠানে জেলা পুলিশ সুপার ও জেলার ডেপুটি কমিশনারও উপস্থিত ছিলেন।
পরের দিন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি যা বলেছি ঠিকই বলেছি। তখন আমার বয়স ছিল ২২ বছর। আমার কাছে তো অস্ত্র ছিল। আমরা গোলাগুলি, ফাটাফাটি তো করেছি। এটা অস্বীকার করব কিভাবে? তিনি আরো বলেন, আমার লাইসেন্স করা অস্ত্র আছে। তবে তা ২০০১ সাল থেকে আমার সাথে নেই।
শামীম ওসমান সেই অবৈধ অস্ত্র রাখার পক্ষেও যুক্তি তুলে ধরে বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত আমরা অস্ত্র ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছি। কারণ, ওই সময়ে স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীরা এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশ নিয়েছে। মিথ্যা কথা বলব না, তখন আমরা অস্ত্র জোগাড় করতে বাধ্য হয়েছি। বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলার পর আমরা মনে করেছিলাম প্রতিশোধটা আমরা হত্যার মাধ্যমে নেবো। কিন্তু আমাদের এই ধারণা পরিবর্তন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, হত্যার মাধ্যমে প্রতিশোধ নয়, আইনের শাসনের মাধ্যমে প্রতিশোধ।
শামীম ওসমানের দাবি, ১৯৯১ সালে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসার পর তার আর অস্ত্রের প্রয়োজন হয়নি। তাই জমা দিয়ে দেন।
তিনি জানান, ওই সময় নারায়ণগঞ্জের এসপি ছিলেন মমিন উল্লাহ পাটোয়ারি। তখন তিনি ও তার সহযোগীরা পুলিশের কাছে লাইন ধরে, প্যাকেট ভরে সব অবৈধ অস্ত্র জমা দিয়েছেন। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে ওই সময়ে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র জমা পড়েছে। তবে আমাদের অস্ত্র জমা দেয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল কি না জানি না। কারণ, এরপর আমাদের ওপর জুলুম হয়েছে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত।
তিনি বলেন, যখন অস্ত্র ছিল, তখন বয়স কম ছিল। তখন আমি অস্ত্রের ওপর নির্ভর করতাম। মনে করতাম অস্ত্রই শক্তিশালী। কিন্তু এখন আমি বিশ্বাস করি অস্ত্র শক্তিশালী না, একজনই শক্তিশালী, তিনি হচ্ছেন আল্লাহ।
শামীম ওসমান দাবি করেন, নারায়ণগঞ্জে এখন আর কোনো অস্ত্রের রাজনীতি নেই। এখানে সবচেয়ে বেশি শান্তি বিরাজ করছে। বিভিন্ন সময়ে আমাদের ৫০ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। জবাবে আমরা একটা ফুলের টোকাও দেইনি। আমার ওপরে বোমা হামলা হয়েছে, আল্লাহ বাঁচিয়েছেন। আর কোনো দলের রাজনীতি করতে কোনো বাধা নেই। নারায়ণগঞ্জের মানুষ সন্ত্রাসী নয়। যারা সন্ত্রাস করে, তারা বহিরাগত।
শামীম ওসমানকে আজকাল বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে যেতে দেখা যায়। হেফাজতের সাথেও তার ঘনিষ্ঠতার কথা শোনা যায়। এ নিয়ে তিনি বলেন, ধর্মের যাতে অপব্যাখ্যা না দেয়া হয় সে কারণে আমি ওয়াজ মাহফিলে যাই।
এ দিকে শামীম ওসমানের অস্ত্র বিষয়ে বক্তব্যে পর তোলাপাড় শুরু হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, তিনি এই কথা বলেছে প্রশাসনকে করায়ত্ব করার জন্য। নারায়ণগঞ্জে ভয়ের শাসন কায়েম করার জন্য। জনমনে ভীতি সঞ্চার করতেই এই বক্তব্য। শামীম ওসমান প্রমাণ করলেন অতীত থেকে (’৯১ সাল) এ পর্যন্ত যত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সব হত্যাকাণ্ডে তার ক্যাডার বাহিনী জড়িত। তার ক্যাডারদের অস্ত্র আছে। একজন এমপির লাগামহীন বক্তব্য দেয়া উচিত নয়।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ আনোয়ার হোসেন বলেন, শামীম ওসমান প্রকাশ্যেই বলেছে তার কাছে অস্ত্র ছিল। হয়তো আবেগে এটা বলেছে। তবে এটা বলাটা সমীচীন হয়নি। রাত ১২টার সময়ও সে দুই লাখ লোক হাজির করার ক্যাপাসিটির কথা বলেছেন। সবই বলেছেন প্রশাসনের সামনে। অতএব বিষয়টা প্রশাসন দেখুক।
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, ওরা চায় সবাই ওদের ভয় পাক। শুধু ভিন্ন রাজনৈতিক দল নয়, নিজের দলের মধ্যে নেতাকর্মীদের এবং ব্যবসায়ীদেরকে ভয় পাওয়াতে চায়। এর জন্য যা যা দরকার তাই করে। ওরা মানুষের ওপর হামলা চালায়। লাশ ফেলে।
Leave a Reply