ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষায় যোগ্য অডিট (সিএ) ফার্ম নির্বাচন ও তালিকাভুক্তির নীতিমালা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো অডিট ফার্মকে তালিকাভুক্তি হতে হলে ৪ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। অডিট ফার্মের মালিকানা থাকা পরিচালকদের মধ্যে কোনো একজন খেলাপি হলেই সংশ্লিষ্ট ফার্ম তালিকাভুক্তির অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। নির্বাচিত কোনো অডিট ফার্মের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অনিয়মে জড়ানোর অভিযোগ উঠলে বা উত্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তি ভোগ করার মেয়াদ অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তালিকা থেকে বাদ রাখা হবে। শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালক পর্ষদের অডিট কমিটিতে এ নীতিমালা অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষায় দক্ষ, যোগ্য ও স্বনামধন্য নিরীক্ষা ফার্ম নির্বাচনের বিকল্প নেই। একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নিরীক্ষাকর্ম কেবল এ ধরনের ফার্ম দ্বারাই সম্ভব হতে পারে। এ উদ্দেশ্য পূরণকল্পে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে বর্তমানে তফসিলি ও নন-তফসিলি মিলে ৬৬টি ব্যাংক এবং ৩৪টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ সব প্রতিষ্ঠানের করপোরেট গভর্নেন্স, সক্ষমতা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা উন্নত করা, আর্থিক ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়ন, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় প্রতিষ্ঠানগুলোর গুণগত ও যথাযথ মানসম্পন্ন নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রণয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, কিছু কিছু অডিট ফার্মের বিরুদ্ধে সময়ে সময়ে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপিত হয়। এর পর তাদের তালিকা থেকে বাদও দেওয়া হয়। তবে এ বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তোলেন। এ কারণে যোগ্য সিএ ফার্ম নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নীতিমালায় বলা হয়, ১০০ নম্বরের ওপরে ভিত্তি করে যোগ্য অডিট ফার্ম নির্বাচন করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালক পর্ষদের অডিট কমিটি কর্তৃক চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত কার্টমার্ক এবং সিএ ফার্মগুলোর তালিকা প্রাপ্তি সাপেক্ষে যোগ্য সিএ ফার্মের তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। প্রতি দুবছরের পরিবর্তে তিন বছর পর পর এ তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসিয়াল প্যাডে তালিকাটি ওয়েবসাইট প্রদর্শন করতে হবে।
খেলাপি হলেই অযোগ্য : ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষার জন্য যোগ্য সিএ ফার্মের তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে অডিট ফার্ম বা অডিট ফার্মের পার্টনারের সিআইবি তথ্য গ্রহণ করতে হবে। সিআইবি প্রতিবেদনে অডিট ফার্ম বা অডিট ফার্মের কোনো পার্টনার ঋণখেলাপি হলে সংশ্লিষ্ট অডিট ফার্মকে তালিকাবহির্ভূত রাখতে হবে। পরবর্তী সময়ে কোনো অডিট ফার্ম বা অডিট ফার্মের কোনো পার্টনার ঋণখেলাপি হলে সংশ্লিষ্ট সিএ ফার্মকে তালিকাবহির্ভূত রাখা হবে। এ ছাড়া ফার্মের প্রতিটি পার্টনারের অধীনে যেসব কর্মকর্তা পরিচালক, সিনিয়র ম্যানেজার ও ম্যানেজার হিসেবে নিযুক্ত থাকবেন তাদের ন্যূনতম একজন কর্মকর্তাকে এফসিএ ও এসিএ ডিগ্রিধারী হতে হবে।
অনিয়মে জড়ালেই শাস্তি : কোনো তালিকাভুক্ত সিএ ফার্মের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ যেমন বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগ, এফআরসি, আইসিএবি, আইসিএমএবি, বিএসইসি, আরজেএসসি, আইডিআরএ, এমআরএ, পিকেএসএফ, ডিএসই, সিএসই ও সিডিবিএল কর্তৃক উত্থাপিত কোনো অনিয়ম প্রমাণিত হলে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ফার্ম বা পার্টনার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ভোগ করার মেয়াদ অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তালিকাবহির্ভূত রাখা হবে। অন্তর্বর্তীকালীন নতুনভাবে কোনো সিএ ফার্মকে তালিকাভুক্তির যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করার কোনো সুযোগ থাকবে না। এ ছাড়া কোনো তালিকাভুক্ত ফার্মের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হলে বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গৃহীত হলে অবিলম্বে ওই ফার্মকে তালিকাবহির্ভূত রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেসব বিধিবদ্ধ সংস্থা নিরীক্ষা ফার্ম বা পার্টনারের বিরুদ্ধে অনিয়ম উদ্ঘাটনপূর্বক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত তাদের কাছ থেকে ষাণ্মাসিক ভিত্তিতে ফার্মের নাম সংবলিত তালিকা পত্রযোগে পাঠিয়ে কোনো অনিয়ম বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা রয়েছে কিনা সে সংক্রান্ত বিষয় বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিতকরণের অনুরোধ জানাতে হবে।
Leave a Reply