সুস্থ শরীরের জন্য ভালো ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। সময় না পেলে হালকা ন্যাপ নিয়ে নিন। দীর্ঘ ঘুমের মতো উপকার না হলেও ন্যাপ নিলে শরীর ঝরঝরা লাগবে। এ জন্য সাহরির আগে কমপক্ষে চার ঘণ্টা এবং সাহরির পর দুই ঘণ্টা ঘুমের কথা বলা হয়েছে। সারা দিন রোজা রেখে যখন ক্লান্ত লাগবে, তখন হালকা ঘুমিয়ে নিতে পারেন। এতে শরীর ঝরঝরে লাগবে। রোজার দিনে বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্রে সময় কমিয়ে আনা হয়। সেই ক্ষেত্রে ওই বাড়তি সময়ে একটু ঘুমিয়ে নিতে পারেন। এতে করে সারা দিনে ঘুম পরিপূর্ণ হবে।
শান্তিপূর্ণ জায়গা : ঘুমের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তুলুন। লাইট বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। কোনো ধরনের শব্দ যেন হয় না, ঘুমের জন্য এমন জায়গা বেছে নিন। ঘুমানোর আগে ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো বন্ধ করে রেখে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন। আবার ভালো ঘুমের জন্য বালিশও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
খাপ খাওয়ানো : এ সময় রুটিনে কিছু পরিবর্তন আসে। শরীর মানিয়ে নিন। সপ্তাহখানেক সমস্যা মনে হলেও পরে ঠিক হয়ে যায়। ক্লান্ত বোধ করছেন, ঘুমের ব্যাঘাত হচ্ছে, কাজ, সংসার আর সন্তানদের ঝামেলা- সব মিলিয়ে ঘুম কঠিন করে তুলছে। অর্থনৈতিক কষ্ট, কাজ বন্ধ, বন্ধুত্বের ফাটল অথবা কোন কঠিন অসুখ ঘুমের নরম পেলব একেবারেই অসম্ভব করে তোলে।
হয়তো এ ফ্যাক্টরগুলো একেবারে হাতের মুঠোয় আনতে সক্ষম হবেন না। কিন্তু ঘুমের একটা পরিবেশ সৃষ্টি করুন এবং কিছু অভ্যাস গড়ে তুলুন, যা একটা শান্ত-বিশ্রামময় ঘুম আনতে সহায়তা করবে। ভালো ঘুমের উপায় হলো-
প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে যান এবং একই সময় ঘুম থেকে উঠুন। ছুটির দিনগুলোয় ঘুমের একই রুটিন বজায় রাখুন। তরল খাদ্য সন্ধ্যার পর থেকে কমিয়ে দিন। ঘুমের অন্তত ২ ঘণ্টা আগে ডিনার সেরে ফেলুন। তরল খাদ্যের আধিক্যে সারা রাত আপনার ঘুম ভাঙবে এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে। নিকোটিন, কফি ও অ্যালকোহল সন্ধ্যা বেলাতে পরিহার করুন। এসব উত্তেজক আপনাকে জাগ্রত রাখে। ধূমপায়ীদের রাতে সিগারেট না টানায় পার্শ্বপ্রক্রিয়ার জন্য ঘুমের ব্যাঘাত হয়। কফি পান করলেও ঘুমের ৮ ঘণ্টা আগে তা করতে হবে। কারণ কফি শরীর জমা করে রাখতে পারে না। পানের অনেক সময় পর পর্যন্ত শরীর থেকে কফি নিঃসরণ হয় এবং এর প্রভাব থাকে। প্রচলিতভাবে মনে হলেও অ্যালকোহল কিন্তু ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
প্রতিদিন অল্প বিস্তর ব্যায়াম করুন : প্রতিদিনের হালকা অ্যারোবিক ব্যায়াম আপনাকে একটা অচ্ছেদ্য ঘুম উপহার দিতে পারে।
সাধারণত রাতেই ঘুমান : দুপুরের ঘুম আপনার রাতের শান্ত বিশ্রাম কেড়ে নিতে পারে। দুপুরের ভাতঘুম নিতে হয়, তবে সেটি আধা ঘণ্টার বেশি নয়। আপনি এক আরামদায়ক ম্যাট্রেস ও নরম বালিশ বেছে নিন। যদি কেউ আপনার সঙ্গে ঘুমায়, তবে দেখতে হবে দুজনার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা আছে কিনা। সন্তান বা পোষা প্রাণীর জন্য একই বিছানায় ঘুম কখনও বা আপনার ঘুমের ব্যাঘাতের মূল কারণ হয়ে থাকে।
বানিয়ে নিতে পারেন একটা শিথিল ঘুমের রুটিন এবং শুরু করতে পারেন এখন থেকেই। একই কথা প্রতিরাতে আপনার মনকে শোনান। যখন আপনি ক্লান্ত এবং ঘুমে ভেঙে পড়ছেন, তখনই আলো বন্ধ করুন এবং ঘুমাতে যান। ১৫/২০ মিনিটের মধ্যে ঘুম না এলে আবার কাজ করতে উঠে পড়ুন এবং ক্লান্ত হলে ঘুমাতে যান। ঘুম নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তা করবেন না। ঘুমের ওষুধ শেষ অবলম্বন হিসেবে রাখুন। ডাক্তারের পরামর্শে ঘুমের ওষুধ খেতে পারেন। তবে সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব থাকলে, শরীর ঝিমালে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।
লেখক : শিশুরোগ বিভাগ
হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল
Leave a Reply